অদ্ভুত ছন্দপতন। ফাইল চিত্র।
পুজো মরসুমের ডুরান্ড, রোভার্স, শিল্ড— সবই এসেছে দখলে। তবে তার পরে এ যেন অদ্ভুত ছন্দপতন। তবে তাতে মন খারাপ দূরে থাক, মিটিমিটি হাসছেন পুজোকর্তারা। এ বারের পুজো প্রতিযোগিতার সাফল্যে সব থেকে তেজি অশ্বের এক জন— উত্তরের নলিন সরকার স্ট্রিট সর্বজনীনই ডাক পায়নি মুখ্যমন্ত্রীর সাধের কার্নিভালে। আজ, শনিবার রেড রোডে শহরের তাবড় সব পুজোর ভিড়ে তাদের দেখা যাবে না।
কেন এমন কাণ্ড? কয়েক বছরের রীতি অনুযায়ী, বিশ্ববাংলা শারদ সম্মানে বাছাই শ’খানেক পুজোর মধ্যে থেকেই কার্নিভালে যাওয়ার সুযোগ মেলে। কিন্তু পুজো প্রতিযোগিতায় মর্যাদার সব খেতাব জিতলেও বিশ্ববাংলার তালিকায় নলিন সরকারের ঠাঁই হয়নি। শহরের পুজো-রসিক শিল্পীদের অনেকেরই আফশোস, অবনীন্দ্রনাথের ভারতমাতার আদলে কী সুন্দর প্রতিমা গড়েছিলেন শিল্পী সুব্রত মৃধা। কেউ কেউ বলছেন, এমন প্রতিমা রেড রোডে না-থাকলে দক্ষিণ কলকাতার কিছু অকিঞ্চিৎকর পুজো কোন হিসাবে তালিকায় ঢুকেছে— তার কোনও যুক্তি নেই। কার্নিভালে সুযোগ না-পেয়ে শুক্রবারই সেই প্রতিমার বিসর্জন করে ফেলেছেন নলিন সরকারের উদ্যোক্তারা।
ইউনেস্কো স্বীকৃতির আবহে দুর্গাপুজোর শিল্পকে মেলে ধরতে মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ গুরুত্ব দেন পুজো-শেষের এই কার্নিভালকে। কিন্তু পুজোর চিরকেলে পরম্পরা মেনে ত্রয়োদশীর কার্নিভালে শামিল হতে চায় না অনেক সাবেক পুজোই। যেমন, কলকাতার পুজোর ধ্রুপদী নক্ষত্র বাগবাজার! কার্নিভালে সুযোগ পেলেও রীতি মেনে তারা প্রতিমা বিসর্জন দিয়েছে দশমীতেই। শোভাযাত্রার নির্দিষ্ট মাপের থেকে বাগবাজারের প্রতিমার উচ্চতা অবশ্য কিছুটা বেশিও হয়েছিল বলে জানাচ্ছেন পুজোকর্তারা। রীতি মেনেই কার্নিভালের আগে প্রতিমা বিসর্জন করে দিয়েছে দক্ষিণ কলকাতার মুদিয়ালিও। তবে শিবমন্দিরের পুজো উদ্বোধনে এসে মুখ্যমন্ত্রী কার্নিভালে অংশ নেওয়ার অনুরোধ করায় পুজোকর্তারা অবশ্য তা ফেলতে পারেননি।
এ বারের উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতির তালিকায় একডালিয়া এভারগ্রিনও। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণের পরের বছর রেড রোডে শোভাযাত্রার উৎসবে মন নেই তাদের। অধুনা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পুজো বলে খ্যাত, নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘও নেই এ বারের কার্নিভালে। তবে তাদের থিম-শিল্পী প্রদীপ দাসের কাজ প্রশংসা কুড়িয়েছে। পুজোকর্তারা অভিমানী, কাজটা প্রাপ্য মর্যাদা পেল না।
প্রতিমা বড় বলে কার্নিভালে যেতে পারছে না রাজডাঙা নব উদয় সঙ্ঘ। টালা প্রত্যয়ও তাদের ৪৩ ফুটের প্রতিমা একটি সঙ্গীতানুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে শুক্রবার মণ্ডপেই গলিয়ে ফেলেছে। তার বদলে ফাইবারের ছোট প্রতিমা নিয়ে এ বার কার্নিভালে অংশ নেবে তারা।