প্রতীকী ছবি।
মত্ত অবস্থায় বেপরোয়া গতিতে এসে এক লরিচালককে ধাক্কা মেরেছিলেন একটি ছোট গাড়ির চালক। তাতে মৃত্যু হয় লরিচালকের। অভিযুক্ত গাড়িচালক ওই ঘটনার ১০ দিন পরেই জামিন পেয়ে যান। মঙ্গলবার তাঁর সেই জামিন বাতিল করলেন কলকাতার নগর দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারক। একই সঙ্গে তিনি কাল, শুক্রবারের মধ্যে অভিযুক্তকে আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশ দিতে গিয়ে আদালত মন্তব্য করেছে, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে প্রতিদিন শহরের পথে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটছে। তাতে অনেকের মৃত্যু হচ্ছে, অনেকে জখম হচ্ছেন। কিন্তু এমন ঘটনায় মাত্র ১০ দিনের মধ্যে জামিন মিললে তা সমাজে প্রভাব ফেলবে। নির্ধারিত দিনের মধ্যে অভিযুক্ত আত্মসমর্পণ না করলে তদন্তকারীরা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবেন বলেও অনুমতি দিয়েছে আদালত।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত ৫ ফেব্রুয়ারি হেস্টিংস থানা এলাকার বিদ্যাসাগর সেতুর এ জে সি বসু র্যাম্পে একটি লরি খারাপ হয়ে মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল। লরি থেকে নেমে মেরামতির কাজ করছিলেন চালক মিলনকান্তি জানা। তখন পিছন থেকে একটি গাড়ি তাঁকে ধাক্কা মারে। ছিটকে পড়েন মিলন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর মামলা রুজু করে গ্রেফতার করে গাড়িচালক কাসিফ হুমেইরকে। ১০ দিন পরে তিনি জামিন পান। এর পরেই অভিযুক্তের জামিন বাতিলের জন্য নগর দায়রা আদালতে যায় কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের ফেটাল স্কোয়াড।
আদালত সূত্রের খবর, টানা পাঁচ দিন নগর দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারকের এজলাসে এই মামলার শুনানি চলে। শুনানিতে মুখ্য সরকারি কৌঁসুলি দীপঙ্কর কুণ্ডু এবং তাঁর সহকারী সঞ্জয় সিংহ সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন রায়ের প্রতিলিপি দেখান। একই সঙ্গে পুলিশের তরফে আদালতে জানানো হয়, কাসিফের মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর প্রমাণ রয়েছে। এমনকি, জামিন পাওয়ার তিন মাস পরেও তাঁর শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া হয়নি। পাশাপাশি, ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের ভয় দেখানোর অভিযোগও ওঠে কাসিফের বিরুদ্ধে। মুখ্য সরকারি কৌঁসুলি জানান, বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে কারও মৃত্যু ঘটানোর পরে জামিন পাওয়ার অর্থ, ওই ঘটনাকেই আদতে উৎসাহ দেওয়া। যার প্রভাব পড়বে সমাজে। আদালতকে তাঁরা সেটাই জানিয়েছিলেন। আইনজীবী এবং পুলিশের একাংশের দাবি, আদালতের এই রায় বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনার বিচারের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী হয়ে থাকবে।
লালবাজার জানায়, এর আগে বাঘা যতীন উড়ালপুলে বেসরকারি বাসের ধাক্কায় মৃত্যু হয় এক স্কুটার-আরোহীর। ওই ঘটনাতেও জামিন পান অভিযুক্ত বাসচালক। গত মাসে সেই জামিনও বাতিল করেছে আদালত।