স্তব্ধ: বন্ধ পরিষেবা, পর পর দাঁড়িয়ে অটো। সোমবার, উল্টোডাঙায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
এত দিন উল্টোডাঙার একটি বিশেষ রাস্তায় পৌঁছে দিক পরিবর্তন করতে অটো ঘোরাতেন চালকেরা। যানজট এড়াতে সম্প্রতি সেই দিক পরিবর্তনের জায়গা বদলানোর নির্দেশ দিয়েছিল পুলিশ। এর প্রতিবাদে সোমবার, সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনেই সকাল থেকে অটো বন্ধ রাখলেন চালকেরা। ফলে অফিসের ব্যস্ত সময়ে দুর্ভোগে পড়লেন অসংখ্য নিত্যযাত্রী। পুলিশ এসে পরিষেবা চালুর চেষ্টা করলেও অটোচালকেরা রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত পুলিশের তরফে নতুন আর একটি জায়গা নির্ধারিত করার পরে প্রাথমিক ভাবে সেখান থেকে গাড়ির ঘোরাতে সম্মত হন চালকেরা। এর পরে দুপুরে পরিষেবা ফের চালু হয়।
লেক টাউন, বাগুইআটি, সল্টলেক-সহ একাধিক জায়গার অটো ছাড়ে উল্টোডাঙার স্ট্যান্ড থেকে। অটোচালকেরা জানান, ওই সমস্ত জায়গা থেকে নিয়ে আসা যাত্রীদের উল্টোডাঙায় নামিয়ে তাঁরা ১৫ নম্বর বাস টার্মিনাসের সামনে থেকে অটো ঘোরাতেন। তার পরে উল্টোডাঙা স্ট্যান্ডে পৌঁছতেন। শেষ ১৮ বছর ধরে এ ভাবেই চলে আসছিল।
বাগুইআটি–উল্টোডাঙা রুটের অটোচালকদের সংগঠনের সদস্য সোমনাথ দত্ত জানালেন, দিন দুই আগে উল্টোডাঙা ট্র্যাফিক গার্ডের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, উল্টোডাঙায় যাত্রী নামানোর পরে দু’কিলোমিটার দূরে মুচিবাজারের কাছে গিয়ে রাস্তার দিক পরিবর্তন করতে হবে। সোমনাথের কথায়, ‘‘অটো ঘোরাতে অতটা দূর যেতে হলে তো বাড়তি তেল বা গ্যাস পুড়বে। অন্য রুটের অটো থাকায় আমরা ওই জায়গায় যাত্রীও তুলতে পারব না। দু’কিলোমিটার ফাঁকা অটো নিয়ে যেতে হবে। এতে আমাদের আর্থিক ক্ষতি হবে। আমরা রাস্তা অবরোধ করিনি। শুধু পরিষেবা বন্ধ রেখে শান্তিপূর্ণ ভাবে পুলিশের নির্দেশের প্রতিবাদ করেছি।’’
অটোচালকেরা জানান, উল্টোডাঙা থেকে শোভাবাজার, বি কে পাল কিংবা আহিরীটোলার অটো রয়েছে। তারাই মুচিবাজারের যাত্রী তোলে। এক অটোচালকের কথায়, ‘‘ওই দু’কিলোমিটার যাওয়ার খরচ তুলতে আমরা যদি যাত্রী তুলি, তা হলে শোভাবাজারগামী অটোচালকদের সঙ্গে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হবে। তাই গোলমাল এড়াতে আমরা এ দিন গাড়ি বন্ধ রাখি।’’
অটোচালকেরা জানান, এ দিন পরিষেবা বন্ধ রাখার পরে বেলার দিকে উল্টোডাঙা ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশের সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হয়। সোমনাথ বলেন, ‘‘বৈঠকে আপাতত স্থির হয়েছে, ১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের ৫০ গজ দূরে একটি জায়গা থেকে আমরা অটো ঘুরিয়ে স্ট্যান্ডের দিকে আসব। আগামী সোমবার পর্যন্ত এ ভাবে চলবে। তবে ১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের সামনে দিয়ে অটো ঘোরানোর দাবি থেকে আমরা সরছি না।’’
কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগ জানিয়েছে, যানজট এড়াতেই মুচিবাজার থেকে অটো ঘোরাতে বলা হয়েছিল চালকদের। কিন্তু এ দিনের বৈঠকের পরে ঠিক হয়েছে, ১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের ৫০ গজ দূর থেকেই অটো ঘোরানো যাবে। সেই মতো এ দিন থেকেই ওই জায়গায় গিয়ে অটো ঘোরাতে চালকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সমস্ত রুট মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার অটো চলাচল করে উল্টোডাঙা থেকে। নতুন জায়গা থেকে অটো ঘোরালে যানজট হচ্ছে কি না, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে। যানজটের সমস্যা যদি এড়ানো সম্ভব না হয়, তবে অন্য বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবা হবে।’’