বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি সৌজন্য: এবিপি আনন্দ।
শোভন চট্টোপাধ্যায়রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন মঙ্গলবার। বৃহস্পতিবার ইস্তফা দিয়েছেন মেয়র পদে। গোটা পর্ব জুড়ে যাঁর নাম বারে বারেই শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে উঠেছে, তিনি বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নিজে এ ক’দিন একেবারেই চুপ ছিলেন। থেকে গিয়েছিলেন আড়ালেই। অথচ তাঁর নামে বিষোদ্গার করেছেন শোভনবাবুর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়, শ্বশুর দুলাল দাস। এ দিন সন্ধ্যায় গোটা প্রসঙ্গ নিয়ে মুখ খুললেন বৈশাখী।
বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে শোভন যেভাবে বৈশাখীর পাশে দাঁড়িয়েছেন, ঠিক একই ভাবে এ দিন সন্ধ্যায় বিকেলে শোভনের পাশে দাঁড়ালেন বৈশাখী। স্ত্রীর বিরুদ্ধে শোভনবাবুর তোলা ‘পরকীয়া’য় সিলমোহর দিয়ে বৈশাখীর দাবি, ২০০৫-০৬ সাল থেকে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল রত্না চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি এ দিন বলেন, “শোভনদার আইনি বিষয়গুলো যেহেতু আমি দেখি, তাই তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের মামলার কাগজও আমি দেখেছি। সেখানেই সেই সমস্ত নথি দেখেছি। সেখানে স্পষ্ট ২০০৫-০৬ সাল থেকে রত্না সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অভিজিতের সঙ্গে ফোনে ব্যস্ত থাকতেন।”শোভনের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি আরও বলেন,“আমি নিজে কানে শুনেছি রত্না শোভনদাকে বলছেন, যা করেছি বেশ করেছি। তোমার মতো স্বামী থাকলে প্রেম করতেই হবে।”
বৈশাখীর দাবি, প্রথম দিকে এ সব কিছুই জানতেন না তিনি। বৈশাখী বলেন, “আমি এবং আমার দুই বন্ধু বিপদে পড়ে গিয়েছিলাম শোভনদার কাছে। সেখান থেকেই আলাপ। পরে দেখেছি প্রায়শই রত্নার সঙ্গে গন্ডগোল হত।” শোভনের বক্তব্যকে সমর্থন করে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনে সম্পত্তির ঘোষণা করার সময় রত্না প্রায় ২১টি সম্পত্তির কথা লুকিয়ে যান। পরে সেটা সামনে আসে। তখনই আসে জিসিআর কোম্পানির প্রসঙ্গ এবং অভি়জিতের কথা।” বৈশাখীর এ দিন তাঁর বিরুদ্ধে রত্নার করা সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “রত্নার সঙ্গে যদি অভিজিতের ভাই-বোনের সম্পর্ক তাহলে তিনি কেন অভি়জিতের সঙ্গে করা সমস্ত ইনভেস্টমেন্ট লুকোলেন। রত্না তো দেশ বিদেশে অনেক সম্পত্তি করেছেন। তিনি যদি এতই স্বচ্ছ তা হলে এ সব লুকোলেন কেন?” বৈশাখীর প্রশ্ন, কেন অভিজিৎ জামাইবাবুর কাছে সব গোপন রাখলেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘অভিজিতের মা যখন একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তখন হাসপাতালে রোগীর পরিবারের লোক হিসাবে রত্নার নম্বর কেন দেওয়া ছিল?’’
আরও পড়ুন: ববি হাকিম মেয়র হচ্ছেন, ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ, বিধানসভায় জানালেন মমতা
আরও পড়ুন: শোভনের বৈশাখী-যোগ কবে, কী ভাবে
বৈশাখী বলেন, “রত্না ভাবে ওর সমস্ত খবর আমি শোভনদাকে জানিয়েছি। গতবছর পুজোয় সপ্তমীর দিন শোভনদাকে তাঁর সেজদা বলেন রত্নার প্রেম প্রসঙ্গে। এ সব কিছু শোভনের বাড়ির লোকেরা সবাই জানেন।” রত্নার সমস্ত অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর জবাব,“এ সবের উত্তর দিতে গেলে কলতলার ঝগড়া হবে। আমি তাতে অংশ নিতে চাই না। এগুলো অসুস্থতার লক্ষণ।” বৈশাখীর দাবি তিনি এ সব বিষয় নিয়ে তাঁর আগ্রহ ছিল না, মাথাও ঘামাননি। তবে এ দিন এবিপি আনন্দে একান্ত সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময়েই হঠাৎ কেঁদেও ফেলেন। তিনি বলেন,‘‘শোভনবাবু মন্ত্রী নন, মেয়র নন সেটা তিনি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। তিনি স্বীকার করেন,“আমাকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে শোভনদাকে সব ছাড়তে হল। কষ্ট তো হবেই।”