বুধবার রাতে হাসপাতালের পথে মধুবাবু। নিজস্ব চিত্র
রাজনৈতিক শত্রুতা নয়, টিটাগড়ে ব্যবসায়ীকে গুলির ঘটনা তোলাবাজিকে কেন্দ্র করেই। প্রাথমিক তদন্তের পরে এমনটাই মনে করছে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ।
বুধবার রাতে টিটাগড় বাজার এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন ওয়াই মধুবাবু রাও নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি পেশায় দর্জি। টিটাগড় বাজারে তাঁর দোকান। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ওই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ দিন রাতেই দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করার দাবিতে টিটাগড় থানায় বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। বিক্ষোভ দেখাতে থানায় উপস্থিত হন ব্যারাকপুরে সাংসদ অর্জুন সিংহ এবং ব্যারাকপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী চন্দ্রমণি শুক্ল।
বুধবার রাতে ওই ঘটনার পরেও ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিলেন চন্দ্রমণি। দাবি করেছিলেন, ঘটনার পিছনে তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা জড়িত। মধুবাবু বিজেপির কর্মী-সমর্থক হওয়ায় তাঁকে গুলি করা হয়েছিল বলে দাবি ওই প্রার্থীর। যদিও তৃণমূলের তরফে রাতেই সেই অভিযোগ খারিজ করে দেন টিটাগড় পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রশান্ত চৌধুরী। তিনি দাবি করেছিলেন, মধুবাবু প্রোমোটিংয়ে যুক্ত। ওই ঘটনা তাঁর ব্যবসায়িক সমস্যায় ঘটে থাকতে পারে।
পুলিশ এ দিন জানায়, প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, প্রোমোটিংয়ের কাজ শুরুর পরে মধুবাবুর থেকে দুষ্কৃতীরা টাকা দাবি করেছিল। তাই নিয়েই দু’তরফে সমস্যা হয়েছিল। ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক রেষারেষির যোগ নেই বলেই দাবি করেছেন পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ। তাঁর দাবি, “তোলা আদায়ের জন্য ওই ব্যবসায়ীকে গুলি করা হয়েছে। দুষ্কৃতীরা দ্রুত ধরা পড়বে।”
আপাতত টিটাগড়ের একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন ওই ব্যবসায়ী। গুলি তাঁর পেটে লাগায় একটি কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। মধুবাবুর ব্যবসার অংশীদার বিমলকুমার কয়াল জানান, সম্প্রতি মধুবাবু প্রোমোটিং শুরু করেছিলেন। তিনি বলেন, “মধুবাবু প্রয়াত বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লর ঘনিষ্ঠ। কিন্তু মধুবাবু কোনও রাজনৈতিক দল করেন না। আমি জানি না ওঁর থেকে কেউ তোলা চেয়েছিলেন কি না।”
কিছু দিন আগেই জগদ্দলের মেঘনা মোড়ে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের বাড়ির কাছের একটি বস্তিতে তুমুল বোমাবাজি হয়। সেই ঘটনার কথা পৌঁছে যায় নির্বাচন কমিশনের কাছেও। বোমা নিয়ে দু’দিন আগেই ব্যারাকপুর কমিশনারেটকে সতর্ক করেছে নির্বাচন কমিশনের ফুলবেঞ্চ।
যদিও পুলিশের দাবি, দুষ্কৃতীদের নিয়ন্ত্রণ করতে নজরদারি, তল্লাশি বাড়ানো হয়েছে। নিয়মিত ভাবে চলছে নাকা তল্লাশি। বুধবার ওই কমিশনারেট এলাকা থেকে ৭৫ কিলোগ্রাম গাঁজা, চারটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গত কয়েক দিনে গ্রেফতারও করা হয়েছে কয়েক জনকে।
এ দিকে বুধবারের গুলি-কাণ্ডের পরে বৃহস্পতিবার টিটাগড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে টিটাগর ব্রহ্মস্থান থেকে শান্তি মিছিল করা হয়। এই মিছিলে যোগ দেন প্রশান্ত চৌধুরী, ব্যারাকপুর বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থী রাজ চক্রবর্তী-সহ অনেকে।