বিধাননগর পুরসভা। — ফাইল চিত্র।
শীর্ষ আদালতের নির্দেশে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নয়ডার জোড়া বহুতল মাত্র ন’সেকেন্ডে ধূলিসাৎ হতে দেখেছে দেশ। তার পরে এ রাজ্যে বেআইনি নির্মাণগুলির বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছিল বিরোধী দলগুলি। ঘটনাচক্রে, এই সময়েই অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তৎপর হয়েছে বিধাননগর পুরসভা। বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয় দেখার জন্য পুরসভায় গঠন করা হয়েছে বিশেষ সেল।
অভিযোগ, জাল নকশায় অবাধে নির্মাণকাজ চলছে বিধাননগরের রাজারহাট অঞ্চলে। অধিকাংশ এলাকায় জায়গা ছাড়ের কোনও বালাই নেই। এ বার এমন ১৫টি নির্মীয়মাণ বহুতলকে ‘বেআইনি’ বলে থানায় অভিযোগ দায়ের করছে পুরসভা। ওই নির্মাণকাজের নকশা নিয়ে পুলিশকে তদন্ত করে দেখতে বলেছেন বিধাননগর পুর কর্তৃপক্ষ। একটি বহুতলের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই এফআইআর করা হয়েছে বলে খবর।
দিনকয়েক আগেই রাজারহাটের দশদ্রোণ এলাকায় একটি বেআইনি নির্মাণ থেকে ইট খসে পড়ে পাশের বাড়ির উপরে। স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রোমোটার ও বাড়ির মালিক— দু’তরফই শাসকদলের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এই বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়েনি।
রাজারহাট-গোপালপুর ও বিধাননগর পুরসভা যুক্ত হয়ে বর্তমান বিধাননগর পুরসভা (কর্পোরেশন) তৈরি হয়েছিল ২০১৫ সালে। তখনই দুই পুরসভার অধীনে জমা থাকা সব নির্মাণ-নকশার রেকর্ড পুরসভার তথ্যভান্ডারে জমা করা হয়েছিল। অভিযোগ, পুরসভার নির্ধারিত ১৫টি নির্মাণের নকশা জাল করা হয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, নকশার নম্বর পুরনো রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার নকশার নম্বরের সঙ্গে মিলে গিয়েছে এবং সেই সব নম্বরে কারও না কারও বাড়ি রয়েছে। পুরসভার দাবি, নকশাগুলিতে পুরসভার সিলমোহরও রয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রোমোটার সেই নকশা কোথা থেকে পেয়েছেন, তা পুলিশকে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।
পুর আধিকারিকেরা জানান, বাগুইআটি ও বিমানবন্দর থানা এলাকায় ওই ১৫টি নির্মাণ চলছে। সেখানে একাধিক বার কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল পুরসভা। কিন্তু কাজ বন্ধ করা তো দূর, পুরসভার পাঠানো নোটিসটাই অনেক জায়গায় ছিঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
উল্লেখ্য, বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুর আধিকারিকদের সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না বলে সম্প্রতি বোর্ডের বৈঠকে মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তীর কাছে প্রকাশ্যে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত। পুর আধিকারিকেরা জানান, নিজের ওয়ার্ডের যে নির্মাণকাজের উদাহরণ দেন সব্যসাচী, সেই নির্মাণ ও সল্টলেকের বিডি ব্লকে আরও একটি নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটি নির্মাণের বিরুদ্ধেও পুরসভা এফআইআর করেছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, এক নোডাল আধিকারিকের নেতৃত্বে চার সহকারী ইঞ্জিনিয়ার এবং বেশ কয়েক জন পুরকর্মীকে নিয়ে বিশেষ সেল তৈরি হয়েছে। যে কোনও অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কমিশনারের কাছে সরাসরি আবেদন করার অধিকার থাকবে নোডাল অফিসারের। এমনকি নির্মাণ ভাঙার নির্দেশ দেওয়ার ক্ষেত্রেও ওই সেল পুর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাতে পারবে।
যে ১৫টি নির্মাণকে অবৈধ দাবি করে পুলিশে অভিযোগ করা হয়েছে, তার মধ্যে দশদ্রোণ খেলার মাঠের পাশে রয়েছে একটি নির্মাণ। তার প্রোমোটার প্রদীপ মিত্রের দাবি, ‘‘পুরসভা কী বলছে জানি না। নোটিস পাইনি। তবে কিছু নির্মাণকে নোটিস পাঠানো হয়েছে বলে শুনেছি।’’
একই এলাকায় আরও একটি নির্মাণস্থলের প্রোমোটার অবশ্য স্বীকার করেছেন, গত মে-জুনে পুরসভার নোটিস পেয়ে তাঁরা কাজ বন্ধ করেন। পরে আবার কাজ শুরু করেও দেন। অমিত গায়েন নামে ওই প্রোমোটারের কথায়, ‘‘নির্মাণের কিছু সমস্যা ছিল। তাই বর্তমানে কাজ বন্ধ রয়েছে। পুরসভায় গিয়ে দেখা করব।’’