accidents

Accidents: বাড়ছে দুর্ঘটনায় মৃত্যু, তবু হেলমেট-সচেতনতা কই

গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি পথ দুর্ঘটনার পর বাইকের চালক বা সহযাত্রীর মাথায় থাকা হেলমেট ভেঙে যেতে দেখা গিয়েছে বলে দাবি।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২২ ০৭:০৯
Share:

হেলমেট কেনাবেচা চলছে। রবিবার, ওয়েলিংটন এলাকায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

মোটরবাইকে জরুরি কাজে বেরিয়েছিলেন বয়স্ক দম্পতি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এইট-বি মোড়ে সেই মোটরবাইকে পিছন থেকে ধাক্কা মারে বাস। ছিটকে পড়েন দম্পতি। তাঁদের উদ্ধার করে স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। বেঁচে যান তাঁরা। কিন্তু পুলিশ অবাক এই দেখে যে, বাইকচালক প্রৌঢ়ের হেলমেট মাঝখান থেকে দু’ভাগ হলেও একটি অংশ আটকে মাথায়!

Advertisement

গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি পথ দুর্ঘটনার পর বাইকের চালক বা সহযাত্রীর মাথায় থাকা হেলমেট এ ভাবেই ভেঙে যেতে দেখা গিয়েছে বলে দাবি। কসবা কানেক্টরের একটি দুর্ঘটনায় আবার, চালকের মাথা থেকে পড়ে যাওয়া হেলমেট কিছু দূরে পাওয়া গিয়েছে ভাঙা অবস্থায়। অথচ তাতে ‘আইএসআই’ ছাপ। যা দেখে বিস্মিত তদন্তকারীরা। কারণ, এই ছাপ থাকলে কোনও হেলমেটের গুণমান ভাল হিসাবেই ধরা হয়।

প্রশ্ন উঠছে, তবে কি নকল আইএসআই ছাপে কম গুণমানের হেলমেট বিক্রি হচ্ছে? ২০ মার্চ, রবিবার ‘ওয়ার্ল্ড হেড ইনজুরি অ্যাওয়ারনেস ডে’ উপলক্ষে যা নানা মহলের চিন্তা বাড়াচ্ছে।

Advertisement

শনিবারই কলকাতা পুলিশের কর্তা ও চিকিৎসকদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনাসভায় উঠে এসেছে, পথদুর্ঘটনায় মৃতদের বেশির ভাগই বাইকচালক, নয়তো সহযাত্রী। তাঁদের ২৫ শতাংশের মৃত্যুর কারণ, হেলমেট না পরায় মস্তিষ্কের গুরুতর আঘাত। কলকাতা পুলিশের ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, শহরের ১৮৬টির মধ্যে ৬৯টি পথ দুর্ঘটনাই ঘটেছে মোটরবাইক বা স্কুটারে। ৬৯টি দুর্ঘটনায় ১৭ জন মারা গিয়েছেন, যাঁরা হেলমেট পরেননি। এই পরিসংখ্যান মোট মৃতের প্রায় ২৫ শতাংশ। যা উল্লেখ করে কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, এই কারণেই নির্দিষ্ট গুণমানের হেলমেট ঠিক মতো পরে মোটরবাইক বা স্কুটার চালাতে হবে। ছোটদের হেলমেট নিয়েও আলাদা করে কড়াকড়ি হচ্ছে। কিন্তু শহরে যেখানে হেলমেট বিক্রি হয়, সেখানে কি নজরদারি চলে?

ওয়েলিংটন, চাঁদনি মার্কেট, লেনিন সরণিতে মোটরবাইকের যন্ত্রাংশ বিক্রির দোকানে ঘুরে দেখা
গেল, রাস্তায় থরে থরে সাজানো বিভিন্ন রং ও মাপের হেলমেট। ভিতরেও রয়েছে হেলমেট। জানা গেল, বাইরে রাখা হেলমেট সাধারণ মানের। দাম ১২০ থেকে ৪০০ টাকা। ভিতরেরগুলি দামি ও মজবুত। দাম শুরু ৭০০ টাকা থেকে। রয়েছে তিন-চার হাজার টাকা দামেরও হেলমেট। ওয়েলিংটনের একটি দোকান ‘ইস্টার্ন অটো’র, মালিক জানালেন, কম দামের হেলমেটগুলি মূলত প্লাস্টিকের তৈরি। রং করে স্টিকার লাগানো থাকে। ট্যাগ কিংবা বার-কোডের বালাই নেই।

তবে সবথেকে বিপজ্জনক হল, কম দামের হেলমেটেও আইএসআই ছাপ থাকে! কিন্তু সেটা যে জাল, বোঝেন না বেশির ভাগ। অন্য দিকে, বেশি দামের হেলমেট তৈরি হয় ফাইবার দিয়ে। ভিতরে থার্মোকলের আস্তরণও অনেক পুরু। শুধু তা-ই নয়, ‘আইএসআই’ ছাপ হেলমেটের পিছনে ও ভিতরে দু’জায়গাতেই থাকে। হেলমেটের ট্যাগে থাকে বার-কোড। এই হেলমেট অনেক বেশি আঘাত সহনশীল। ওই ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘হেলমেটের বাইরের অংশ আঘাত থেকে রক্ষা করে। ভিতরের অংশ আঘাতের জেরে ঝাঁকুনি থেকে মাথা বাঁচায়। গুণগত মান ঠিক না থাকলে যা সম্ভব নয়। অথচ বহু মোটরবাইক চালক এ নিয়ে সচেতন নন। পুলিশও আইএসআই ছাপ থাকলে আর ধরে না। ফলে আইএসআই ছাপ দেওয়া কমদামি হেলমেট হট কেকের মতো বিক্রি হয়।’’

কমদামি হেলমেটেও আইএসআই ছাপ আসে কী ভাবে? লেনিন সরণির এক বিক্রেতা বললেন, ‘‘স্টিকার ছাপিয়ে লাগিয়ে দিলেই কাজ হয়ে যায়। বিক্রি করতে সমস্যাও হয় না।’’ জীবন বিপন্নকারী এমন লোক ঠকানোর ব্যবসা নিয়ে কোনও উত্তর মেলেনি কলকাতা পুলিশের কারও কাছেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশকর্তা শুধু
জানাচ্ছেন, অভিযান চালানো হয় বাজারগুলিতে। তবে ক্রেতাকেই সতর্ক হতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement