প্রতীকী ছবি।
উদ্যোক্তারা ‘বহিরাগত’। তাই খুলে নেওয়া হল রক্তদান শিবিরের মণ্ডপ! পুলিশের দাবি, পুরসভার অনুমতি নেই উদ্যোক্তাদের কাছে। যদিও রক্তদানের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মীদের মতে, শিবিরের আয়োজন করতে ব্লাড ব্যাঙ্কের অনুমতিই যথেষ্ট। তাঁদের দাবি, রাজনৈতিক কারণেই বাতিল হয়ে গেল ৭০ ইউনিট রক্ত!
রবিবার বিধাননগর পুরসভার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে সল্টলেকের দত্তাবাদে ওই শিবির হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শনিবার বিধাননগর উত্তর থানার পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে মণ্ডপ খুলে দেয়। পুলিশের বক্তব্য, পুরসভার অনুমতি নেই। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর বলছেন, ‘‘উদ্যোক্তারা ‘বহিরাগত’।’’ রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মীদের পর্যবেক্ষণ, এ যুক্তি হাস্যকর। আসল কথা হল রাজনীতি।
শিবিরের উদ্যোক্তা সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য জানান, শিবিরের আমন্ত্রণ পত্র ছিল অরাজনৈতিক। তাঁরা ৭০ জন রক্তদাতার ব্যবস্থা করেছিলেন। সৌম্যদীপের কথায়, ‘‘আমি বিজেপি করি বলে পুলিশের সাহায্য নিয়ে তৃণমূল শিবির করতে দেয়নি।’’
গত ৩০ নভেম্বর শিবিরের অনুমতি চেয়ে বিধাননগর কমিশনারেটে চিঠি দিয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। পুরসভার অনুমতি নেই কেন, উদ্যোক্তাদের ৩ ডিসেম্বর সেই প্রশ্ন করে বিধাননগর উত্তর থানার পুলিশ। শুক্রবার তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন পুরবোর্ডের অনুমতি চেয়ে পুর ভবনে আবেদন করেন সৌম্যদীপ। বিষয়টি নিষ্পত্তির আগেই শনিবার পুলিশের উপস্থিতিতে মণ্ডপ খোলা হয় বলে অভিযোগ।
কথা ছিল, শিবির থেকে সংগৃহীত রক্ত বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালের যাওয়ার। শিবির বাতিল হওয়ায় উদ্যোক্তারা চেষ্টা করেছিলেন, যাতে রক্তদাতারা সরাসরি বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত দিতে পারেন। কিন্তু কর্মীর অভাবে সম্ভব হয়নি। স্টুডেন্টস হেলথ হোমের কলকাতা শাখার সম্পাদক সুনীতা শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘শিবির না হওয়ায় সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক ৭০ বোতল রক্ত পেল না। অথচ ওদের কাছে ব্লাড ব্যাঙ্কের সম্মতি ছিল। লোকের অভাবে হাসপাতালেও সরাসরি রক্ত দেওয়া গেল না।’’ হাসপাতালের সুপার পার্থপ্রতিম গুহের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে দায় সারেন।
বিধাননগর কমিশনারেটের এক আধিকারিক জানান, অনুমতি ছাড়া শিবিরের আপত্তি জানিয়েছিল পুরসভা। পরে দেখা যায়, ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কার্যালয় সিআইটি রোডে। সিআইটি রোড থেকে দত্তাবাদে শিবির আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা কী? রক্তদাতারা প্রয়োজনের সময়ে কার্ড চাইতে কোথায় যাবেন? স্থানীয় কাউন্সিলর তথা পুরসভার মেয়র পারিষদ রাজেশ চিরিমারেরও বক্তব্য, ‘‘পুলিশ, পুরসভার অনুমতি ছাড়া বাইরের সংস্থা শিবিরের আয়োজন করেছিল। এক জন বাদে সবাই বহিরাগত। এখানে গত সাত বছরে ঝামেলা হয়নি। গোলমাল পাকাতে এ সব হচ্ছিল।’’
জাতীয় রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের পরামর্শদাতা কমিটির সদস্য অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘রক্তদান শিবিরের জন্য ব্লাড ব্যাঙ্কের অনুমতিই যথেষ্ট। এ ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ যত হবে রক্তদান আন্দোলন তত
ক্ষতিগ্রস্ত হবে!’’