আলো-ফাঁদ: এমনই বিজ্ঞাপন ডাকছে বিপদ। চাঁদনি চকে। নিজস্ব চিত্র
এক ধারে বড় বড় বিজ্ঞাপন। রাতের পথে তার আকর্ষণ বাড়াতে উপর থেকে আলো দেওয়া রয়েছে। গাড়ি চালানোর সময়ে বা হাঁটতে গিয়ে সে দিকে স্বাভাবিক ভাবেই নজর টানে বেশি। দৃষ্টি আকর্ষণে হাজির ‘মোনোপোল এলইডি’। ট্র্যাফিক সিগন্যালের আগেই বসানো রয়েছে বড় আকারের সেই টাওয়ার। বিভিন্ন সংস্থার বিজ্ঞাপন সরে যাচ্ছে সেকেন্ডের মধ্যে। কিন্তু ঝলমলে আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে ট্যাক্সিচালকের মুখে ফুটে উঠছে বিরক্তি।
সন্ধ্যার পরে একই ভাবে অস্বস্তিতে পড়ছেন বাস ও ট্রাকের পাশাপাশি অন্য গাড়ির চালকেরা। অভিযোগ, ট্র্যাফিক সিগন্যালের আগে রাস্তার অনেকটা জুড়ে এই মোনোপোল এলইডি বিপদ বাড়াচ্ছে রাতের পথে। সম্প্রতি দরপত্র ডেকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের বিজ্ঞাপন বসিয়েছে কলকাতা পুরসভা। শহরে আরও বসবে এমন বিজ্ঞাপন।
শহর পরিকল্পনা বিশারদদের মতে, বিজ্ঞাপনের জন্য এই মোনোপোল এলইডি বসানোর ক্ষেত্রে একাধিক বিধি-নিষেধ আছে। ২০০৮-০৯ সালে পুরসভার তরফে সেই পরিকল্পনার রূপরেখাও তৈরি হয়। অভিযোগ, খাতায় কলমেই রয়ে গিয়েছে সেই নিয়ম। বরং নিয়ম ভেঙে শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় এবং মোড়ে বসানো হয়েছে এই ধরনের বিজ্ঞাপন।
এ ধরনের বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে কী নিয়ম মানা উচিত? প্রাক্তন শহর পরিকল্পনাবিদ দীপঙ্কর সিংহ জানাচ্ছেন, সাধারণত সিগন্যালের ধারে কাছে এ ধরনের বিজ্ঞাপন বসানো যায় না। কারণ এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনগুলি ঘোরে এবং প্রতি সেকেন্ডে আলো পরিবর্তন হয়। ফলে সিগন্যালের আগে হলুদ, সবুজ এবং ‘ইলিউশন’ তৈরি করে এমন কোনও রং কার্যত ব্যবহার করা যায় না। এতে গাড়ির চালকদের চোখ ধাঁধিয়ে গেলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
তিনি আরও জানাচ্ছেন, এ ধরনের বিজ্ঞাপন বসালে আশপাশ থেকে বিজ্ঞাপনের ব্যানার কিংবা পোস্টার সরিয়ে ফেলে মোনোপোল এলইডি বসানোর কথা বলা হয়েছিল। ব্যানার-পোস্টারের জঙ্গলে ভর্তি এ শহরে তা একেবারেই মানা হয়নি। এমনকী রাস্তার ধারে যে অংশে ফুটপাথ অর্থাৎ আড়াই থেকে তিন ফুটের মধ্যেই এই ধরনের বিজ্ঞাপন বসানো যায়। অভিযোগ, শহরের যে কয়েকটি জায়গায় এই বিজ্ঞাপন বসেছে সেগুলি সবই নিয়ম না মেনে। কেন নিয়ম ভেঙে পথের বিপদ ডেকে আনছে কলকাতা পুরসভা? মেয়র পারিষদ (বিজ্ঞাপন) দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘দরপত্র ডেকে ওই বিজ্ঞাপন বসিয়েছে পুরসভা। কিন্তু পুরসভা কোনও নিয়ম ভাঙা হয়েছে বলে জানা নেই। বিজ্ঞাপনের জন্য যদি কেউ অসুবিধা হচ্ছে বলে অভিযোগ জানান, তবে বিষয়টি দেখা হবে।’’