—প্রতীকী চিত্র।
ফাঁকা ঘরে দীর্ঘ সময় ধরে জ্বলেছিল গ্যাস। গায়ে আগুন দেওয়ারও চেষ্টা করেছিলেন যদুনাথ মিত্র। বৃদ্ধ চিকিৎসকের কৃতকর্মের জেরে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।
সল্টলেকের জিসি-৩০ নম্বর বাড়িতে এক বৃদ্ধাকে খুনের ঘটনার তদন্ত শুরু করে এমনই তথ্য পেয়েছে পুলিশ। ওই বাড়ি থেকে বুধবার সকালে মন্দিরা মিত্র নামে সেই বৃদ্ধার ছুরিতে ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। ছুরিতে ক্ষতবিক্ষত ও খানিকটা দগ্ধ অবস্থায় তাঁর স্বামী যদুনাথকেও উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিনই পুলিশ জানায়, স্ত্রীকে খুন করে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন যদুনাথ। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মন্দিরার চিৎকার শুনতে পান তাঁদের উল্টো দিকের বাড়ির বাসিন্দারা। কিন্তু ওই বাড়িতে ঝগড়া হচ্ছে মনে করে তাঁরা বিষয়টি এড়িয়ে যান।
তদন্তকারীরা জানান, মন্দিরা খুন হয়েছিলেন মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে। তাঁর দেহ উদ্ধার হয়েছে ঘটনার প্রায় ১২ ঘণ্টা পরে। শরীরে অজস্র বার ছুরি দিয়ে আঘাত করার চিহ্ন ছিল। আপাতত যদুনাথের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করেছে পুলিশ। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় তারা। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, যদুনাথ নিজেকে ছুরি দিয়ে আঘাত করার পাশাপাশি অনেকগুলি ঘুমের ওষুধও খেয়েছিলেন। পুলিশের দাবি, যদুনাথ ও মন্দিরা, দু’জনেই ঘুমের ওষুধ খেতেন। ঘুমের ওষুধের অনেকগুলি পাতাও উদ্ধার হয়েছে ওই বাড়ি থেকে। স্ত্রীকেও যদুনাথ ঘুমের ওষুধ খাইয়েছিলেন কি না, তা মন্দিরার ভিসেরা পরীক্ষার পরেই জানা যাবে। তাঁর দেহের ময়না তদন্তের রিপোর্টেরও অপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া, উদ্ধার হয়েছে একটি কাটারিও।তদন্তকারীদের অনুমান, কাটারি দিয়েও স্ত্রীর মাথায় আঘাত করেছিলেন যদুনাথ।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার সকালের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে রান্নাঘরে জ্বলেছিল গ্যাস। রাতে খুন ও আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনার পরে সেই গ্যাস নেভানো হয় পরের দিন সকালে। ওই আগুন থেকে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল বলে মনে করছে পুলিশ। বৃদ্ধ যদুনাথের শরীরে পোড়ার দাগ আগুন থেকেই হয়েছে বলে জেনেছে পুলিশ। তাঁকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তিনি আপাতত স্থিতিশীল। তাঁকে মনোরোগ চিকিৎসককে দিয়ে পরীক্ষা করানো হবে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
তদন্তকারীরা জানান, বুধবার ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ জিসি-৩০ নম্বর বাড়িতে ঢুকে দেখে, রান্নাঘরে গ্যাস জ্বলছে। ওই ঘর থেকে অ্যাসিডের বোতল, আনাজ কাটার ছুরি পাওয়া গিয়েছিল। বৃদ্ধের শরীরে পোড়া দাগ দেখে এবং তাঁকে আচ্ছন্ন অবস্থায় উদ্ধারের পরে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ মনে করেছিল যদুনাথ অ্যাসিড খেয়েছেন। কিন্তু তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে ডাক্তারি পরীক্ষায় দেখা যায়, সেই পোড়ার দাগ অ্যাসিডের কারণে নয়। চিকিৎসকেরা পুলিশকে সেটাই জানান। তাতে ধন্দে পড়েন তদন্তকারীরা।
তদন্তকারীরা জানান, রান্নাঘরে জ্বলতে থাকা গ্যাসের কথা তখন চিকিৎসকদের জানানো হয়। তাঁরা ফের যদুনাথের ক্ষত পরীক্ষা করে জানান, ওই আঘাত আগুনে পোড়ার ফলে হয়েছে। পুলিশের ধারণা, ঘুমের ওষুধের ঘোর কেটে যাওয়ার পরে যদুনাথ গায়ে আগুন দিয়ে এবং নিজেকে ছুরিবিদ্ধ করে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন। ওই অবস্থায় তিনি গ্যাস বন্ধ করার কথা ভাবেননি। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ঘটনা
ঘটেছে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। দেহ উদ্ধার হয় পরদিন সকালে। দীর্ঘ সময় ধরে গ্যাস জ্বলেছে। সিলিন্ডার ফেটে বা আগুন লেগে ওই রাতে বড় দুর্ঘটনারও আশঙ্কা ছিল। ওই বৃদ্ধের বাড়ির নীচে ভাড়াটে থাকেন। আশপাশেও বাড়ি রয়েছে।’’