এ ভাবেই রয়ে গিয়েছে পুরনো নাম ও পদ। নিজস্ব চিত্র
বিধাননগরের উপ-মহানাগরিক (ডেপুটি মেয়র) তাপস চট্টোপাধ্যায়! পুরসভার চেয়ারপার্সন অনিতা মণ্ডল! সব্যসাচী দত্ত শুধুই ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর!
সল্টলেকের এফডি ব্লকে বিধাননগর পুরভবনের একতলায় ঝোলানো বোর্ডে পুরপ্রতিনিধিদের নামের এই তালিকাটি দেখে অনেকেরই সেটিকে সত্যি বলে মনে হতে পারে। বস্তুত, বিভিন্ন কাজে পুরসভায় আগতেরাও এই তালিকা সত্যি বলে ধরে নিচ্ছেন এবং বিভ্রান্ত হচ্ছেন। কারণ ঘটনা হল, ওই তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের অনেকেই বর্তমান পুরবোর্ডে নেই। অনেকে অন্য পদে গিয়েছেন, অনেক নতুন মুখ এসেছে, কারও আবার ওয়ার্ড পরিবর্তন হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, পুরপ্রতিনিধিদের নামের তালিকা সম্বলিত এই তালিকাটি প্রথম পুরবোর্ডের সময়ে তৈরি। তৎকালীন মেয়র সব্যসাচী দত্ত বিজেপিতে চলে যাওয়ার পরে সেই সময়ের চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী মেয়র পদে বসেন। অনিতা মণ্ডল হন চেয়ারপার্সন। কিন্তু পুরভোটের পরে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বিতীয় দফায় নতুন বোর্ড তৈরি হয়েছে। অথচ, এখনও নতুন বোর্ডের সদস্যদের নামের তালিকা ও পদমর্যাদা সম্বলিত তালিকা ঝোলানো হয়নি পুরভবনে।
একমাত্র মেয়র কৃষ্ণা ছাড়া অনেকেই দ্বিতীয় বোর্ডে নতুন পদ পেয়েছেন। যেমন, অনিতা হয়েছেন উপ-মহানাগরিক বা ডেপুটি মেয়র, সব্যসাচী পুর চেয়ারম্যান, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তুলসী সিংহরায় মেয়র পারিষদ। পুরসভার দেওয়ালে ঝোলানো নামের তালিকায় মেয়র পারিষদ হিসেবে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের মধ্যে সুধীর সাহা, বীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস ভোটে দলের টিকিট পাননি। আর এক প্রাক্তন মেয়র পারিষদ প্রণয় রায় এ বার হয়েছেন বরো চেয়ারম্যান। প্রথম বোর্ডে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসাবে থাকা মণীশ মুখোপাধ্যায় বর্তমানে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।
আবার বিগত বোর্ডের কাউন্সিলর নীলাঞ্জনা মান্না, স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়, শম্পা চক্রবর্তীরা এ বার টিকিট পাননি। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর সুভাষ বসু কোভিডে প্রয়াত হয়েছিলেন। ওই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর সম্রাট বড়ুয়া। ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ দেবাশিস জানা এবং ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শিবনাথ ভাণ্ডারী বিজেপিতে চলে গিয়েছিলেন। ওই দু’টি ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর যথাক্রমে রঞ্জন পোদ্দার ও প্রসেনজিৎ নাগ। আবার এক নম্বর ওয়ার্ডে এ বারের কাউন্সিলর পিনাকী নন্দী। কিন্তু, পুরসভার তালিকায় ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসাবে নাম রয়ে গিয়েছে সুস্মিতা দাসের।
বোর্ড গঠনের দু’মাস পরেও ভুলে ভরা এমন তালিকা ঝুলতে দেখে অবাক হচ্ছেন অনেকেই। মঙ্গলবার বিকেলে ওই তালিকা দেখে পুর ভবনে আসা এক ব্যক্তির সহাস্য মন্তব্য, ‘‘৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এখনও অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়! রত্নাদিকে বলতে হবে।’’ প্রসঙ্গত, ওই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর রত্না ভৌমিক।
পুরসভার অন্দরে অনেকেই মানছেন, বোর্ড তৈরি হয়ে যাওয়ার পরেও এমন তালিকা থেকে যাওয়া অনভিপ্রেত। এ বিষয়ে মেয়র পারিষদ তুলসী সিংহরায় বলেন, ‘‘এটা ঠিকই যে, অনেকেই এই নাম দেখে বিভ্রান্ত হতে পারেন। ওই তালিকা পুরনো বোর্ডের। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুত নতুন তালিকা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।’’ আর বিধাননগর পুরসভার এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘নতুন তালিকা তৈরি করতে দেওয়া হয়েছে। তাতে বর্তমান পুরবোর্ডের সদস্যদের নাম আপডেট করা থাকবে। মেয়র পারিষদদের নাম ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে সেই সময়ে নতুন বোর্ড ঝোলানো হয়নি।’’