State news

সিন্ডিকেট নিয়ে রণক্ষেত্র নিউটাউন, সব্যসাচীর হাত ধরে কি দখলদারিতে নামল বিজেপিও!

বৃহস্পতিবার নিউটাউনের যাত্রাগাছি এলাকায় সিন্ডিকেটের ইমারতি দ্রব্য ফেলা নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষের ঘটনায় সেই প্রশ্নই ঘুরছে এলাকার মানুষের মুখে মুখে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৯ ১২:৪৯
Share:

জ্বলছে বাইক। -নিজস্ব চিত্র।

রাজারহাট-নিউটাউনে সিন্ডিকেট নতুন কোনও বিষয় নয়। তা নিয়ে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং সংঘর্ষও ঘটেছে একাধিকবার। এ বার কি সব্যসাচী দত্তের হাত ধরে সেই সিন্ডিকেট রাজত্বে দখল কায়েম করতে নেমে পড়ল বিজেপি? বৃহস্পতিবার নিউটাউনের যাত্রাগাছি এলাকায় সিন্ডিকেটের ইমারতি দ্রব্য ফেলা নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষের ঘটনায় সেই প্রশ্নই ঘুরছে এলাকার মানুষের মুখে মুখে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় নিউটাউন যাত্রাগাছি এলাকা। বাইকে আগুন এমনকি বিজেপির কর্মীরা তিন রাউন্ড গুলি ছোড়ে বলে অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের তরফে। পুলিশ এখনও পর্যন্ত ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে। এই ঘটনায় আর যারা যুক্ত রয়েছে, তাদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। ৪-৫ জন আহত তৃণমূল কর্মীর স্থানীয় হাসপাতালে চিকিত্সা চলছে।

রাজারহাট-নিউটাউনে একসময় যাবতীয় সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত হত তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক এবং বিধাননগরের বাহুবলী সব্যসাচী দত্তের ঘর থেকে, এমন অভিযোগ বরাবর উঠে এসেছে। সম্প্রতি তৃণমূলের এই বাহুবলী রং বদলে গেরুয়া হয়েছেন। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর এবার কি সেই শিবিরেও সিন্ডিকেটের হাত ধরে নতুন করে এলাকা দখল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাতের ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমন অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। এই নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়েছে।

Advertisement

ওই রাতে কী ঘটেছিল?

নিউটাউনের যাত্রাগাছি মোড়ের কাছে একটি বিল্ডিং তৈরির কাজ চলছে। তৃণমূলের দাবি, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ ওই এলাকায় ৩০ থেকে ৩৫ জন বিজেপি কর্মী এসে জড়ো হয়। বাড়ি তৈরির যাবতীয় প্রয়োজনীয় সামগ্রী তারা সরবরাহ দেবে বলে কোম্পানিকে জানায় তারা। কিন্তু সেখানে আগে থেকে তৃণমূলের কর্মীরাও উপস্থিত ছিল।

তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, এর আগেও ওই বাড়ির তৈরির যাবতীয় প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করতে চেয়ে হুমকি দিয়েছিল বিজেপি কর্মীরা। ওই রাতে তারা ওই প্রজেক্টটা দখল নিতে যায়। তখনই উপস্থিত তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে তাদের বচসা শুরু হয়। সেই বচসাই ক্রমে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়।

আরও পড়ুন: সরকারি কর্মীদের কাজে মন নেই, ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী

তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, বচসা চলাকালীনই একটি বাইকে বিজেপি কর্মীরা আগুন জ্বালিয়ে দেয়। খবর পেয়ে নিকটবর্তী তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় থেকে আরও কর্মী ছুটে যায় ঘটনাস্থলে। তৃণমূল দলে ভারী হয়ে যাচ্ছে টের পেয়ে তিন রাউন্ড এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চম্পট দেয় বিজেপি কর্মীরা।

পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়েছে। বিজেপির এলাকা দখলের পিছনে দল বদল করা সব্যসাচী দত্তের উস্কানি রয়েছে বলে অভিযোগ করছে তৃণমূল। আর এসবে পাত্তা না দিয়ে এই ঘটনার পিছনে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ এবং রুখে দাঁড়ানোই দেখছেন সব্যসাচী দত্ত।

আরও পড়ুন: বনগাঁ লোকালে সবজির ব্যাগে ৯৬ লাখ টাকার সোনা! গ্রেফতার তিন

রাজারহাট-নিউটাউনের তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি মহম্মদ আফতাব উদ্দিন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘গোটা ঘটনাটাই নিউটাউনের প্রাক্তন বিধায়কের প্রত্যক্ষ মদতে হয়েছে। বুধবার যাত্রাগাছিতে সব্যসাচী দত্ত একটা মিটিং করেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে যাঁরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তাঁদের উস্কানি দেন এলাকা দখলের জন্য। তারপর দিন অর্থাত্ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এলাকায় একটা গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা চলছিল। এর সঙ্গে রয়েছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সঞ্জীব মণ্ডলও। তিনিও সম্প্রতি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।” এর সঙ্গে তাঁর আরও সংযোজন, গন্ডগোল পাকানোর জন্য বাইরে থেকে প্রচুর ছেলে আনা হয়েছিল। নিউটাউনের কুখ্যাত দুষ্কৃতী ভজাই সর্দারের দলবলকেও আনা হয়েছিল।তারাই রাতে বাইকে আগুন লাগিয়ে দেয়, গুলি চালায়। সাধারণ মানুষই প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তাঁরাই ছ’জনকে পাকড়াও করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন।

আফতাবের কথা শোনার পর সব্যসাচী দত্তের প্রতিক্রিয়া, “আফতাব তো বাচ্চা ছেলে। ওর কথায় কী প্রতিক্রিয়া জানাব? হ্যাঁ মিটিং করেছি, পার্টি অফিস উদ্বোধন করেছি। কিন্তু আমি কি বলে এসেছি গন্ডগোল করতে? সিন্ডিকেটের সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই। এলাকার বাসিন্দারা কোনও গন্ডগোল করে থাকতে পারেন।”

সিন্ডিকেটের সঙ্গে বিজেপির নাম জড়ানোয় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজারহাট-নিউটাউনের বিজেপি নেতা দেবজ্যোতি ঘটক। তিনি জানান, বিজেপি কখনও সিন্ডিকেট বা এই ধরনের কোনও চক্রকে সমর্থন করে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement