বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করার জন্য ফি নেবে বরাহনগর পুরসভা। ফাইল ছবি।
বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করার জন্য ফি নেবে পুরসভা। এ বার এমনই পরিকল্পনা করেছেন বরাহনগর পুর কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, এর ফলে নির্দিষ্ট রঙের বালতিতে বর্জ্য আলাদা করে রাখা এবং তা পুরসভার গাড়িতেই ফেলার তাগিদ থাকবে বাসিন্দাদের মধ্যে। পাশাপাশি, পুরসভারও কিছু আয় হবে।
যদিও বরাহনগর লাগোয়া কলকাতা পুরসভা এখনও এমন কোনও চিন্তাভাবনা করতেই পারেনি। বরং, কলকাতা পুর এলাকায় পচনশীল ও অপচনশীল আবর্জনা আলাদা করে সংগ্রহ না হওয়ার বিষয়টি একাধিক বার প্রকাশ্যে এসেছে। এ বিষয়ে প্রত্যেক পুরপ্রতিনিধি যাতে সচেতন হন, তার জন্য একাধিক বার পুরসভার মাসিক অধিবেশনে সরব হয়েছেন মেয়র পারিষদ (কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা) দেবব্রত মজুমদার। যদিও অভিযোগ, পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করার জন্য নীল এবং সবুজ বালতি দেওয়া হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা মেনে চলা হচ্ছে না।
এই জায়গাটিকেই কড়া হাতে ধরতে চাইছে বরাহনগর পুরসভা। সেখানকার উপ-পুরপ্রধান দিলীপনারায়ণ বসু বলেন, “অনেক সময়েই দেখা যায়, বাসিন্দারা রাস্তায় যত্রতত্র আবর্জনা ফেলছেন। কারণ, বিষয়টি নিয়ে কারও কোনও হেলদোল থাকে না। কিন্তু বাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করার জন্য যদি কোনও মূল্য দিতে হয়, তা হলে সে ব্যাপারে সজাগ থাকবেন বাসিন্দারা।”
কিন্তু কেউ যদি ফি দিতে রাজি না হন, সে ক্ষেত্রে কী হবে? দিলীপনারায়ণ জানাচ্ছেন, প্রতি মাসে ২০ টাকা করে ফি বাধ্যতামূলক করা হবে। তিনি বলেন, “এতে বাসিন্দারা ভাববেন, টাকা যখন দিচ্ছি, তখন পুরসভার গাড়িতেই ময়লা ফেলব। ফলে এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখা এবং দু’ধরনের বর্জ্য আলাদা করে পরিবেশ দূষণ রোধ করাও সম্ভব হবে।” তবে, অনেক আগেই শুধু ফ্ল্যাট থেকে আবর্জনা সংগ্রহের জন্য মাসে ৩০ টাকা করে নিচ্ছে উত্তরপাড়া পুরসভা।সেখানকার চেয়ারম্যান দিলীপ যাদব বলেন, “গত ফেব্রুয়ারি থেকে প্রতি মাসে ১৫ টাকা করে চেকের মাধ্যমে ফেরতও দিচ্ছি। আসলে এই ফি নেওয়ার অর্থ বাসিন্দাদেরও সচেতনতা বাড়ানো, যাতে তাঁরা পুরসভার গাড়িতেই বর্জ্য ফেলেন।” দুই পুরকর্তাই জানাচ্ছেন, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন (২০১৬) অনুযায়ী এই ‘ইউসেজ ফি’ বা ব্যবহারিক খরচ নেওয়া হচ্ছে। তাই এটিকে জঞ্জাল কর বলা চলে না।
তবে, কলকাতার মেয়র পারিষদ (কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা) বলছেন, “শহরে যাঁরা ব্যবসা করেন, তাঁদের থেকে জঞ্জাল সাফাইয়ের জন্য পুরসভা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি আদায় করে। কিন্তু, বাসিন্দাদের থেকে সেই ফি আদায়ের কোনও পরিকল্পনা নেই।” সূত্রের খবর, বরাহনগরের প্রতিটি বাড়িতে যতগুলি করে পরিবার আলাদা রয়েছে, সেই হিসাবে ২০ টাকা করে নেওয়া হবে। এমন ৮৭ হাজার পরিবার চিহ্নিত হয়েছে। তাতে মাসে ১৭ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা আদায় হবে পুরসভার। অনলাইনে ফি নেওয়ারও চিন্তাভাবনা হয়েছে।
এর পাশাপাশি, অন্তত ১৩-১৪ বছর পরে ট্রেড লাইসেন্স ফি বৃদ্ধি করা হল বরাহনগরে। জানা যাচ্ছে, ১৭৮০ রকমের ব্যবসার ক্ষেত্রে এত দিন সর্বনিম্ন ১০০ এবং সর্বাধিক ১৫০০ টাকা ফি ছিল। তাতে ১৩ হাজার ৬৮৫ জন ব্যবসায়ীর থেকে বছরে আয় হত এক কোটি টাকার কিছু বেশি। সম্প্রতি চেয়ারম্যান পরিষদের বৈঠকে ট্রেড লাইসেন্স ফি বাড়িয়ে সর্বাধিক প্রায় পাঁচ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা হয়েছে। তাতে বছরে আয় হবে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। দিলীপনারায়ণ বলেন, “পুরসভার নিজস্ব তহবিল বাড়াতে এই সিদ্ধান্ত। এতে এলাকার উন্নয়নেও বেশি কাজ হবে।”