কলকাতার বাসিন্দাদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতানোর আগেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ল এটিএম কার্ড জালিয়াতরা। নিজস্ব চিত্র।
রোমানিয়া গ্যাং এখনও জেলে। সেই সুযোগেই কলকাতার এটিএম থেকে টাকা হাতাতে শহরে ঘাঁটি গেড়েছিল তুরস্কের নতুন চক্র। কিন্তু কলকাতার বাসিন্দাদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতানোর আগেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ল এটিএম কার্ড জালিয়াতরা। সঙ্গে চক্রের বাংলাদেশি দুই সদস্য।
তবে, কলকাতায় আসার আগে এই চক্র ত্রিপুরা এবং গুয়াহাটির বিভিন্ন ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি টাকারও বেশি! শুধু ত্রিপুরা নয়, জানা গিয়েছে ওই চক্র গত ছ’মাসে কলকাতাকে মূল ঘাঁটি করেই মুম্বই, দেহরাদূন এবং দিল্লিতেও জালিয়াতি করেছে।
গত বছর এপ্রিল-মে মাসে কলকাতার বিভিন্ন অংশের যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, গত কয়েক দিন ঠিক সেই রকমই হাল হয় আগরতলার বাসিন্দাদের। নিজের হাতে বা বাড়িতে তাঁদের ডেবিট কার্ড, অথচ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। এই গ্রাহকদের একটা বড় অংশই স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার। তাঁরা ছোটেন ব্যাঙ্কে। ডজন ডজন অভিযোগ জমা পড়তে থাকে। অনেকেই ব্যাঙ্কে অভিযোগ জানানোর পর পুলিশেও অভিযোগ জানান। তদন্ত শুরু করেই ত্রিপুরা পুলিশের তদন্তকারীরা বুঝতে পারেন এটা কোনও কার্ড ক্লোনিং চক্রের কাজ। অর্থাৎ এটিএমে কার্ডের তথ্য নকল করার যন্ত্র লাগিয়ে গ্রাহকদের কার্ড সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য নকল করে দ্বিতীয় কার্ড তৈরি করা। সেই কার্ড দিয়েই হয়ে যাচ্ছে ‘চিচিং ফাঁক’।
আরও পড়ুন: খেলায় দুরন্ত-পড়াশোনায় নয় কেন! বাড়ির গঞ্জনায় আত্মঘাতী বাঘাযতীনের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র
কলকাতাতেও ঠিক একই কায়দায় কয়েকশো মানুষের লাখ লাখ টাকা হাতিয়েছিল রোমানিয়ার চক্রটি। একাধিক এটিএমে পাওয়া গিয়েছিল কার্ড ক্লোনিং যন্ত্র। ত্রিপুরা পুলিশ, কয়েকটি এটিএমে লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দু’জন বিদেশিকে চিহ্নিত করে। শহরের বিভিন্ন হোটেলে এবং গেস্ট হাউসে খোঁজ করে জানা যায়, ওই সময়ে আগরতলায় ছিল দু’জন তুরস্কের নাগরিক। ত্রিপুরা পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখার গোয়েন্দারা সন্দেহ করেন, ওই দুই তুরস্কের নাগরিকের সঙ্গে যোগ থাকতে পারে কার্ড জালিয়াতির। সেই অনুযায়ী পুলিশ শুরু করে ওই দু’জনের খোঁজ। সূত্র মেলে যে, ওই দু’জনই কলকাতার উদ্দেশে রওনা হয়েছে। সতর্ক করা হয় কলকাতা পুলিশ-সহ আশপাশের সমস্ত পুলিশ কমিশনারেটকেও।
ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রে খবর, ত্রিপুরা পুলিশের দেওয়া সূত্র ধরে এগোতে গিয়েই বেলঘরিয়ায় বিটি রো়ড থেকে সামান্য দূরে এল-৯ বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি অ্যাপার্টমেন্টে হদিশ মেলে দুই বিদেশির। তাদের সঙ্গে ত্রিপুরা পুলিশের পাঠানো ছবিরও মিল খুঁজে পান গোয়েন্দারা। তার পরেই দু’জনকে জেরা করা জন্য আটক করা হয়। তাদের নথিপত্র থেকে জানা যায় তাদের নাম হাকান জানবুরকান এবং ফেটাহ আলদেমির। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ত্রিপুরা পুলিশের দেওয়া তথ্যের সঙ্গেও মেলে ওই আটক দু’জনের তথ্য। তাদের ভাড়ার ফ্ল্যাট থেকে পাওয়া যায় ল্যাপটপ, বিভিন্ন কার্ড সংক্রান্ত তথ্য। জেরায় এর পর তারা স্বীকার করে কার্ড জালিয়াতির কথা।”
আরও পড়ুন: গাউনে আঁটা ৭৬টি সোনার কাঠি! অভিনব পাচারের কায়দায় স্তম্ভিত শুল্ক বিভাগের কর্তারাও
তদন্তকারীদের দাবি, ধৃত তুরস্কের নাগরিকদের জেরা করেই হদিশ মেলে বাংলাদেশের নাগরিক মহম্মদ হান্নান এবং রফিকুল ইসলামের। এরাও ওই চক্রের সদস্য। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতেরা বেলঘরিয়ার ওই ফ্ল্যাটটি প্রায় ৬ মাস আগে ভাড়া নিয়েছিল। এখান থেকেই কয়েক দিনের জন্য ‘অপারেশন’ করতে যেত বিভিন্ন শহরে।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, তাদের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার আধিকারিকরাও যাবেন ওই চার জনকে জেরা করতে। আরও কেউ ওই চক্রের এখানে আছে কি না জানতে। কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘রোমানিয়া চক্রের তিন জনই জেলে। দু’জনের ৬ মাসের কারাদণ্ড হয়েছে। আরও এক জনের বিচার চলছে।”