উদ্বেল। দীপাবলির আগে, কুমোরটুলিতে। ছবি: সুমন বল্লভ।
প্রতিনিয়ত বেড়ে চলা গাড়ির ভিড়ের কারণে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন রাস্তায় যানজট কার্যত রোজকার ছবি। পুজোর মরসুমে এই সমস্যা চূড়ান্ত আকার নেয়। দুর্গাপুজোতেই শেষ নয়, কালীপুজোর সময়েও গাড়ির চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় ব্যারাকপুরের পুলিশ-প্রশাসনকে।
দুর্গাপুজোর মতোই কালীপুজোও বিখ্যাত ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে। এখানকার মণিরামপুর, নৈহাটি, হালিশহরে চার দিন ধরে চলে কালীপুজো। দুর্গাপুজোর মতই জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে। নৈহাটির পুজো দেখতে আশপাশের জেলা থেকেও প্রচুর মানুষ ভিড় করেন। এই শিল্পাঞ্চলে মোট কালীপুজোর ৩০ শতাংশই হয় নৈহাটিতে। গঙ্গার ধারে মণিরামপুরেও কালীপুজোর সংখ্যা শতাধিক। ঘটনাচক্রে, এই দু’টি অঞ্চলই আয়তনে ছোট এবং জনঘনত্বও বেশি। ফলে এক দিকে পুজো দেখতে বেরোনো বিপুল সংখ্যাক দর্শনার্থী, অন্য দিকে গাড়ি চলাচল— দুইয়ে মিলে নাকাল হন নাগরিকেরা। অধিকাংশ পুজো রাস্তার ধারে হওয়ায় যানবাহন চলাচলে অসুবিধা হয় প্রচণ্ড। বিশেষত, জরুরী প্রয়োজনে বেরোনো মানুষজনের অসুবিধার অন্ত থাকে না।
এই সমস্যা সামাল দিতে এ বার কালীপুজোয় অতিরিক্ত সংখ্যায় বিশেষ প্রশিক্ষিত ট্রাফিক পুলিশ রাস্তায় নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যারাকপুর কমিশনারেটের কর্তারা। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে প্রায় ৪০০ সিভিক পুলিশ এবং ৩০০ মহিলা পুলিশের প্রশিক্ষণ। পুজো শুরুর দিন থেকে শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ ব্যস্ত রাস্তায় বড় গাড়ির জন্য নো-এন্ট্রি বোর্ড লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘কালীপুজোতেও দুর্গাপুজোর মতোই যান-নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে।’’
গত পাঁচ বছরে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে কালীপুজোতেও দেখা যাচ্ছে থিমের রমরমা। পাশাপাশি, শহর কলকাতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রতিযোগিতার বহরও। প্রশাসনের কর্তারাই মনে করছেন, পুজো পরিক্রমা, প্রশাসনের নজরদার গাড়ি-সহ প্রতি দিন রাস্তায় যত গাড়ি চলবে, তাতে জট যন্ত্রণায় জেরবার হবে আমজনতা। উপরন্তু, গোদের উপর বিষফোড়ার মতো রাস্তার যেখানে-সেখানে পিচ উঠে গর্ত তৈরি হওয়া তো আছেই। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল পুজোর আগে রাস্তা সারানোর। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বেহাল রাস্তা এখনও বর্তমান।
ব্যারাকপুর কমিশনারেট সূত্রে খবর, বাইরে থেকে আসা দর্শনার্থীদের কথা ভেবে স্টেশনগুলিতে ও রাস্তার মোড়ে মোড়ে ক্যাম্প করা হচ্ছে। থাকছে হেল্পলাইনও। ট্যাক্সি ও অটোর জন্য নো-রিফিউজাল পোস্ট করা হয়েছে। যে পুর-এলাকায় রাস্তা এখনও খারাপ, সেই পুরসভাকে বলা হয়েছে রাস্তা সংস্কারের জন্য। সব মিলিয়ে, কালীপুজোয় যান নিয়ন্ত্রণ ও ভিড় সামলানোর ক্ষেত্রে বড় পরীক্ষার মুখে ব্যারাকপুর কমিশনারেট।