ফাঁদ: এখানেই বৃহস্পতিবার ঘটেছিল দুর্ঘটনা। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
চার মাথার মোড়। গাড়ির চাপ এতটাই বেশি যে, রাস্তা পারাপার করাই মুশকিল। তার উপরে রাস্তার বাঁকের মুখ বেশ সঙ্কীর্ণ। অনেক সময়েই গাড়ির চাপে জট পাকিয়ে যায় ওই অংশে। যে কারণে হরিদেবপুরের করুণাময়ী মোড়ে যানজট নিত্যদিনের ঘটনা। আবার তার সঙ্গে লুকিয়ে রয়েছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও। বৃহস্পতিবারই সেখানে ঘটেছে দুর্ঘটনা। ওই ঘটনায় হাত কাটা গিয়েছে এক বাসযাত্রীর।
করুণাময়ী মোড়ের খানিকটা আগে রয়েছে ওই বিপজ্জনক বাঁক। তার এক দিকে দোকান এবং বাড়ি রয়েছে। অভিযোগ, সিগন্যাল খোলা পেলেই বাস কিংবা অন্যান্য গাড়ি জোরে ওই বাঁক ঘোরে। স্থানীয়েরা জানান, ওই ভাবে যানবাহন বাঁক ঘোরায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে সব সময়েই। বৃহস্পতিবার ওই ভাবেই একটি সরকারি রুটের বাস জোরে ওই বাঁকের মুখ পার করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনের একটি দোকানে থামে ধাক্কা মারে। সে সময়ে বাসের পা-দানিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক যাত্রী। দুর্ঘটনায় তাঁর হাতটি কেটে মাটিতে পড়ে যায়।
স্থানীয়েরা জানান, ওই একটি বাঁকই শুধু নয়। করুণাময়ী সেতু থেকে শুরু কবরডাঙা মোড় পর্যন্ত এ রকম বেশ কিছু সরু বাঁক রয়েছে। যেখানে গাড়ি জোর গতিতে বাঁক নেয়। এবং তার জেরে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকেই। এই ধরনের বিপজ্জনক বাঁক কিংবা মোড়ের আগে কোনও রকম সতর্কবার্তাও দেওয়া নেই। ফলে গাড়িচালকেরাও ইচ্ছাকৃত ভাবে হোক কিংবা অনিচ্ছাকৃত ভাবে জোরেই গাড়ি চালিয়ে দেন।
এলাকার পুরনো বাসিন্দারা জানান, দিনে দিনে ওই সব রাস্তায় গাড়ির চাপও বেড়েছে। এখন ওই সব রাস্তায় বিরাট আকারের সরকারি বাস চলাচল করে। সরু দু’ মুখী রাস্তায় বড় বাস চলায় অনেক ক্ষেত্রেই একে অন্যকে যাওয়ার জায়গা করে দিতে একেবারে বাঁ দিক ঘেঁষে যেতে হয় যানবাহনকে। বৃহস্পতিবার ওই ভাবেই দুর্ঘটনা ঘটেছিল। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ওই দিন শুধুমাত্র দোকানের থামে ধাক্কা লেগেছিল। বাসটি যদি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কোনও ভাবে ওই দোকানের ভিতরে ঢুকে যেত তা হলে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। বিশেষ করে ওই দোকানের বাড়িটিই বিপজ্জনক বলে ইতিমধ্যেই পুরসভা ঘোষণা করেছে।
এ সবের পাশাপাশি এলাকার রাস্তা সরু হওয়ায় ফুটপাত বলে স্বাভাবিক কারণেই কিছু নেই সেখানে। পথচারীদের কাছে বিপজ্জনক রাস্তাই সম্বল। গাড়ির চাপে রাস্তা পারাপার করাও মুশকিল। ফলে সব মিলিয়ে বিপদ যেন ওই রাস্তায় ঘাপটি মেরে থাকে। একই অবস্থা প্রতিটি মোড়ের। এমনটাই অভিযোগ বাসিন্দাদের। স্থানীয় বাসিন্দা দেবু সাহার কথায়,‘‘যাঁরা বয়স্ক তাঁদের পক্ষে এই রাস্তা পারাপার করা মুশকিল। উপরন্তু গাড়িগুলি যে ভাবে চলাচল করে তাতে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বিশেষত ওই বাঁকের মুখে।’’
বাসিন্দাদের দাবি, হরিদেবপুর-করুণাময়ী মোড় সংলগ্ন রাস্তায় কলকাতা পুলিশের নজরদারি ও ট্র্যাফিক ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন। যদিও বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনার পরেই ঠাকুরপুকুর ট্র্যাফিক গার্ড ওই দুর্ঘটনাস্থলে বোর্ড লাগিয়ে ধীর গতিতে গাড়ি চালানোর পরামর্শ দিয়েছে। তবে সরু রাস্তায় বড় বাস বা গাড়ি চালানোর ফলে যে এলাকা দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে উঠেছে তা স্বীকার করেছেন পুলিশের একাংশ। এক ট্র্যাফিক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘আমরা ওই রাস্তায় বড় বাসের বদলে ছোট বাস চালানোর পরামর্শ দিয়েছি দুর্ঘটনা এড়াতে।’’