Baghbazar Fire

‘উদ্বোধন’-এর প্রথম সংখ্যা পোড়ার আশঙ্কা

বাগবাজার মায়ের বাড়ির ২০০ মিটার দূরে, প্রায় পাঁচ-ছ’কাঠা জায়গা জুড়ে রয়েছে চারতলা উদ্বোধন কার্যালয়।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৩৬
Share:

(বাঁ দিকে) ‘উদ্বোধন’ পত্রিকার প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদ। (ডান দিকে) উদ্বোধন কার্যালয়ের অফিসের পোড়া দরজা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

১৩০৫ বঙ্গাব্দের ১ মাঘ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল উদ্বোধন পত্রিকা। সম্পাদক ছিলেন স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দ। গেরুয়া রঙের কাগজে, কালো কালিতে ছাপা হয়েছিল প্রথম বর্ষের প্রথম সংখ্যার মূল প্রচ্ছদ। সেই পত্রিকার একটি কপি রাখা ছিল উদ্বোধন কার্যালয়ের তেতলায় সম্পাদকের অফিসে। বুধবারের আগুনে সেই ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেই পত্রিকাটি পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন সন্ন্যাসীরা।

Advertisement

শুধু তা-ই নয়। ১৯০৯ সালের মে মাসে বাগবাজারে প্রথম এসেছিলেন সারদাদেবী। সেই দিনটির স্মরণে প্রতি বছরই ওই তিথিতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ বছরের অনুষ্ঠানে ভগবতগীতার একটি খণ্ড, পুরনো ও সম্প্রতি উদ্বোধন পত্রিকায় প্রকাশিত সারদাদেবীর উপরে লেখার সংগ্রহ-সহ পাঁচটি বই প্রকাশের পরিকল্পনা করে উদ্বোধন কার্যালয়। সেই মতো প্রুফও দেখা ছিল। রামকৃষ্ণ মঠ, বাগবাজারের অধ্যক্ষ স্বামী নিত্যমুক্তানন্দ বলেন, ‘‘প্রুফগুলি পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তা হলে আবার ছাপাখানা থেকে এনে সংশোধন করতে হবে।’’

তবে স্বামী বিবেকানন্দের ‘উদ্বোধনের প্রস্তাবনা’, ‘রাজযোগ’, স্বামী ব্রহ্মানন্দের ‘পরমহংসদেবের উপদেশ’-সহ বিভিন্ন লেখা সংবলিত উদ্বোধন পত্রিকার প্রথম সংখ্যাটি বেলুড় মঠের গ্রন্থাগারে পুনরায় পাওয়ার আশা রাখছেন স্বামী নিত্যমুক্তানন্দ। এ ছাড়াও পত্রিকার শতবর্ষের সময়ে প্রথম সংখ্যাটি ডিজিটাল মাধ্যমে সংগৃহীত করা হয়েছিল। কিন্তু এখনকার পত্রিকায় প্রকাশের জন্য রাখা পাণ্ডুলিপি পুড়ে গেলে ফের লেখকদের থেকে তা আনাতে হবে বলে জানাচ্ছেন সন্ন্যাসীরা।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘সব হারিয়েও আমরা এখন ভিআইপি’

বাগবাজার মায়ের বাড়ির ২০০ মিটার দূরে, প্রায় পাঁচ-ছ’কাঠা জায়গা জুড়ে রয়েছে চারতলা উদ্বোধন কার্যালয়। একতলায় রয়েছে বই ও পত্রিকার স্টোর, কম্পিউটার সার্ভার রুম, টেলিফোন অপারেটরের ঘর, ক্যাশ অফিস, বইয়ের স্টল, ‘ডেসপ্যাচ’ বিভাগ ও মিটার বক্স। দোতলার উত্তর দিকে সারদানন্দ সভাগৃহ এবং দক্ষিণে হিসাব বিভাগ, প্রকাশনা ও প্রুফ বিভাগ। তেতলার উত্তরে গ্রন্থাগার, দক্ষিণে পত্রিকা সম্পাদকের অফিস, প্রকাশনা বিভাগ রয়েছে। চারতলায় সন্ন্যাসীদের কোয়ার্টার্স। ওই ভবন থেকে ১০ ফুট দূরে সীমানা প্রাচীরের গা-ঘেঁষেই রয়েছে বস্তি। আর ওই ১০ ফুট জায়গার মধ্যেই রয়েছে কার্যালয়ের জেনারেটর। বস্তির আগুনে জ্বলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উদ্বোধন কার্যালয়ের দোতলা ও তেতলার দক্ষিণ দিকের ঘরগুলি।

আরও পড়ুন: বাগবাজারের পর নিউটাউন, ঝুপড়িতে আগুন, আতঙ্কে রাস্তায় বহু মানুষ

বস্তিবাসীদের একাংশের অভিযোগ, উদ্বোধন কার্যালয়ের মিটার বক্স বা জেনারেটর থেকে আগুন ছড়ায়। স্বামী নিত্যমুক্তানন্দ বলেন, ‘‘মিটার বক্স বা জেনারেটরে আগুন লাগলে কার্যালয়ের একতলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হত। কিন্তু সেখানে কিছুই হয়নি।’’ ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসেব করা না গেলেও প্রাথমিক ভাবে তৈরি তালিকায় জানলার কাঠ ও কাচের প্রায় ৮০টি পাল্লা, এসি মেশিনের বাইরের সাতটি অংশ, অফিসের ২৫টি আসবাব, বই, গুরুত্বপূর্ণ নথি, জেনারেটর, বিদ্যুতের কেব্ল-সহ আরও কিছু জিনিস রয়েছে। প্রধান কার্যালয় বেলুড় মঠে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠানোর পরে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করা হবে। এ দিনও সেখানে বিদ্যুৎ না থাকায় হিসাব সংক্রান্ত নথি কম্পিউটারে কী রয়েছে, তা জানতে পারেননি সন্ন্যাসীরা।

রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ বলেন, ‘‘সৌভাগ্যবশত উদ্বোধন কার্যালয়ের বেশি ক্ষতি হওয়ার আগেই আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে মায়ের বাড়ি অক্ষত ও সুরক্ষিত রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্য আধিকারিকেরা যে সহায়তা করেছেন, সে জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আগুনে সর্বস্বান্ত বস্তিবাসীদের যথাসম্ভব সাহায্যের পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement