ফাইল চিত্র।
শ্রীনগরে স্বেচ্ছায় ‘নির্বাসন’ নিয়েছেন মানসিক সমস্যায় ভোগা কলকাতার মেয়ে। আর সেই কারণেই শহরে বসে উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে বৃদ্ধা মায়ের। শ্রীনগরের হোটেল কর্তৃপক্ষের তরফে বার বার ফোনে বলা হচ্ছে, মেয়েকে কলকাতায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। কিন্তু হাঁটাচলার শক্তি প্রায় হারানো বৃদ্ধার পক্ষে শ্রীনগরে পৌঁছনোও সম্ভব নয়। এই ঘটনার কথা জানতে পেরে ওই মহিলাকে কলকাতায় ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হল রাজ্য মহিলা কমিশন ও বিধাননগর পুলিশ।
রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ওই বৃদ্ধার সমস্যার কথা জানতে পেরে কমিশনের তরফে পুলিশের সঙ্গে কথা বলা হয়। তিনি বলেন, ‘‘ওই মহিলা শহরে ফিরলে বোঝা যাবে, ওখানে কী হয়েছিল। শুনেছি, উনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’’
মহিলার পরিবার সূত্রের খবর, নিউ টাউনের ডিডি ব্লকে অসুস্থ মেয়ের সঙ্গে থাকেন মীনা দে। গত ৯ অক্টোবর মীনাদেবীর মেয়ে শ্রীনগর যান। ২২ তারিখ কলকাতায় ফেরার কথা থাকলেও তিনি ফিরবেন না বলে মা-কে ফোনে জানিয়ে দেন। যা শুনে চিন্তায় পড়েন ওই বৃদ্ধা। এর পরে তিনি প্রথমে টেকনো সিটি থানায় যোগাযোগ করেন। পরে মহিলা কমিশনের দ্বারস্থ হন। তার পরেই তৎপর হয় পুলিশ। বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রের খবর, সোমবার গভীর রাতের বিমানে শ্রীনগর যাওয়ার কথা রয়েছে টেকনো সিটি থানার পুলিশ আধিকারিকদের।
ঠিক কী হয়েছে শ্রীনগরে? প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, শ্রীনগরে গিয়ে যে হোটেলে ওই মহিলা উঠেছিলেন, সেখান থেকে তাঁকে এক সময় বার করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। পুলিশের অনুমান, থাকা-খাওয়ার খরচ জোগাতে না পারার কারণেই হয়তো হোটেল থেকে তাঁকে বার করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। যদিও খবর, হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে টেকনো সিটি থানার পুলিশ কথা বলার পর থেকে সেখানেই রয়েছেন ওই মহিলা। অক্টোবরে মেয়ে কাশ্মীর যাওয়ার পর থেকে দু’-এক বার মীনাদেবী তাঁর জন্য হোটেলে দু’-এক বার টাকাও পাঠিয়েছেন।
ওই মহিলার এক প্রতিবেশীর অভিযোগ, ‘‘একাধিক বার শ্রীনগর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সেখানকার পুলিশ মেয়েকে ফেরাতে উদ্যোগী হয়নি। শেষে আমরা মহিলা কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করি।’’ তাঁরা আরও জানান, শ্রীনগরের সাম্প্রতিক উত্তপ্ত পরিবেশের কারণে পুলিশ হোটেল ‘সিল’ করে দেবে বলেও হোটেল কর্তৃপক্ষের তরফে ফোন করে জানানো হয়েছিল মীনাদেবীকে। যদিও প্রাথমিক ভাবে মীনাদেবীর পরিবারের ধারণা, ওই মহিলাকে হোটেল থেকে বার করতেই ওই সব ‘গল্প’ বলা হয়েছিল তাঁদের।
সোমবার মীনাদেবী জানান, কয়েক বছর ধরেই তাঁর মেয়ে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। তা সত্ত্বেও মাঝেমধ্যে তিনি একাই বেরিয়ে পড়েন। মীনাদেবী বলেন, ‘‘এর আগেও মেয়ে একা বেড়াতে গিয়েছিল। এ বার কী হল, কিছু বুঝতে পারছি না। বাড়ি ফিরবে না বলে ফোনে জানিয়েছে। আমার সঙ্গে সম্পর্কের কথাও অস্বীকার করছে। ওর দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন।’’