ফাইল চিত্র।
খাতায় কলমে নিয়ম নেই। কিন্তু ‘প্রথা’ ছিল ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কালীপুজোর। এ বার সেই রীতি পাল্টে দিল কারা দফতর। বারুইপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে এ বার কালীপুজো হল কেন্দ্রীয় ভাবে। কারা দফতরের সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন বন্দিরাও।
গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার স্থানান্তরিত হয়ে বারুইপুরের টংতলায় যায়। তাই গত বার আলিপুরে শেষ বারের মতো কালীপুজো হয়। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পুজোর আয়োজনেরই রেওয়াজ ছিল। তা বন্দিরাই করতেন। এ বার সেই রেওয়াজে রাশ টেনেছেন সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। তাই ওয়ার্ড ভিত্তিক পুজোর পরিবর্তে কেন্দ্রীয় ভাবে পুজো হল বারুইপুরে।
দফতর সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় ভাবে পুজো নিয়ে শুরুতে মৃদু আপত্তি তুলেছিলেন কয়েক জন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি। তাঁরা কর্তৃপক্ষের কাছে ওয়ার্ড ভিত্তিক পুজোর অনুমতির জন্যেই আবেদন করেছিলেন। তবে কর্তৃপক্ষ তা পত্রপাঠ খারিজ করে দেন। দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘ওয়ার্ড ভিত্তিক পুজো না করে কেন্দ্রীয় ভাবে পুজো হয়েছে। বন্দিরাও সেই সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত মেনে নিয়েছেন।’’
কারাকর্তারা জানান, কালীপুজো শেষ হতে প্রায় ভোর হয়ে যায়। নিয়ম রয়েছে, তত ক্ষণ পর্যন্ত বন্দিদের খোলা ছেড়ে রাখা যাবে না। সন্ধ্যার পরেই তাঁদের ‘লকআপ’ করতে হয়। তাই রবিবার মধ্য রাতে কালীপুজোর সময়ে হাতে গোনা কয়েক জন বন্দিকে পুজোয় অংশ নেওয়ার অনুমতি দেন বারুইপুরের সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। তাঁদের মধ্যে জেলের অফিসের কাজের সঙ্গে যুক্ত কয়েক জন বন্দিও ছিলেন।
রবিবার রাতে বেশির ভাগ বন্দিই পুজোয় অংশ না নিতে পারায় সোমবার সকালে অমাবস্যা শেষ হওয়ার আগেও বারুইপুর জেলে কালীপুজো হয়। এ দিন সকালেও অনেক বন্দি সেখানে অঞ্জলি দেন বলে খবর।
প্রথা ভাঙার কেন প্রয়োজন পড়ল?
কারা দফতরের কর্তাদের অনেকের যুক্তি, ওয়ার্ড ভিত্তিক পুজোর আয়োজনে অনেক ক্ষেত্রে বন্দিদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি হয়। সমবণ্টনই কারা দফতরের অগ্রাধিকার। পাশাপাশি, ওয়ার্ডভিত্তিক পুজো হলে তা নিয়ে রাত পর্যন্ত হইচই হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাতে কখনও কখনও সমস্যা হয়। কেন্দ্রীয় ভাবে পুজো হলে ওই সব সমস্যা থাকে না। সে কারণেই এই পরিবর্তন।
‘‘প্রথা মানেই সব কিছু ভাল, তেমন তো হয় না। তাই কখনও কখনও তাতে ছেদ পড়ে। যে কোনও প্রথাই সকলের ভালর জন্য হওয়া উচিত।’’—তেমনই বলছেন এক কারাকর্তা। বন্দিদের সামগ্রী ঢোকা নিয়ে গত বছর কালীপুজোর দিনে আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। এ বার অবশ্য কেন্দ্রীয় ভাবে পুজোয় সবই ঠিকঠাক হয়েছে বলেই দাবি কারাকর্তাদের একাংশের।