নিয়োগ মামলায় একের পর এক রায় বা নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে বার বার শিরোনামে এনেছে। — নিজস্ব চিত্র।
সমাজের তিমিরহরণের ব্রত নিয়েছেন। নানা সময়ে, নানা ভাবে এ কথা স্পষ্ট করে উচ্চারিত হয়েছে তাঁর মুখে। সেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত থেকে বছরের বেস্ট ২০২২-এর প্রথম স্বীকৃতি এবং সম্মান নিলেন যিনি, ঘটনাচক্রে তিনিও তিমির। তিমির মল্লিক। তবে এ তিমির দুর্জনের বিচরণক্ষেত্র নয়, এ তিমির রবীন্দ্রনাথের দেখা মাতৃআশ্রয়ের মতো নিবিড় রাত্রির স্নিগ্ধ ছায়া। এ তিমির প্রেমের মৃদু কুজনে আমোদিত।
নিয়োগ মামলায় একের পর এক রায় বা নির্দেশ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে বার বার শিরোনামে এনেছে। এ নিয়ে পক্ষে, বিপক্ষে বিভাজিত হয়েছে বাংলার রাজনীতি বা সমাজক্ষেত্র। তবে এই মামলার বাইরেও, কলকাতা হাই কোর্টে তাঁর অনেক স্বতঃপ্রণোদিত উদ্যোগ বুঝিয়ে দিয়েছে সমাজের প্রান্তিক মানুষের প্রতি, সাধারণ মানুষের প্রতি, তাঁর নিজস্ব ভাষায় ‘সিটিজ়েন’দের প্রতি, তাঁর দায়িত্ব এবং দায়বদ্ধতার কথা। কখনও দীর্ঘ কাল বিচারের আশায় বসে থাকা অসহায় মানুষের জন্য তিনি জেলা আদালতের বিচারককে নিজে ফোন করেন। কখনও এজলাসে দর্শকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের জন্য তাঁর কাছে ভর্ৎসিত হন পুলিশকর্মী। কখনও করুণ মুখে দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধাকে দেখে, তাঁকে কাছে ডেকে প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনি কিছু বলতে চান?’’ বৃদ্ধা বলেন। তাঁর সমস্যা সমাধানের পথ সুগম হয়। বছরের বেস্ট অনুষ্ঠানে এমন এক সাধারণ ‘সিটিজ়েন’-এর অ-সাধারণ কাজেরই স্বীকৃতিতে পুরস্কার তুলে দিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
তিমির ঝাড়গ্রাম শহরে বেসরকারি নার্সারি স্কুলের প্রধানশিক্ষক। করোনা অতিমারির জেরে লকডাউনে বন্ধ হয়ে যেতে বসেছিল স্কুল। ছাত্রছাত্রীদের আসা বন্ধ। অধিকাংশ অভিভাবকই স্কুলের ফি দিয়ে উঠতে পারেননি। স্কুল বাঁচাতে চপ আর মিষ্টির দোকান খোলেন বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর বছর তিপ্পান্নর তিমির। একে একে এগিয়ে আসেন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরাও। চপ ভাজা, মিষ্টি তৈরি করা থেকে শুরু করে বিক্রিবাটা, সব করতেন তাঁরাই। দোকানের লাভের টাকায় গভীর অনিশ্চয়তার সেই সময়ে সংসার চলে ১৫ জন শিক্ষক এবং ৬ জন শিক্ষাকর্মীর। পরবর্তী সময়ে স্কুল খুলেছে। কিন্তু বিপদের দিনে তৈরি সেই দোকান বন্ধ করেননি তিমির। এখন কারিগর রেখে চালান।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত থেকে পুরস্কার নিয়ে তিমির বলেন, ‘‘এখনও স্কুলে ক্লাস নিই। কমার্সের ছাত্রছাত্রীদের দীর্ঘ দিন পড়িয়েছি। আমার ছাত্র বড় ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছে। তবে এখনও আমার পড়ুয়ারা সবাই ছোট।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এই পুরস্কারের জন্য আনন্দবাজার অনলাইনকে ধন্যবাদ।’’