কাশীপুর রেল কোয়ার্টার্সের ফাঁকা ঘরে পড়ে রয়েছে ভাঙা মদের বোতল। শনিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
একের পর এক লাল রঙা রেল কোয়ার্টার্স। তার কয়েকটিতে মানুষ থাকেন, কয়েকটি আবার পড়ে রয়েছে পরিত্যক্ত হিসেবে। কিছুটা দূরেই চলছে নির্মীয়মাণ টালা সেতুর কাজ। পাঁচিল ঘেরা গোটা রেল কোয়ার্টার্সে মোট বাসিন্দার সংখ্যাও হাতে গোনা। দিনের বেলা সেখানকার বাসিন্দাদের পাশাপাশি আশপাশের কমবয়সিরা এসে সামনের মাঠে খেলাধুলো করলেও সন্ধ্যা নামতেই বদলে যায় গোটা এলাকার চেহারা। কাশীপুর ঘোষবাগানের এই এলাকা জুড়ে নানা অসামাজিক কাজের আসর বসে বলেই স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ। অর্জুন চৌরাসিয়ার মৃত্যুর পরেই স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ এই অসামাজিক কাজের বিরুদ্ধেও মুখ খুলছেন। সরব হচ্ছেন পুলিশি নজরদারি নিয়েও।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সন্ধ্যা নামতেই ঘরের বাইরে বার হওয়া কার্যত দুষ্কর হয়ে ওঠে এই রেল কোয়ার্টার্স চত্বরে। বিভিন্ন জায়গায় বসে চলে মদ্যপান। এ ছাড়া, জুয়ার আসর থেকে শুরু করে নানা অসামাজিক কাজ হয় বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ। প্রতিবাদ করলেই জোটে হুমকি। রাত যত গভীর হয়, ততই এই অসামাজিক কাজকর্মের দৌরাত্ম্য বাড়তে থাকে বলে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ মিলল ঘটনাস্থলের আশপাশে ঘুরতেই। কাশীপুরের রেল কোয়ার্টার্সের যে ঘর থেকে অর্জুন চৌরাসিয়ার দেহ উদ্ধার হয়েছিল, তার উল্টো দিকেই রয়েছে আরও একটি রেল কোয়ার্টার্স। সেই পরিত্যক্ত কোয়ার্টার্সের পিছনে গিয়ে উঁকি দিতেই চোখে পড়ল একাধিক মদের বোতল। মাথা নিচু করে পিছনের দিক থেকে অন্ধকার ঘরের ভিতরে ঢুকতেই এই ছবি আরও পরিষ্কার হল। পরিত্যক্ত ঘরের ভিতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ভাঙা মদের বোতল থেকে শুরু করে আরও অনেক কিছু।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাত হলেই সেখানে যারা ভিড় করে, তাদের অধিকাংশই এলাকার বাসিন্দা নয়। মধ্যরাত পর্যন্ত চলে এই ‘বহিরাগতদের’ আড্ডা। তাদের দাপটে রাতে মেয়েরাও ঘরের বাইরে পা রাখতে পারেন না। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘দিনের পর দিন এমনই চলছে। প্রতিবাদ করার সাহস নেই কারও। এদের সংখ্যা এতই বেশি যে, আমাদের কিছুই বলার থাকে না। ঝামেলা থেকে বাঁচতে আমরা সন্ধ্যার পরে তাই ঘরে নিজেদের বন্দি করে নিই।’’ একই কথা উঠে এল রেল কোয়ার্টার্সের বাসিন্দা এক মহিলার কথাতেও। তাঁর কথায়, ‘‘রাত হলেই মাঝেমধ্যে চিৎকার-চেঁচামেচি কানে আসে। প্রায়ই নানা গোলমাল হয়। বেশির ভাগই সব অন্য এলাকার লোকজন। কিন্তু বাইরে বেরিয়ে যে আমরা প্রতিবাদ করব, সেই সাহস আমাদের থাকে না।’’
তবে এই দুষ্কৃতী কার্যকলাপের সঙ্গে অর্জুন চৌরাসিয়ার মৃত্যুর কোনও যোগ আছে কি না, তা নিয়ে স্থানীয়েরা মুখ খুলতে নারাজ। তবে তাঁরা এলাকা জুড়ে নানা রকম অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধ করার দাবি তুলেছেন। সরব হচ্ছেন পুলিশি নজরদারি বাড়ানোর দাবিতেও।