প্রতীকী ছবি।
বহুতলের ছাদে দেদার ফাটছে শব্দবাজি। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ গেলেও ঢুকতে পারছে না। কারণ, বহুতলের মূল ফটক ভিতর থেকে তালাবন্ধ। কোথাও আবার রাস্তায় লোকজনের যাতায়াতের মধ্যেই ফাটানো হচ্ছে শব্দবাজি, অথবা বাজির ফুলকি ছিটকে এসে পড়ছে রাস্তায়। ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ করে থাকতে হচ্ছে প্রবীণ নাগরিকদের। ভয় আর আতঙ্কে স্থির থাকতে পারছে না বাড়ির পোষ্য থেকে শুরু করে রাস্তার পশুপাখিরাও।
শব্দবাজির অত্যাচার বন্ধ করতে প্রশাসনের কড়া নির্দেশ, লাগাতার সচেতনতার প্রচার— শত উদ্যোগ সত্ত্বেও বদল ঘটছে না এই ছবিতে। এ বার তাই বিধাননগর পুলিশ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, আরও কঠোর নজরদারি এবং পদক্ষেপ করা হবে। বহুতল এবং আবাসন এলাকায় শব্দবাজি ফাটালে কিংবা বাজির জন্য কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট আবাসন কমিটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে।
কিন্তু এর পরেও যে প্রশ্নটা থেকে যাচ্ছে তা হল, সল্টলেকের ছবিটা কি এ বার কিছুটা হলেও বদলাবে? এই উপনগরীতে বসবাসকারী প্রবীণ মানুষজন কি কয়েক রাতের শব্দ-সন্ত্রাস থেকে মুক্ত হবেন? পশুপাখিরাই বা কতটা সুরক্ষিত থাকবে?
পুলিশের দাবি, এ বার সুরক্ষা ও নজরদারি কয়েক গুণ বাড়ানো হচ্ছে। টহলদারি চলবে সাদা পোশাকেও। নিয়ম ভাঙার অভিযোগ আসার অপেক্ষা না করেই দ্রুত পৌঁছে যাওয়া হবে ঘটনাস্থলে। ইতিমধ্যেই স্পর্শকাতর হিসেবে কতগুলি এলাকাকে বিশেষ ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
যদিও বাসিন্দাদের একটি অংশ প্রশ্ন তুলছেন, আবাসনের থেকে সল্টলেকে বেশি রয়েছে ব্লক বা পাড়া। শুধু আবাসনের ক্ষেত্রে এমন ভাবনা কেন? এই পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ জানাচ্ছে, আবাসনে ঢোকার ক্ষেত্রে অতীতে তাদের বাধা পেতে হয়েছে। সমস্যা হয়েছে নজরদারিতেও। কিন্তু ব্লক বা পাড়ার ক্ষেত্রে সেই অসুবিধা নেই। মূলত সে কথা মাথায় রেখেই আবাসনের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে লাবণি আবাসনের এক কর্তা অশেষ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শব্দবাজি যাতে না ফাটে, তা নিশ্চিত করার ক্ষমতা স্থানীয় কমিটির হাতে থাকে না। তবে আমরা অবশ্যই বাসিন্দাদের কাছে এ নিয়ে আবেদন জানাব।’’
জিডি ব্লকের এক কর্তা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘বাসিন্দাদের নিজেদের স্বার্থেই প্রশাসনকে সহযোগিতা করা জরুরি। কমিটিগত ভাবে আমরাও তাঁদের বলব নিয়ম মেনে চলতে।’’ একই সুরে এফডি ব্লকের এক পুজো উদ্যোক্তা সৌমিত্র মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শুধু কমিটির উপর দায় চাপালেই সমস্যা মিটবে না। প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নিক।’’ বাসিন্দাদের বক্তব্য, শব্দবাজির উৎপাদন বন্ধ না করলে এই সমস্যা মিটবে না। তবে ফাঁকা কোনও জায়গায় নিয়ে মেনে একসঙ্গে বাজি ফাটানো হলে শব্দ-যন্ত্রণা থেকে খানিকটা মুক্তি মিলতে পারে।
পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, থানা ভিত্তিক বৈঠকে আবাসন কমিটিগুলিকে নির্দেশিকা সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। নিয়ম ভাঙা হলে কমিটি যে তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারে না, সে সম্পর্কে তাদের সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্লক এলাকাতেও বিশেষ নজরদারি চলবে।