ভাদ্রের ভাত-পাতে ইলিশে মজল বাঙালি

ইলশেগুঁড়ি তো দূরের কথা। দিনভর চড়া রোদ, সেই সঙ্গে ভাদ্রের পচা গরম। রবিবারের মাছবাজারে অনেকেই ঢুঁ মেরেছিলেন ব্যাজার মুখে। কিন্তু ঢুকে তাঁরা অবাক! সপ্তাহের অন্য দিনগুলোয় যে দোকানি বসেন শুধু চারাপোনা-বাটা নিয়ে, তাঁর কাছে এ দিন নানা সাইজের ইলিশ।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় ও অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ০০:৩৮
Share:

...খাইব সুখে। ইলিশ উৎসবে মাধবী মুখোপাধ্যায়, চিন্ময় রায়, দেবশ্রী রায় এবং দুলাল লাহিড়ী। রবিবার, কাঁকুড়গাছিতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

ইলশেগুঁড়ি তো দূরের কথা। দিনভর চড়া রোদ, সেই সঙ্গে ভাদ্রের পচা গরম। রবিবারের মাছবাজারে অনেকেই ঢুঁ মেরেছিলেন ব্যাজার মুখে। কিন্তু ঢুকে তাঁরা অবাক! সপ্তাহের অন্য দিনগুলোয় যে দোকানি বসেন শুধু চারাপোনা-বাটা নিয়ে, তাঁর কাছে এ দিন নানা সাইজের ইলিশ। দামও নাগালের মধ্যে। একই ছবি বাকি দোকানদারদের কাছেও। বাঙুর থেকে বাঁশদ্রোণী সর্বত্র।

Advertisement

মন ভরে ইলিশ কিনে তাই বাড়ি ফিরলেন অনেকে। আরও আশার কথা, মৎস্য ব্যবসায়ীরাই জানাচ্ছেন, আগামী কয়েক দিন বাজারে ইলিশের ভিড় আরও বাড়বে। কমবে দামও।

অগস্টের শেষ দিকে ইলিশের দেখা মেলে ফি বছরই। কিন্তু শনি ও রবিবার— পর পর দু’দিন বাজারে আসা একই সঙ্গে ভাল জাতের, দামও সাধ্যের মধ্যে। শহরের দক্ষিণে বাঁশদ্রোণী বাজারে এ দিন ৫০০-৬০০ গ্রামের ইলিশ বিকিয়েছে ৬০০ টাকা কেজি দরে। আর ৮০০ গ্রামের কাছাকাছি ওজনের ইলিশের কেজি ছিল ৮০০ টাকা। অথচ এই অগস্ট মাসেই ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজি প্রতি ১২০০ টাকায় বিক্রি গিয়েছিল। বাঁশদ্রোণী সুপার মার্কেটের মৎস্য ব্যবসায়ী বাবু দাস বলছেন, ‘‘শনিবার থেকে কলকাতার বাজারে যে ইলিশ ঢুকছে, সেটা রায়দিঘি, নামখানার মতো এলাকার। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, জাতের মাছ।’’

Advertisement

কিন্তু জালে ধরা দিতে ইলিশ এত সময় নিল কেন?

মৎস্যবিজ্ঞানীরা বলছেন, ইলিশ জালে আসার জন্য চাই পুবালি বাতাস। কিছু দিন আগে মায়ানমারে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের জন্য এখন পুবালি বাতাস বইছে আর তার ফলে মায়ানমার উপকূল থেকে বঙ্গোপসাগর উপকূলের দিকে এসেছে ইলিশ। সে কারণেই তার আমদানি বেড়েছে শনিবার থেকে। অগস্টের ৮ তারিখ থেকে দফায় দফায় নিম্নচাপ আর ঝড়বৃষ্টির ঠেলায় মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে যেতে পারছিলেন না। কেউ কেউ ট্রলার নিয়ে বেরিয়েও আটকে গিয়েছিলেন জম্বু দ্বীপ বা কেঁদু দ্বীপে। কিন্তু ২১-২২ অগস্ট থেকে নিম্নচাপের ঝাঁঝ কমতেই পরিস্থিতি অন্য রকম হয়ে যায়। ডায়মন্ড হারবার মৎস্য বাজার সমিতির সম্পাদক অরবিন্দ মণ্ডল বলেন, ‘‘২১-২২ তারিখের পর থেকে মৎস্যজীবীরা ফের সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়েছেন। বেশ কিছু দিন পরে যাওয়ায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশও উঠেছে ট্রলারে। ২৫-২৬ তারিখ থেকে ওই সব ট্রলার সমুদ্র থেকে ফিরতে শুরু করতেই বাজারে ইলিশের রমরমা।’’

রাজ্যে মাছ আমদানিকারক সংস্থার সভাপতি অতুলচন্দ্র দাসের কথায়, ‘‘রাজ্যের বিভিন্ন মাছবাজারে শুক্রবার সব মিলিয়ে ইলিশ এসেছিল ১৫০ টন। শনিবার এক লাফে তা বেড়ে যায় দ্বিগুণ। আর রবিবার সন্ধ্যায় সেটা এসে দাঁড়িয়েছে ৪০০ টনে।’’

অরবিন্দবাবু জানাচ্ছেন, কাকদ্বীপ, ফ্রেজারগঞ্জ, নামখানায় ট্রলার আসার পরে সেখান থেকে ইলিশ ট্রাকে তুলে আনা হয় ডায়মন্ড হারবার বাজারে। গত তিন-চার দিন ধরে এমন ট্রাকের সংখ্যা ছিল ১০-১২। রবিবার এসেছে প্রায় ২০টি ট্রাক। পাইকারি বাজারে গত তিন-চার দিনে ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৬৬০ টাকা কেজি দরে। এ বার তা-ও কমে ৬০০ টাকা পর্যন্ত নামার সম্ভাবনা আছে।

মানিকতলা বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ীদের পক্ষে প্রভাত দাস বলছেন, ‘‘রবিবার পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা মজুত রাখা মাছও বিক্রি করেছেন। তাই দাম ততটা কমতে পারেনি। কাল-পরশু দাম আরও কমবে বলেই মনে হচ্ছে।’’

অতএব, সেপ্টেম্বরের শুরুতে বাঙালির হেঁশেল ইলিশ ভাপার গন্ধেম ম করতেই পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement