একটি মোটরবাইক দুর্ঘটনার পরে। শনিবার, উল্টোডাঙা উড়ালপুলে।ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
আয়োজনের ত্রুটি নেই। দিকে দিকে প্রচার চলছে, ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’। বড় বড় হোর্ডিং সাজছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে। সচেতনতা প্রচারে পথে নামছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও। পুলিশ বলছে, পথ দুর্ঘটনা রুখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে সব স্তরে। প্রশাসন সূত্রে দাবি, কমে গিয়েছে দুর্ঘটনার সংখ্যা। কিন্তু এই সব মৌখিক সচেতনতার বাইরে বেরিয়ে বাস্তবে চোখ পড়তেই ধাক্কা! বেপরোয়া গতিতে যান চলাচলে কোনও লাগাম নেই পথঘাটে। চলাফেরার ক্ষেত্রে সচেতন হওয়ার বিশেষ চেষ্টা দেখা যায় না পথচারীদের তরফেও। তাই দুর্ঘটনা-মুক্ত পথ তৈরির ভাবনাটাও জলেই যাচ্ছে। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার পর্যন্ত শহর ও শহরতলিতে ঘটে যাওয়া লাগাতার দুর্ঘটনা এই ব্যর্থতারই বড় উদাহরণ।
পুলিশ সূত্রের খবর, হাওড়া, সল্টলেক, নিউ টাউন এবং কলকাতা মিলিয়ে মোট আটটি দুর্ঘটনা ঘটেছে এইটুকু সময়ের মধ্যে। মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। আহত কম পক্ষে দশ। বস্তুত, দিনের পর দিন এমনটা ঘটেই চলেছে। খুব কম দিনই কাটছে, যে দিন একটিও দুর্ঘটনার খবর আসছে না।
অথচ এই শুক্রবারও সাংবাদিক সম্মেলনে কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (১) বিনীত গোয়েল দাবি করেছেন, শহরে উল্লেখযোগ্য হারে কমছে পথ দুর্ঘটনা। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মাস ছয়েক আগে কলকাতা পুলিশ ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ’ কর্মসূচি নিয়েছিল। তার জেরেই এই সাফল্য মিলেছে কলকাতা পুলিশের।’’ পরিসংখ্যানও দিলেন দুর্ঘটনা কমার। যে পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ সালে শহরের পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪৫০, যা ২০১৫ সালে কমে হয়েছিল ৪২২। সেটাই ২০১৬ সালে দাঁড়িয়েছে ৪০৭-এ। অর্থাৎ, দুর্ঘটনার সংখ্যা ২০১৫-এ যতটা কমেছিল, ততটাও কমেনি ২০১৬-এ।
শুক্রবার রাতেই নিউ টাউন এলাকার যাত্রাগাছি পুলিশ ক্যাম্পের কাছে একটি অটো ও মোটরবাইকের সংঘর্ষে আহত হন তিন জন। এর কিছু পরে ফের দুর্ঘটনা ঘটে হাওড়া-শিবপুর এলাকায় শালিমারের দেবেশ গাঙ্গুলি রোডে। পুলিশ জানায়, রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ লরির চাকায় পিষ্ট হন অনিলকুমার রায় (৫৩) নামে এক স্কুলশিক্ষক।
শনিবার সকালেই ফের বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় আহত তিন জন। পুলিশ জানায়, সকাল সওয়া আটটা নাগাদ ই এম বাইপাসে গড়িয়াগামী একটি অ্যাপ-ক্যাব অতিরিক্ত দ্রুত গতিতে ছুটছিল। রুবি মোড়ের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি সাইকেলে ধাক্কা মারে গাড়িটি। ছিটকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন সাইকেল আরোহী। এর পরে গাড়িটি একটি বাতিস্তম্ভে ধাক্কা মেরে রাস্তার ধারে গড়িয়ে পড়ে যায়। চালক ও এক আরোহী আহত হন। দুমড়ে যায় গাড়িটিও। তিন জনকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বেলা বাড়তেই ফের আসে দুর্ঘটনার খবর। এ বার সল্টলেক করুণাময়ীতে। পুলিশ জানিয়েছে, বেলা সওয়া এগারোটা নাগাদ গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে ময়ূখ ভবন থেকে সেক্টর ফাইভের দিকে সিগন্যাল ভেঙেই সটান বেরিয়ে যায় একটি গাড়ি। ইতিমধ্যে অন্য দিকের সিগন্যাল সবুজ হয়ে যাওয়ায় বিদ্যাসাগর থেকে করুণাময়ীগামী একটি গাড়ি এসে ধাক্কা মারে সিগন্যাল ভাঙা গাড়িটিকে। গাড়িটি উল্টে গিয়ে এক পাক ঘুরে যায়। সিট বেল্ট থাকার কারণে কোনও মতে প্রাণে বেঁচে যান গাড়ির চালক। ওই একই সময়ে সল্টলেকের ই সি ব্লকে সংঘর্ষ হয় দু’টি গাড়ির। জখম এক জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
দুপুরের দিকে আবারও সিগন্যাল না মানার বলি হয়েছেন এক যুবক। পুলিশ জানিয়েছে, সিআইটি রোড ও বাগমারি রোডের মোড়ে সিগন্যাল ভেঙে একটি মোটরবাইককে পিছন থেকে ধাক্কা মারে একটি গাড়ি। মোটরবাইকটির আরোহী এক যুবক ছিটকে পড়ে যান। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃতের নাম বিনীত চৌহ্বান (১৯)। তাঁর বাড়ি মানিকতলা বাজার এলাকায়। ঘাতক গাড়িটির খোঁজ করছে পুলিশ।
এর কিছু পরেই দুপুরে হাইড রোডের জৈন কুঞ্জের কাছে একটি স্কুটারে ধাক্কা মারে একটি কন্টেনার। ওই স্কুটার আরোহীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম মীরপুরি পবন সুনীল (২৭)। তিনি বিশাখাপত্তনমের বাসিন্দা, পেশায় মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। পরীক্ষা দিতে কলকাতায় এসেছিলেন। এ দিনই বিকেলে আবার দ্বিতীয় হুগলি সেতুর উপরে একটি ছোট গাড়িকে ধাক্কা মারে এক সরকারি বাস। পুলিশের দাবি, এই দুর্ঘটনায় কেউ আহত হননি। বিকেলে উল্টোডাঙা উড়ালপুলের দেওয়ালে ধাক্কা মেরে উল্টে যায় দ্রুত গতিতে চলা একটি বাইক। আহত চালক ও আরোহীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।