এসএসকেএম হাসপাতালে বিক্ষোভ মিছিল ডাক্তারদের। ছবি: রনজিৎ নন্দী।
আরজি করের ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনের বিরুদ্ধে তথ্য চাপা দেওয়ার অভিযোগ কিংবা উত্তরপ্রদেশের কনৌজ বা অযোধ্যায় সমাজবাদী নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় কেন ‘ইন্ডিয়া’র দলগুলি নীরব থাকে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলল বিজেপি। কেন্দ্রের শাসক দলের বক্তব্য, মহিলা নিগ্রহের ঘটনায় শরিক দলের ভূমিকা উঠে এলেই নীরবতার আশ্রয় নেয় ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের দলগুলি। এর থেকেই স্পষ্ট, এরা নারীকে সম্মানের প্রশ্নে কতটা আন্তরিক।
আরজি করে তদন্তের ভার কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ায় তাকে স্বাগত জানিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নড্ডা। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনা বাড়ছে তা আতঙ্কের।’’ নড়েচড়ে বসেছে জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন। কলকাতার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সব হাসপাতালের কর্মীদের জন্য কাজের সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করার নির্দেশিকা জারি করেছে ওই সংস্থা।
আরজি করে চিকিৎসক খুনের ঘটনায় কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে প্রকৃত তথ্য লুকিয়ে তদন্তকে প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছে। আবার অযোধ্যা ও কনৌজে নাবালিকার উপর যৌন নির্যাতনে দলীয় নেতারা জড়িত রয়েছেন তা মানতে অস্বীকার করেন সমাজবাদী পার্টি নেতা অখিলেশ যাদব। আজ দু’টি বিষয়কে এক সূত্রে গেঁথে দলীয় মঞ্চ থেকে আক্রমণ শানান বিজেপির রাজ্যসভা সুধাংশু ত্রিবেদী। তিনি বলেন, ‘‘রাহুল গান্ধী, যিনি কথায় কথায় মহব্বতের দোকানের কথা বলে থাকেন, আজ তিনি কোথায়? আমার মনে হয়, তাঁর রাজনৈতিক দোকানে ভালবাসা রয়েছে কেবল অপরাধী, সন্ত্রাসবাদী, দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ধর্ষকদের জন্য!’’ প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা গতকাল কলকাতার ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেও সুধাংশু বলেন, ‘‘কোথায় প্রিয়ঙ্কা গান্ধী? যিনি বলেছিলেন ‘আমি মেয়ে, কিন্তু লড়াই করতে সক্ষম।’’ বিজেপির দাবি, ‘ইন্ডিয়া’র নেতাদের ভণ্ডামি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এঁরা উন্নাও-হাথরস নিয়ে সরব হন, কিন্তু কলকাতায় যখন ধর্ষণের ঘটনাকে পুলিশ আত্মহত্যা বলে চালাতে চেষ্টা করে, তখন এঁরা নীরব থাকেন। আবার সমাজবাদী পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠলে কংগ্রেস বা তৃণমূল নেতারা জোট বাধ্যবাধকতায় চুপ করে থাকেন। এমন ভাব করা হয় যে কোনও ঘটনাই ঘটেনি।
প্রতিবাদ জানাতে গত কয়েক দিন ধরেই দেশ জুড়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। চলছে কর্মবিরতি। এই আবহে আজ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নড্ডা বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে ওই মহিলা চিকিৎসকের সঙ্গে যে অমানবিকতা হয়েছে, তা গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু যে ভাবে প্রশাসন ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল, তা অমার্জনীয়। পশ্চিমবঙ্গ এমন একটি রাজ্যে পরিণত হয়েছে যেখানে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। চর্তুদিকে অনাচার।’’ আর সুধাংশুর মতে, ‘‘প্রকৃত দোষীদের আড়াল করতেই সিবিআইকে রবিবার পর্যন্ত না ডাকার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাতে ওই সময়ের মধ্যে কলকাতা পুলিশ যাবতীয় প্রমাণ লোপ করে ফেলতে পারে।’’ আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে আজ বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ জানায় এসএফআই-সহ বাম চাত্র সংগঠনগুলি।
জাতীয় মেডিক্যাল কমিশনও আজ দেশের সবক’টি মেডিক্যাল কলেজকে প্রতিটি কর্মীর জন্য নিরাপদ কাজের পরিবেশ গড়ে তোলার প্রশ্নে নীতি তৈরির নির্দেশ দিয়েছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগ, ওয়ার্ড, জরুরি বিভাগ, ছাত্রাবাস, আবাসিক ভবনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত সংখ্যায় পুরুষ ও মহিলা নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গোটা প্রতিষ্ঠান আলোয় মুড়ে দেওয়ার পাশাপাশি পাশাপাশি প্রতিটি স্পর্শকাতর এলাকা যাতে সিসিটিভির নজরদারিতে থাকে তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পড়ুয়া চিকিৎসকদের নিগ্রহের ঘটনায় পুলিশি অভিযোগ দায়ের এবং দ্রুত তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষকে এবং নিগ্রহের ঘটনার প্রেক্ষিতে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার বিস্তারিত রিপোর্ট কমিশনের কাছে দু’দিনের মধ্যে পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।