বুড়ো আঙুল: চলছে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার, (১) ঢাকুরিয়া ও (২) বাগুইআটিতে। শুক্রবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী ও নিজস্ব চিত্র
৭৫ মাইক্রনের কম ঘনত্বের প্লাস্টিকের ব্যবহার পয়লা জুলাই থেকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষিত হলেও বাস্তবে সেই বিধি কি বলবৎ করা গেল? শুক্রবার শহরের বিভিন্ন এলাকার বাজার ও দোকানপাট ঘুরে দেখা গেল, বিধি মানার কোনও বালাই নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়েই দেদার চলছে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার। এর জন্য কাউকে কোথাও জরিমানাও করা হয়নি বলে খবর।
বিক্রেতাদের অনেকেরই বক্তব্য, বেশি ঘনত্বের প্লাস্টিকের যা দাম, তাতে ক্রেতারা সেই অতিরিক্ত টাকা দিতে চাইবেন না। কেউ কেউ আবার ক্রেতাদের উপরে দোষ চাপিয়ে জানিয়েছেন, তাঁরাই প্লাস্টিক ছাড়া অন্য কিছুতে জিনিস নিতে চাইছেন না। কলকাতা পুরসভার কর্তারা জানিয়েছেন, তাঁরাও এখনই কড়া পদক্ষেপের পক্ষে নন। সচেতনতা বাড়ানোয় জোর দেওয়া হচ্ছে এখন।
এ দিন মানিকতলা বাজারে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে দেদার নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার চলছে। পুলিশ তো বটেই, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাউকেও নজরদারি চালাতে দেখা যায়নি। ক্রেতার হাতে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ধরিয়ে এক দোকানি বললেন, ‘‘আজ এতেই দেওয়া হল। পরের দিন নিজের ব্যাগ আনবেন। পুলিশ ধরলে কিন্তু আপনাদের থেকেই টাকা নিয়ে জরিমানা মেটাব।’’মুচিবাজারে আবার সকাল সকাল প্লাস্টিক বন্ধে সচেতনতার প্রচার চলেছে। তাতেও অবশ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ হয়নি সেখানে। এক ক্রেতা বললেন, ‘‘আগে থলে নিয়ে বাজারে আসতাম। এখনও আসতে পারি। কিন্তু প্লাস্টিক ছাড়া মাছ-মাংস বাড়ি নিয়ে যাব কী করে?’’ ওই এলাকার অলিগলির দোকানেও এ দিন দেখা গিয়েছে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার।
যদুবাবুর বাজারে গিয়ে দেখা গেল, এক ডাবওয়ালা নিষিদ্ধ প্লাস্টিকেই ডাব ভরে বিক্রি করছেন। ওই প্লাস্টিকের ব্যবহার যে বেআইনি, তা কি তিনি জানেন না? ডাবওয়ালার জবাব, ‘‘৭৫ মাইক্রনের বেশি ঘনত্বের প্লাস্টিক এখন কোথায় পাব? বেশি ঘনত্বের ওই প্লাস্টিক পরে নিয়ে আসব।’’ ওই বাজারে আনাজের দোকানেও একই অবস্থা। অবাধেই চলছে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার। অশোক মাইতি নামে এক আনাজ বিক্রেতা বললেন, ‘‘আমাদের তো একটু সময় দিতে হবে। প্লাস্টিকের যে ব্যাগগুলো কেনা রয়েছে, সেগুলো শেষ হলেই আমরা ৭৫ মাইক্রনের প্লাস্টিকের ব্যাগে চলে যাব।’’
নিউ মার্কেটেও দেখা গেল, সাধারণ প্লাস্টিকে ভরেই বিকিকিনি চলছে। কয়েক জন ফল বিক্রেতাকে অবশ্য দেখা যায়, প্লাস্টিকের বদলে কাগজের ঠোঙায় ফল দিচ্ছেন। এমনই এক জন অশেষ দাস বললেন, ‘‘আমরা দিতে না চাইলেও মানুষ কিন্তু প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগই চাইছেন। তবে, শনিবার থেকে প্লাস্টিকের ব্যাগ আর একেবারেই দেব না।’’ নিউ মার্কেটের মুরগির মাংস বিক্রেতা সুজিত পাল বললেন, ‘‘৭৫ মাইক্রনের প্লাস্টিক কিন্তু আড়াই টাকা দামে বিক্রি হবে। ক্রেতারা সকলে টাকা দিয়ে প্লাস্টিক কিনতে চান না। পাতলা প্লাস্টিক দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করেন।’’
গড়িয়াহাট বাজারের আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা বাপি সাহার কথায়, ‘‘আমি ইতিমধ্যেই ৭৫ মাইক্রনের মোটা প্লাস্টিকের ব্যাগে আলু দিতে শুরু করেছি। তবে সবাইহয়তো তা করছেন না। আমার মনে হয়, এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে গড়িয়াহাট বাজারের প্রতিটি গেটে যদি পুরকর্মীরা থাকতেন, তা হলে ভাল হত।’’ ওই বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সচিব দিলীপকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘শুধু আমরা সচেতনহলেই হবে না। ক্রেতাদেরও হতে হবে। বহু ক্রেতারই বাজারে ব্যাগ নিয়ে আসার অভ্যাস চলে গিয়েছে। তাঁরা প্লাস্টিকের ব্যাগেই সব জিনিস নিয়ে যেতেন। এ বার সেই অভ্যাস পাল্টাতে হবে। বার বার সচেতনকরার পরেও দোকানি বা ক্রেতা, যিনিই নিয়ম ভাঙবেন, তাঁকে জরিমানা করতে হবে।’’
এ বিষয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, আগে এ নিয়ে প্রচার চালানো হবে, তার পরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। তিনি বলেন, ‘‘কাউকে জরিমানা করাটা লক্ষ্য নয়। আসল লক্ষ্য, পরিবেশবান্ধব পরিস্থিতি বজায় রাখা।’’