জ্যোতিষী জয়ন্ত শাস্ত্রীর বাড়ির দোতলার দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। —নিজস্ব চিত্র।
রহস্যজনক আগুনে মৃত্যু হল কলকাতার পরিচিত জ্যোতিষী জয়ন্ত শাস্ত্রীর। বাংলার বিভিন্ন বৈদ্যুতিন চ্যানেলে নিয়মিত অনুষ্ঠান করতেন মধ্যবয়সি এই জ্যোতিষী। রবিবার সকালে কেষ্টপুরে নিজের বাড়ির দোতলায় তাঁকে আংশিক দগ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। বাইপাসের ধারে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
কেষ্টপুর থানা এলাকার বারোয়ারি তলায় তাঁর তিনতলা বাড়ি। দোতলায় একাই থাকতেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, রবিবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ তাঁরা জয়ন্তের বাড়ির দোতলায় ধোঁয়া এবং আগুন দেখতে পান। তাঁরাই দলকল এবং পুলিশে খবর দেন। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘দোতলার বারান্দায় দাউদাউ করে আগুন জ্বলছিল। কিন্তু বাড়ির সমস্ত দরজা তালাবন্ধ থাকায় আমরা কিছু করতে পারছিলাম না।” বাসিন্দারা তাঁদের মতো নীচ থেকে জল দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হয়।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন পৌঁছয়। দমকলকর্মীরা তালা ভেঙে দোতলায় গিয়ে প্রথমে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। দেখা যায়, দোতলায় খাওয়ার ঘরের মেঝেতে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছেন জয়ন্ত। তাঁর হাতে এবং পায়ে আগুনে পোড়ার চিহ্ন। জয়ন্তর বাড়ি থেকে অল্প দূরেই থাকেন তাঁর গাড়ির চালক শুভঙ্কর রায়। তিনি পড়শিদের মুখে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি বলেন, ‘‘ বাড়ির চাবি আমার কাছে দেওয়া থাকে। কারণ সকালে জয়ন্তর রাঁধুনি এবং পরিচারিকা আসেন।” শুভঙ্কর দমকলকর্মীদের সঙ্গে উপরে দোতলায় যান। তিনি বলেন, ‘‘গোটা ফ্ল্যাট ঘন ধোঁয়ায় ভরা ছিল। কিছু দেখা যাচ্ছিল না।” জয়ন্তকে উদ্ধার করে বাইপাসের ধারে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসকরা পুলিশকে জানিয়েছেন, অগ্নিদগ্ধ হয়ে নয়, শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই জ্যোতিষীর।
আরও পড়ুন: ‘রাজনৈতিক চাপ সামলে কি ঠেকানো যাবে বাজি-দূষণ’
আরও পড়ুন: বাড়ছে যাত্রী দুর্ভোগ, সকাল-বিকেলে লোকাল ট্রেন চালু করতে চেয়ে রেলকে চিঠি রাজ্যের
পুলিশ এবং দলকলকর্মীদেরও প্রাথমিক অনুমান, সিগারেট থেকে কোনও ভাবে জয়ন্তর খাওয়ার ঘরে রাখা সোফাতে আগুন লেগে যায়। সেই আগুন থেকে ঘরে ঘন ধোঁয়া তৈরি হয়। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, গভীর রাত পর্যন্ত সিগারেট খেয়েছেন তিনি। অসাবধানতাবশত সেই সিগারেট থেকে আগুন লেগে যায়। তদন্তকারীদের ধারণা, আগুন অনেকটা ছড়িয়ে পড়ার পর সম্ভবত ঘুম ভাঙে তাঁর। ধোঁয়ার মধ্যে আগুন নেভাতে গিয়ে হাত পা পুড়িয়ে ফেলেন তিনি। তার মধ্যেই ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। তবে তদন্তকারীরা এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চান না। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট পেলে তবেই মৃত্যুর কারণ এবং আগুন নাগার কারণ স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা।