দীনেশ দত্ত।
২২ বছরের নাছোড় লড়াই। আইন আর পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে গা বাঁচানোর লড়াই চলছিল এক ধুরন্ধর জালিয়াতের। তবে শেষরক্ষা হল না। ১৯৯৯ সালে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ১২ লক্ষ ২১ হাজার টাকা লোপাটের (আজকের বাজারে তা অন্তত এক কোটি) কারবারে জড়িত জনৈক ব্যাঙ্ককর্মী এত দিন বাদে দশ বছরের সাজা পেয়েছেন। মঙ্গলবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বিশেষ বিচারক কুমকুম সিংহের ঘোষণা, দীনেশ দত্ত নামে ওই সরকারি ব্যাঙ্ককর্মীকে জনতার টাকা নিয়ে এত বড় অপরাধে সর্বোচ্চ দশ বছরের সাজা দেওয়া হচ্ছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৬৭, ৪২০, ৪৬৮ এবং ৪৭১ নম্বর ধারায় তাকে দোষী সাব্যস্ত
করা হয়।
দু’দশক আগে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের লায়ন্স রেঞ্জ শাখার ক্লিয়ারিং বিভাগের কর্মী দীনেশ তখন মধ্য চল্লিশে। চাপ দাড়ির ছিপছিপে যুবক। এখন গোলগাল বছর পঁয়ষট্টির বৃদ্ধ। এত বছর ধরে নানা অজুহাতে মামলা পিছনোর চেষ্টা চলছিল তার। বার বার হাই কোর্টে আবেদন করে সে মামলা ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশ হাল ছাড়েনি। এই মামলা নিয়ে লালবাজারের জালিয়াতি দমন শাখার তৎকালীন তরুণ অফিসার সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন বিচারক। সৌম্য (এখন গড়িয়াহাট থানার ওসি) বলছিলেন, “সেটা ছিল প্রাক্-মোবাইল যুগ। আমাদের ভুল বোঝাতে চেষ্টার কসুর করেনি জালিয়াত। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম, অন্য কেউ দোষী। তখন দীনেশ গ্যাংটকে বেড়াচ্ছে। সে শিয়ালদহ ফিরতেই আমরা তাকে ধরি। কিন্তু দ্রুত সে জামিনে বেরিয়ে যায়। ভাল লাগছে, শেষ পর্যন্ত অপরাধী সাজা পেল।”
‘গণেশ দাস’ বলে কারও নামে একটি ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে তাতে নিজের দাদার ছবি বসিয়েছিল দীনেশ। টাকা লোপাটের বিভিন্ন নথি নষ্টও করে। বিশেষ সরকারি আইনজীবী তরুণ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “দীনেশ ঠান্ডা মাথায় আদালতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে সময় নষ্ট করেছিল। এ বার বেশি বয়সে সেই ফল ভোগ করবে।”