কলকাতা পুরসভা। —ফাইল চিত্র
পুর নির্বাচনের মুখে আর্থিক সঙ্কটে কলকাতা পুরসভা! বিভিন্ন রকম কর বাবদ বছরে পুরসভার আয় হয় ১৬০০ কোটি টাকার মতো। এ বছর এখনও পর্যন্ত আদায় হওয়া করের পরিমাণ প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, কর আদায় হয়েছে ৫৮-৬০ শতাংশ। স্বভাবতই ভোটের আগে শহরের উন্নয়নের কাজে তার প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন পুরসভার কর্তারা। তাই এখন রাজ্য সরকারের কোষাগারের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন তাঁরা।
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমই রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী। সেই কারণে বাড়তি কিছু সহায়তা মিলতে পারে বলে আশা পুরকর্তাদের। তবে শুধু আদায় বাড়ানো বা সরকারি সহায়তার পিছনে পড়ে থাকলেই কাজ হবে না। কমাতে হবে খরচও। প্রায়ই নানা উৎসব-অনুষ্ঠানে ও দান-খয়রাতিতে পুরসভার ভাঁড়ার থেকে প্রচুর টাকা ব্যয় হচ্ছে। সেই খয়রাতির পরিমাণও কমাতে হবে বলে মনে করছেন পুর মহলের অনেকেই।
কলকাতা পুরসভার বার্ষিক বাজেট তিন হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে ১৬০০ কোটি টাকা আসার কথা বিভিন্ন দফতরের করের মাধ্যমে। ওই সমস্ত দফতরের মধ্যে রয়েছে কর মূল্যায়ন, বিল্ডিং, বাজার, পার্কিং, বিজ্ঞাপন, লাইসেন্স এবং বিনোদন। কর মূল্যায়ন দফতর সম্পত্তিকর আদায় করে। তার পরিমাণই সব চেয়ে বেশি। এ বছর ওই করের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১০২০ কোটি টাকা। এখনও পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৬৫০ কোটির মতো। ছুটিছাটা বাদ দিলে আর মাত্র সাড়ে তিন মাস সময় হাতে রয়েছে। তার মধ্যে বাকি টাকা তোলা যে প্রায় অসম্ভব, তা মেনে নিচ্ছেন পুরকর্তারাও। একই অবস্থা লাইসেন্স, পার্কিং ও বাজার দফতরেও।
কিন্তু আদায়ের হাল এমন হচ্ছে কেন? এ নিয়ে পুরসভার অর্থ দফতর একাধিক বার পুর কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ করা দরকার। মেয়র ফিরহাদ হাকিম নিজেও বার কয়েক বৈঠক করে ওই সব দফতরের অফিসারদের আদায় বাড়ানোর কাজে তৎপর হতে বলেছেন। বৈঠকে তিনি জানিয়েছেন, কর আদায়ের ক্ষেত্রে কোনও রকম সমঝোতা করা যাবে না। ওই কাজে কারও গাফিলতি থাকলে তা বরদাস্ত করা হবে না। মেয়রের সেই নির্দেশের পরেই গত সপ্তাহে পুর কমিশনার খলিল আহমেদ একটি কড়া বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। তাতে বলা হয়েছে, কর আদায় আরও বাড়াতে হবে। প্রতি ১৫ দিন অন্তর কতটা কাজ হল, তা নিয়ে বৈঠক করতে হবে। সেখানে বিশেষ কমিশনার পদমর্যাদার অফিসার-সহ বিভিন্ন দফতরের পদস্থ কর্তারা হাজির থাকবেন। কোন অফিসার কত আদায় করছেন, বৈঠকে তা-ও দেখা হবে। কারও আদায় কম হলে কেন তা হয়েছে, তার জবাব চাওয়া হবে। আর সাত দিন অন্তর কতটা কাজ হল, তার রিপোর্ট দিতে হবে।
এলাকা-ভিত্তিক কর দেওয়ার ক্ষেত্রে করদাতাদের উৎসাহের অভাব ভাবিয়ে তুলেছে পুর প্রশাসনকে। তিন বছর হল পুরসভা এই প্রথা চালু করেছে। কিন্তু পৌনে সাত লক্ষ করদাতার ১০-১২ শতাংশও এখনও আবেদন করেননি। করদাতাদের উপরে করের বোঝা অনেকটা বেড়ে যাওয়াই এর কারণ বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
তা হলে উপায়? পুর কমিশনারের ডাকা বৈঠকে বলা হয়েছে, বকেয়া সম্পত্তিকরের পরিমাণ প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। তা আদায়ের উপরে জোর দিতে হবে। অন্তত পাঁচ শতাংশ আদায় করা গেলেও ২০০ কোটি টাকা ভাঁড়ারে আসবে। কর আদায়ের কাজে বিশেষ অভিযান চালাতে বলা হয়েছে পুরসভার কর্মী-অফিসারদের। না হলে আদায়ের কাজে এ ভাবেই খামতি থেকে যাবে বলে মনে করছেন কর্তারা। আগামী বছর পুর ভোট। তার আগে শহরের উন্নয়নে অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছে পুরসভা। টাকার অভাব রয়ে গেলে তা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে পুরকর্তাদেরও।