এমন ভাবে কার্ভ চ্যানেল আটকে তৈরি নির্মাণ ভেঙে দেওয়া হয়েছে সল্টলেকের একাধিক জায়গায়। —নিজস্ব চিত্র।
এ-ও এক ধরনের বেআইনি নির্মাণ। তবে এমন নির্মাণকে কেন্দ্র করে সরাসরি বিপজ্জনক কোনও ঘটনা না ঘটলেও বর্ষায় বৃষ্টির জল জমে বিপাকে পড়েন নাগরিকেরা। আবাসন থেকে রাস্তায় গাড়ি ওঠা-নামার সুবিধার জন্য সল্টলেকের অনেক জায়গায় কার্ভ চ্যানেলের উপর দিয়ে সিমেন্টের র্যাম্প তৈরি করে ফেলা হয়েছে। সম্প্রতি বিধাননগর পুরসভা ওই রকম বেআইনি ভাবে নির্মাণ হওয়া কয়েকটি র্যাম্প ভেঙে দিয়েছে।
কলকাতার মতো সল্টলেকের ফুটপাতও নানা ভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তীর ওয়ার্ডে ফুটপাতের উপরে লিফ্ট অবধি তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেই খবর জানাজানি হওয়ার পরে ওই লিফ্ট ভেঙে দেয় পুরসভা। ইতিমধ্যে সল্টলেকের অনেক ব্লকেই কার্ভ চ্যানেলের উপরে নির্মাণ হতে দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি সিডি ব্লকে এমন চারটি নির্মাণ ভেঙে দিয়েছে পুরসভা। বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ তুলসী সিংহরায়ের ওয়ার্ডে চারটি নতুন তৈরি আবাসনের সামনে ওই ভাবে কার্ভ চ্যানেল আটকে ফুটপাত থেকে গ্যারাজের মধ্যে সহজে গাড়ি ওঠা-নামা করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তুলসী বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টি দেখতে পাই। এর পরেই যন্ত্রের সাহায্যে নির্মাণ খুঁড়ে কার্ভ চ্যানেল পুনরুদ্ধার করা হয়।’’
পুর আধিকারিকেরা জানান, কার্ভ চ্যানেল নগর-জীবনের সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। রাস্তার ধারে কার্ভ চ্যানেল তৈরি করা হয় একটি নির্দিষ্ট ঢাল বজায় রেখে, যাতে বৃষ্টির সময়ে রাস্তার জমা জল ওই কার্ভ চ্যানেল ধরে সহজে নিকাশি নালায় পৌঁছতে পারে। সে ক্ষেত্রে কার্ভ চ্যানেল কোনও কারণে আটকে থাকলে বৃষ্টির জলও রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাবে।
প্রতি বছরই ভারী বৃষ্টিতে সল্টলেকের রাস্তায় জল দাঁড়ানোর অভিযোগ ওঠে। বিশেষত, কেষ্টপুর খাল লাগোয়া পাড়াগুলিতে ভারী বৃষ্টিতে জল দাঁড়ানোর প্রবণতা থাকে। বছর দেড়েক আগে অবশ্য তার অন্যতম কারণ ছিল কেষ্টপুর খালের নাব্যতা কম থাকা। কিন্তু সিডি ব্লকে কার্ভ চ্যানেল আটকে নির্মাণের ঘটনা সামনে আসার পরে রাস্তায় জল জমার পিছনে খালপাড় বা অন্য ব্লকে তেমনই কোনও কিছু ঘটেছে কি না, সে দিকে নতুন করে নজর দিতে চান আধিকারিকেরা।
আবাসিক এলাকায় শর্তসাপেক্ষে নগরোন্নয়ন দফতর বাড়ি কেনাবেচায় অনুমোদন দেওয়ায় সল্টলেকের অনেক জায়গাতেই এখন নতুন নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে। সেগুলি অনেক ক্ষেত্রে তিন-চার তলা, সেখানে একাধিক গাড়ি থাকে। ওই সব গাড়ি রাস্তা থেকে মসৃণ ভাবে গ্যারাজে ঢোকাতে বা বার করতে কার্ভ চ্যানেলের উপর দিয়ে র্যাম্পের মতো ঢাল তৈরি করে ফেলা হচ্ছে। ফলে বৃষ্টির জল ওই ঢালে ধাক্কা খেয়ে নর্দমায় যেতে বাধা পাচ্ছে। পুর আধিকারিকেরা জানান, বাড়ির সামনের ফুটপাতে যে অনেকে বাগান করেন, সেটাও নিয়মবিরুদ্ধ। কিন্তু তাতে তেমন সমস্যা নেই। কিন্তু ফুটপাতের উপরে কার্ভ চ্যানেল আটকালে তা বরদাস্ত করা হবে না।
এ প্রসঙ্গে বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী জানান, ও ভাবে ফুটপাতের উপরে নির্মাণ করা বেআইনি। তিনি বলেন, ‘‘নোটিস জারি করে বিষয়টি পুর প্রতিনিধি ও কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেব। কোথাও এমন চোখে পড়লে যেন পুরসভাকে জানানো হয়।’’