ধস্তাধস্তি: পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের গোলমাল। শনিবার সন্ধ্যায়, বইমেলায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
দু’দিন আগেও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় বেরোনো মিছিলকে কেন্দ্র করে বিজেপি সমর্থকদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের গোলমালে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল বইমেলায়। শনিবার বিকেলে ফের একই কারণে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের বিক্ষোভকে ঘিরে দফায় দফায় উত্তপ্ত হল বইমেলা চত্বর।
এ দিন বইমেলায় বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ পৌঁছনোর পরে সেই গোলমাল আরও বাড়ে। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিধাননগর পুলিশ। একাধিক পড়ুয়াকে আটক করা হয়। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা চলছিল। সে সময়ে আচমকা পুলিশবাহিনী বেধড়ক মারধর শুরু করে। মাটিতে ফেলে মারধর করা হয় তাঁদের। ঘটনাটি ঘিরে রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআই সমর্থকেরা যাদবপুরে রাস্তা অবরোধ করেন। তাঁদের অভিযোগ, মহিলা পুলিশ ছাড়াই ছাত্রীদের অনেককে আটক করা হয়েছে। আটকদের ছাড়া না হলে থানা ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ওই এসএফআই সমর্থকেরা।
বইমেলায় এ দিন বিক্ষোভকারীরা বেশ কিছু ক্ষণ ঘেরাও করে রাখেন পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের কর্তাদের। গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে বলেন, ‘‘প্রতিবাদীদের পুলিশ আটকে রেখেছিল বলেই ওঁরা আমাদের ঘেরাও করে রেখেছিলেন। সবার কাছে আবেদন, বইমেলার শেষ দিন শান্তিতে পছন্দের বই কিনতে আসুন।’’
অবশ্য বিধাননগর পুলিশের দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দু’পক্ষকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের সামনে বিক্ষোভের নামে উত্তেজনা তৈরি করা হয় বলে পুলিশের দাবি। পুলিশ সূত্রের খবর, বিক্ষোভকারীদের বোঝাতে গেলে দুই উচ্চ পদস্থ পুলিশ আধিকারিককে হেনস্থা করা হয়। এক মহিলা আধিকারিককেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, গানে-স্লোগানে তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়ে লিফলেট বিলি করছিলেন। সেই সময়ে বিজেপির সমর্থকেরা তাঁদের দিকে ধেয়ে আসতেই উত্তেজনা ছড়ায়। বিজেপি সমর্থকদের সরানোর বদলে পুলিশ তাঁদেরই মারধর করা শুরু করে বলে দাবি বিক্ষোভকারীদের। মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিত শূরের অভিযোগ, ‘‘পুলিশকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছিল। আচমকাই পুলিশবাহিনী মারধর শুরু করে।’’
বিজেপি সমর্থকদের ‘পাল্টা অভিযোগ’, আগেও তাঁদের সংগঠনের স্টলে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন বামপন্থীরা। এ দিনও তাঁরা তা-ই করেছেন। বিজেপি সমর্থকেরা জানান, পুলিশের সামনেই সবটা ঘটেছে। তাঁদের অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা তাঁদের বিভিন্ন নেতা এবং প্রধানমন্ত্রীর নামে গালিগালাজ করতে থাকেন।
বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘আমাদের লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে। বিক্ষোভকারীদের আলাদা কোনও অস্তিত্ব নেই, তাঁরা তৃণমূলের স্তাবক। প্রচার পেতেই ওঁরা এ সব করেছেন।’’
এই ঘটনার জেরে স্টলের দিকে সাধারণ বইপ্রেমীদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। বেশ কিছু ক্ষণ বন্ধ রাখা হয় ৭ নম্বর গেটও। বইপ্রেমীদের প্রশ্ন, দু’দিন আগেও একই ঘটনা ঘটেছিল। দেশ জুড়ে চলা আন্দোলনের প্রভাব যে বইমেলাতেও পড়তে পারে, পুলিশ কেন তা আন্দাজ করতে পারল না? রাতে আটক পড়ুয়াদের ছাড়াতে বিক্ষোভকারীরা দল বেঁধে বিধাননগর (উত্তর) থানায় আসেন। তাঁরা থানায় ঢুকতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। দু’পক্ষের মধ্যে গোলমাল বাধে। পুলিশের দাবি, ধস্তাধস্তিতে এক মহিলা কনস্টেবল আহত হন। কয়েক জন পুলিশ আধিকারিককে আঁচড়ে-কামড়ে দেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীদের পাল্টা দাবি, পুলিশ তাঁদের মারধর করেছে। রাতে ফের বিক্ষোভকারীদের তরফে কয়েক জন পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁদের দাবি, তাঁরা থানায় ঢুকতে গেলে পুলিশ তাঁদের প্রথমে ধাক্কা মেরে বার করে দেওয়ার চেষ্টা করে। যদিও পুলিশ জানায়, রাতের দিকে আটক বিক্ষোভকারীদের বিভিন্ন থানা থেকে ছাড়া শুরু হয়েছে।
এ দিন বিকেলে গোলমালের সময়ে এক বিক্ষোভকারীর মাথা ফাটে। তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলার সময়ে ছবি তুলতে গেলে চিত্র সাংবাদিকদেরও পুলিশ হেনস্থা করে বলে অভিযোগ।
বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা জানান, কয়েক লক্ষ মানুষ তখন বইমেলায়। প্রতিবাদের নামে গোলমাল তৈরি করা হচ্ছিল। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ পদক্ষেপ করেছে। তিনি বলেন, ‘‘সাংবাদিকদের গায়ে হাত তোলার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। এমন কিছু ঘটে থাকলে তা ঠিক হয়নি।’’