উত্তপ্ত বাংলাদেশ। —ফাইল চিত্র।
উচ্চশিক্ষার জন্য কাঁটাতার পেরিয়ে এ দেশে পড়তে এসেছিলেন তাঁরা। কিন্তু বাংলাদেশের সাম্প্রতিকতম রাজনৈতিক পট পরিবর্তন আর তার পরে দ্রুত ঘটে চলা একের পর এক হিংসার ঘটনার খবরে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে সেই সমস্ত পড়ুয়ার। ঘটনার আকস্মিকতায় তাঁদের কেউ খানিকটা থতমত, কেউ আবার ঠান্ডা মাথায় ঘটনার বিশ্লেষণ করছেন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বাংলাদেশি ছাত্রী মঙ্গলবার জানালেন দেশ নিয়ে তাঁর আশঙ্কার কথা। পাশাপাশি শোনালেন আশার কথাও। সোমবার রাতে তাঁর ফরিদপুরের বাড়িতে ফোন করে জানতে পারেন, প্রায় একশো জনের বাইকবাহিনী তাঁদের পাড়ায় ঘুরছে, ভাঙচুরও ঘটেছে। তাঁদের পাড়ায় মূলত সংখ্যালঘুদের বাস। ফলে গোটা এলাকাতেই তুমুল আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। ওই ছাত্রী বলেন, ‘‘আতঙ্কে সারা রাত ঘুমোতে পারিনি।’’ এ দিন থেকে বাংলাদেশের স্কুল-কলেজ সব খুলে দেওয়া হয়েছে। এ দিন সকালে বাড়িতে ফের যোগাযোগ করলে তিনি জানতে পারেন, তাঁর কলেজশিক্ষক বাবাকে জামাতপন্থী এক সহকর্মী জানিয়েছেন, ভয় পাবেন না। প্রয়োজনে তাঁর বাড়িতে গিয়ে তাঁদের পরিবার থাকতে পারে। ওই ছাত্রীর বাবাকে ওই সহকর্মী আরও জানিয়েছেন, আপাতত কয়েক দিন তিনি যেন তাঁর সঙ্গেই কলেজে যাতায়াত করেন। সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ভাবে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার খবরেও কিছুটা হতবাক ওই ছাত্রী। তাঁর আশঙ্কা, এই পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘুরা আরও বেশি করে বাংলাদেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে চাইবেন।
গুজরাতের বরোদায় মহারাজা সয়াজিরাও বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ থেকে পড়তে এসেছেন শের আলি। স্নাতকোত্তর পারফর্মিং আর্টস বিভাগের ওই ছাত্র জানালেন, দেশের পরিস্থিতি নিয়ে বার বার খোঁজ নিচ্ছেন তিনি। ময়মনসিংহের ছেলে শেরের ব্যাখ্যা, দেশে তাঁদের এলাকায় আক্রমণের মুখে পড়ছেন মূলত আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা। তিনি জানালেন, সংখ্যালঘুদের মধ্যে বড় সংখ্যায় আওয়ামী লিগের সমর্থক রয়েছেন। ফলে তাঁরাও হামলার মুখে পড়ছেন। তবে ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে প্রবল ভাবে এই ঘটনাগুলির প্রতিরোধ করা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন শের। শেরের পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও আওয়ামী লীগের সমর্থক রয়েছেন। তাঁদের বাড়িঘর ভাঙচুরের চেষ্টা করা হয়েছে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্প্যারেটিভ ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড লিটারেচারের বাংলাদেশি ছাত্র শামীম মাহমুদ বর্তমানে রয়েছেন ঢাকায়। সেখান থেকে বললেন, ‘‘কয়েক দিন ধরে আওয়ামী লীগের দিক থেকে যে রকম আক্রমণ নেমে এসেছিল, এখন তারই প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে ছাত্রসমাজ সতর্ক। রাত জেগে মন্দির, গির্জা পাহারা দেওয়ার কাজ করছে।’’