কসবা থানার জখম সাব-ইনস্পেক্টর অরিন্দম পাণ্ডা। নিজস্ব চিত্র
ফের শহরে আক্রান্ত পুলিশ। এ বার ট্রাফিক আইন ভাঙা হেলমেটবিহীন এক মোটরবাইক চালককে আটকাতে গিয়ে তাঁর হাতে মার খেলেন পুলিশকর্মীরা। তাঁদের এক জন কসবা থানার সাব-ইনস্পেক্টর। রবিবার সন্ধ্যায় ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসে কসবা থানার টেগোর পার্কের ওই ঘটনায় পরে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, আহত সাব-ইনস্পেক্টরের নাম অরিন্দম পাণ্ডা।
পুলিশ জানায়, ধৃত যুবকের নাম সুকান্ত নন্দী। বাড়ি কসবা থানা এলাকার পূর্বাশাপল্লিতে। সুকান্তের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মীদের কাজে বাধা দান, হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনেছে পুলিশ। এ দিন অভিযুক্তকে আলিপুর আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাঁকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
সপ্তাহখানেক আগেই সার্ভে পার্ক থানার সন্তোষপুরে এক ট্যাক্সিচালকের বিরুদ্ধে আইন ভাঙার অভিযোগে কেস দিতে গিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরের হাতে আক্রান্ত হতে হয়েছিল সেখানকার দুই পুলিশ অফিসারকে। গত এক মাসে শহরে এই নিয়ে মোট চার বার পুলিশকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটল।
কী ঘটেছিল রবিবার সন্ধ্যায়?
পুলিশ সূত্রের খবর, কসবা থানা এলাকায় পরপর বেশ কয়েকটি মোটরবাইক চুরির ঘটনা ঘটেছে। তা ঠেকাতে কসবা থানা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বাইক থামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। সেই মতো ওই দিন বিকেল থেকে টেগোর পার্কের অটো স্ট্যান্ডের কাছে বাইক থামিয়ে তল্লাশি করছিলেন কসবা থানার সাব ইনস্পেক্টর রাহুল অধিকারী এবং কনস্টেবল আশিস চক্রবর্তী। পুলিশ জানিয়েছে, সেই সময়ে সুকান্তকে হেলমেটহীন অবস্থায় বেপরোয়া ভাবে বাইক চালাতে দেখে তাঁকে আটকান ওই দুই পুলিশকর্মী। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ তাঁকে আটকাল কেন, তা নিয়ে আশিসবাবুর সঙ্গে বচসা জুড়ে দেন ওই যুবক। পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযুক্তের কাছে গাড়ির বৈধ কাগজপত্র দেখতে চান ওই কনস্টেবল। কিন্তু সুকান্ত তা দেখাতে অস্বীকার করে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে চান। তিনি মোটরবাইক নিয়ে চলে যেতে উদ্যত হলে ওই কনস্টেবল ফের তাঁকে আটকান। অভিযোগ, তখনই সুকান্ত আশিসবাবুকে ঘুষি মারেন। তা দেখে রাহুলবাবু ঘটনাস্থলে চলে এলে তাঁরও কলার চেপে ধরে মারতে যান সুকান্ত।
আরও অভিযোগ, এই নিয়ে বচসা চলাকালীন সুকান্তের পরিচিতেরা ওই পুলিশকর্মীদের ঘিরে ধরে সুকান্তকে ছেড়ে দিতে বলেন। পুলিশের মোটরবাইকটিও ভাঙচুর করা হয়। সহকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে কসবা থানা থেকে সাব ইনস্পেক্টর অরিন্দম পাণ্ডার নেতৃত্বে পাঁচ জনের একটি দল পৌঁছয় ঘটনাস্থলে। অভিযোগ, পুলিশের ওই দলটিকে দেখতে পেয়ে অভিযুক্ত যুবক আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পুলিশ জানিয়েছে, অরিন্দমকে লক্ষ করে পা চালান ওই যুবক। তাতে গুরুতর আহত হন ওই পুলিশ অফিসার। এর পরেই সেখানে উপস্থিত অন্য পুলিশকর্মীরা সুকান্তকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যান। আহত দুই পুলিশকর্মীদের নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। সেখানেই জানা যায়, হাত ভেঙেছে অরিন্দমবাবুর।
পুলিশকর্মীদের উপরে বারবার এমন আক্রমণের ঘটনায় কিছুটা হলেও উদ্বিগ্ন লালবাজারের কর্তারা। তবে টেগোর পার্কের এই ঘটনার প্রসঙ্গে সোমবার এক পুলিশকর্তা বলেন, “ওই এলাকায় বাইক চুরি ঠেকাতে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। তাতে স্থানীয়দের ছাড় দেওয়ার প্রশ্ন নেই।” রবিবারের ঘটনার পরেও ওই অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি।