প্রতিনিধিদের আপ্যায়নে মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রী ছবি: পিটিআই
২০ এপ্রিল কলকাতায় রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন শুরু হচ্ছে। চলবে ২১ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। অতিমারি-পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশের কোনও প্রান্তে এখনও পর্যন্ত এই ধরনের কোনও বড়সড় বাণিজ্য সম্মেলন হয়নি। অতিমারির কারণে সৃষ্ট আর্থিক মন্দা এখনও কাটেনি। এমতাবস্থায় বাণিজ্য সম্মেলন আয়োজনের উদ্যোগ দেখাতে পারেননি কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাহস করে এগিয়ে এসেছেন এ ব্যাপারে। ফলে দেশের শিল্পমহলও এই সম্মেলন ঘিরে উৎসাহী হয়ে রয়েছে বলেই দাবি সরকারি আধিকারিকদের। তাঁদের আরও দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে দেশের প্রথম সারির অধিকাংশ উদ্যোগপতি এই সম্মেলনে অংশ নেবেন। নিউটাউনের কনভেনশন সেন্টারে হবে এই সম্মেলন। পাশাপাশি বাণিজ্য সম্মেলনের জন্য ব্যবহার করা হবে নবনির্মিত মিলনমেলা প্রাঙ্গণকেও।
সম্মেলনে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে বেলুড়ের লজিস্টিক হাব। সূত্রের খবর, আদানি গোষ্ঠী এই লজিস্টিক হাব তৈরির দায়িত্ব নিতে পারে। প্রায় ১০০ একর জমিতে এই লজিস্টিক হাবটি তৈরি হবে। এই প্রকল্পে প্রায় দু’হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হতে পারে বলে জানা যায়।
বাণিজ্য সম্মেলনের জন্য নিউটাউন এলাকা যানজট মুক্ত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশ বিদেশ থেকে আগত অতিথিদের যাতে সম্মেলনে যাতায়াত করতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেদিকে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই কারণেই আগামী তিন দিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নিউটাউনের ইকোপার্ক।
কেনিয়া, ব্রিটেন, আমেরিকা, নেদারল্যান্ডস, ইটালি, ফিনল্যান্ড, বাংলাদেশ, নরওয়ে, ভুটান, জাপান, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া থেকে শিল্পপতিরা এই সম্মেলনে অংশ নেবেন বলে উপস্থিত নিউটাউনে বাণিজ্য সম্মেলনে। এ ছাড়াও এই সব দেশের রাষ্ট্রদূতদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
সূত্রের খবর, প্রত্যেক দেশের শিল্পপতিদের জন্য রাজ্যে কোথায় কোথায় বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে, তা তুলে ধরা হবে। রাজ্যে শিল্প স্থাপনের জন্য কেমন পরিবেশ তাঁরা চাইছেন, তা-ও জানতে চাওয়া হবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার শিল্প গড়ার জন্য পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য কী কী করেছে, সম্মেলনে দেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামনে সে সবও জানাবেন সরকারি আধিকারিকরা। শিল্প স্থাপনের জন্য তৈরি রাজ্য সরকারের 'ওয়ান উইন্ডো' নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বণিকমহল। সেই সমস্ত প্রশ্নের নিরসন করা হবে এই সম্মেলনেই। সেই চেষ্টা হচ্ছে কোনও বিনিয়োগকারী বিনিয়োগে রাজি হলে এই সম্মেলনেই তা চূড়ান্ত করে ফেলতে।
মঙ্গলবার বিকেলে নিউটাউনে পৌঁছে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বাণিজ্য সম্মেলনের দু'দিন নিউটাউনের একটি কটেজে থেকেই গোটা অনুষ্ঠানের তত্ত্বাবধান করবেন তিনি। অতিমারি-উত্তর পরিস্থিতিতে রাজ্যের প্রতি বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই রাজ্য সরকারের লক্ষ্য। মঙ্গলবার বাণিজ্য সম্মেলন শুরুর আগের সন্ধ্যায় বণিক সংস্থার ফিকির সঙ্গে বৈঠক হয় মুখ্যমন্ত্রী। ফিকির সভাপতি সঞ্জীব মেহতার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে মমতার। ফিকির অধীনে থাকা শিল্পপতিরা এই সম্মেলনে অংশ নেবেন বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
অন্য দিকে, এই শিল্প সম্মেলনে যোগ দিতে মুখ্যমন্ত্রী আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। নবান্ন সূত্রে খবর, মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী যে আসবেন না, সে বিষয়ে সরকারি ভাবে নবান্নকে কিছুই জানানো হয়নি পিএমও-র তরফে। শেষ বার দিল্লি সফরে গিয়েই রাজ্যের বিজিবিএসে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।