প্রতীকী ছবি
মাঝেমধ্যেই প্রতিষেধক নিয়ে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এ বার নিয়ম ভেঙে বিমানবন্দর এলাকার এক প্রবীণ দম্পতিকে টাকার বিনিময়ে প্রতিষেধক দেওয়ার অভিযোগ উঠল। অভিযুক্ত বারাসতের ছোট জাগুলিয়া ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ)। শনিবার সকালে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই নড়ে বসেছে স্বাস্থ্য দফতর। রাতে সব্যসাচী রায় নামের ওই আধিকারিককে সাসপেন্ড করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।
সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সিএমওএইচ তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। ওই ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে সাসপেন্ড করা-সহ তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’
যদিও শনিবার রাত পর্যন্ত কোনও এফআইআর দায়ের হয়নি বলেই দাবি পুলিশের। বারাসত পুলিশ জেলার সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সিএমওএইচ তদন্ত রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। পুলিশ সেটা তদন্ত করে দেখবে। এখনও অভিযোগ থানায়
জমা পড়েনি।’’
এ দিন একটি অডিয়ো ক্লিপিং (আনন্দবাজার পত্রিকা যার সত্যতা যাচাই করেনি) প্রকাশ্যে আসে। সেখানে দুই ব্যক্তির কথোপকথন শোনা যাচ্ছে। যাঁদের এক জন সব্যসাচীবাবু, অন্য জন দিবাকর দাস নামে এক সমাজকর্মী। কথাবার্তার সংক্ষিপ্ত রূপ হল, ৬০০ টাকার বিনিময়ে দমদম এলাকার কোনও প্রবীণ দম্পতিকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। সেই
টাকা দিবাকরবাবুকে ফেরত দিতে বলছেন সব্যসাচীবাবু। প্রশ্ন ওঠে, সরকারি জায়গার প্রতিষেধক কী ভাবে বারাসত থেকে বিমানবন্দর এলাকায় গেল, আবার তার জন্য টাকা নেওয়া হল কী ভাবে?
বিষয়টি জানতে চেয়ে সব্যসাচীবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, ‘‘আমিও খবর পাই, দিবাকর প্রতিষেধক দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়েছেন। সেটিই ফিরিয়ে দিতে বলেছিলাম।
আমি ওই বৃদ্ধ দম্পতির বাড়িতে
গিয়ে দু’জনকে নয়, এক জনকে প্রতিষেধক দিয়েছিলাম। মনে হচ্ছে ওঁরাই কেউ আমাকে ফাঁসিয়েছেন।’’ বিষয়টি নিয়ে সোমবারের মধ্যে রিপোর্ট চেয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনও।
অন্য দিকে গত শুক্রবার ছোট জাগুলিয়া ব্লকের দত্তপুকুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শুক্রবার অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছিল। অভিযোগ, সেই সময়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতা রাজু দত্ত দলবল নিয়ে গিয়ে প্রতিষেধক নিতে চান। এমনকি বিএমওএইচের সঙ্গে তাঁরা প্রতিষেধক নেওয়ার বিষয়ে কথা হয়েছে বলেও স্বাস্থ্যকর্মীদের জানান। জনৈক মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী রাজুবাবুদের জানান, প্রতিষেধক অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য বরাদ্দ। কোনও মহিলাকে তাঁরা ফেরাতে পারবেন না।
অভিযোগ, এর পরেই রাজুবাবুরা ওই মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীকে চুলের মুঠি ধরে দেওয়ালে মাথা ঠুকে দেওয়ার হুমকি দেন। তাঁকে গালিগালাজও করেন। ওই মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী বিএমওএইচের কাছে চিঠি দিয়ে ঘটনাটি জানান। নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি প্রশ্নও তোলেন। অভিযোগ পৌঁছয় জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায়, জেলাশাসক সুমিত গুপ্তের কাছে। শুক্রবার বিকেলেই দত্তপুকুর থানায় রাজুবাবুর বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়। শনিবার ভোরে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ দিন বারাসত আদালতে তাঁর জামিন হয়।