কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে ডাই হয়ে পড়ে আর্বজনা। —নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রীর আসার খবরে তড়িঘড়ি চুন দিয়ে পান-গুটখার পিকের দাগ ঢাকার চেষ্টা হয়েছিল বলে অভিযোগ। তার পরেও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অপরিচ্ছন্নতার ছবি নজর এড়ায়নি স্বাস্থ্যসচিবের। এ জন্য তোপের মুখে পড়তে হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। ঘটনার অভ্যন্তরীণ তদন্তে উঠে এসেছে আধিকারিকদের একাংশের উদাসীনতা ও গয়ংগচ্ছ মনোভাব। যা নিয়ে বেজায় অস্বস্তিতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
দেশের প্রথম মেডিক্যাল কলেজের ‘অপরিচ্ছন্ন’ তকমা ঘোচাতে শনিবার বৈঠকে বসেছিল হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি। সেখানে এ নিয়ে বেশ কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, সেগুলি জানানো হবে স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ স্তরে। তবে হাসপাতালের অপরিচ্ছন্নতার বিষয়ে কর্মীদের একাংশকেও দুষছেন কর্তৃপক্ষ। এক কর্তার কথায়, ‘‘আগে নিজের ঘরকে শোধরাতে হবে, তার পরে বাইরের লোকজনকে বলা প্রয়োজন।’’ তিনি জানান, হাসপাতালের কর্মীদের একাংশই দেওয়ালে পান-গুটখার পিক ফেলেন, চত্বর জুড়ে সারমেয়দের উচ্ছিষ্ট খেতে দেন। কেউ কেউ দস্তানা খুলে রাস্তায় ফেলেন। ওই কর্তার কথায়, ‘‘এ হেন অবস্থায় রোগীর পরিজনদের শুধু দোষ দিয়ে লাভ নেই।’’
অন্য দিকে, হাসপাতালের আধিকারিকদের একাংশের নজরদারিতে ফাঁক থাকছে বলেও ওই আলোচনায় উঠে এসেছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য ভবনের পর্যবেক্ষণেও এসেছে বলেই খবর। হাসপাতাল সূত্রের খবর, কলকাতা মেডিক্যাল চত্বরে প্রতিদিন সাফাইয়ের জন্য অন্তত ২৮ জন পুরকর্মীর আসার কথা। এই কাজের জন্য বছরে প্রায় ২ কোটি টাকা পুরসভাকে দিতে হয়। কিন্তু বাস্তবে আসেন মেরেকেটে ৪-৫ জন পুরকর্মী। তাঁরাও যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না বলেই অভিযোগ। তবুও ‘সব কিছু ঠিক মতো হচ্ছে’— এই মর্মে প্রতিদিন হাসপাতালের উচ্চপদস্থ এক আধিকারিক এত দিন ধরে ছাড়পত্র দিয়ে এসেছেন বলে স্বাস্থ্য ভবনের পর্যবেক্ষণ। কেন এমন হয়েছে, তা নিয়েও স্বাস্থ্যসচিব প্রশ্ন তুলেছেন বলে খবর।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা) দেবব্রত মজুমদার বলেন, ‘‘শহরের সমস্ত সরকারি হাসপাতালের ভিতরের রাস্তা প্রতিদিন ঠিক মতো সাফাই করা হয়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজও তার ব্যতিক্রম নয়। যে অভিযোগ উঠেছে, তা ঠিক নয়।’’ অন্য দিকে, হাসপাতালের ভবনগুলি সাফাইয়ের জন্য যে সংস্থার সঙ্গে চুক্তি রয়েছে, সেখানেও গরমিল হচ্ছে। চুলচেরা বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, একটি ভবনের সাফাইয়ের দায়িত্বে থাকা কর্মীকে আরও দু’টি ভবনের দায়িত্বে দেখিয়ে বিল করা হচ্ছিল। হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, ‘‘কাজে নজরদারির জন্য বিভিন্ন স্তরের আধিকারিকদের আরও সতর্ক হতে হবে।’’
সম্প্রতি কলকাতা মেডিক্যালে ভর্তি সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমনকে দেখতে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর আসার আগেই হাসপাতালে ঢোকেন স্বাস্থ্যসচিব। আর তখনই এক নম্বর গেটের আশপাশে ও হাসপাতাল চত্বরের অপরিচ্ছন্নতা তাঁর চোখে পড়ে। হাসপাতালের বিভিন্ন ভবনের পিছনে জমা চিকিৎসা-বর্জ্য, ব্যবহৃত বিছানা পড়ে থাকার বিষয়টিও উঠে আসে।
রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রতিটি ভবন সাফাইয়ের দায়িত্ব পৃথক সংস্থাকে দেওয়া হবে। ভবনের নজরদারির দায়িত্ব ভাগ করা হবে ডেপুটি ও সহকারী মেডিক্যাল সুপারদের মধ্যে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ও সাফাইকর্মী মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিনশো শূন্য পদ পূরণ করা হবে। রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান, বিধায়ক-চিকিৎসক সুদীপ্ত রায় বলেন, ‘‘পুরসভার পাশাপাশি আমরাও সাফাই নেটওয়ার্ক তৈরির কথা ভাবছি। যাতে বেসরকারি হাসপাতালের মতো এখানেও সব সময়ে পরিচ্ছন্ন রাখা যায়। বাকি বিষয়গুলিও দেখা হচ্ছে।’’