—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
পড়ুয়ারা স্কুলে আসছে শুধু পরীক্ষার সময়ে। অন্য সময়ে অনুপস্থিত থাকছে তাদের একটি বড় অংশ। কিন্তু কেন?
শহরের বহু স্কুলেই এখন চলছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট এবং অন্যান্য শ্রেণির তৃতীয় সামগ্রিক মূল্যায়ন। পরীক্ষার সময়ে দেখা যাচ্ছে, স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার অনেক বেশি। কিন্তু সাধারণ সময়ে ক্লাসে আসছে না অনেকেই। যা দেখে চিন্তিত শিক্ষকদের প্রশ্ন, তা হলে কি পরীক্ষার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে স্কুলের উপরে নির্ভরতা কমছে? উত্তর কলকাতার কয়েকটি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, পরিস্থিতি এমনই যে, পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীদের দেখেও তাদের নাম মনে পড়ছে না প্রথমে।
বেলগাছিয়া মনোহর অ্যাকাডেমির শিক্ষিকা সুমনা সেনগুপ্ত বললেন, ‘‘যে সমস্ত পড়ুয়া দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে আসছে না, তাদের অভিভাবকদের ডেকে পাঠিয়েছি। তাঁরা জানিয়েছেন, ছেলেমেয়েরা যাতে স্কুলে আসে, তা নিশ্চিত করবেন তাঁরা। কিন্তু তার পরেও উপস্থিতির হার কম।’’ সুমনা বলেন, ‘‘কিছু পড়ুয়াকে ব্যক্তিগত ভাবে জিজ্ঞাসা করে জেনেছি, তারা প্রাইভেট টিউশন নিচ্ছে। তাই পরীক্ষার প্রস্তুতিতে অসুবিধা হচ্ছে না। স্কুলে নিয়মিত না আসায় পড়ুয়াদের মধ্যে বন্ধুত্বও তৈরি হচ্ছে না। মিড-ডে মিলের টানেও অনেকে স্কুলে আসে। কিন্তু কলকাতা শহরের স্কুলগুলিতে এই টান জেলার স্কুলের পড়ুয়াদের তুলনায় কম।’’
পার্ক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বললেন, ‘‘স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা যে কম নয়, তা পরীক্ষাগুলিতে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সকলেই আসছে পরীক্ষা দিতে। কিন্তু অনেক সময়েই দেখা যাচ্ছে, ক্লাসে পড়ুয়ার সংখ্যা কম। আমাদের দু’জন শিক্ষক প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত অভিভাবকদের ফোন করে জানতে চান, কেন তাঁদের ছেলেরা স্কুলে আসেনি? এমনকি, পড়ুয়াদের বাড়িতে গিয়েও দেখা হয়, কেন তারা আসছে না। স্কুলের প্রতি আস্থা কমে প্রাইভেট টিউশন-নির্ভরতা বাড়ছে কি না, তা খতিয়ে দেখছি।’’ শিক্ষকদের একাংশের মতে, কোভিডের পরে স্কুলের সমস্ত শ্রেণিতেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ চালু হয়েছে। সেখানেই পরীক্ষার সূচি-সহ সব গুরুত্বপূর্ণ নোটিস পাঠানো হয়। ফলে স্কুলে না গিয়েও স্কুলের খবর পেতে সমস্যা হচ্ছে না তাদের।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা শিক্ষাবিদ অভীক মজুমদারের মতে, ‘‘স্কুলে কম গিয়ে প্রাইভেট টিউশনের উপরে নির্ভর করার প্রবণতা বেড়েছে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়াদের। নিচু ক্লাসের পড়ুয়াদের মধ্যে এই প্রাইভেট টিউশন-নির্ভরতা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়াদের থেকে অনেকটাই কম। তবে, কোভিডের পরে স্কুলে না যাওয়ার প্রবণতা সব ক্লাসের পড়ুয়াদের মধ্যেই বেড়ে থাকতে পারে। কোভিডের পরে অনলাইন-নির্ভর পড়াশোনায় উৎসাহী পড়ুয়ারা কি ক্লাসে পড়ার উৎসাহ হারাচ্ছে? ক্লাসে শিক্ষকদর পড়া শোনার ধৈর্য কি হারাচ্ছে তারা? কোভিডের পরে অনলাইন-নির্ভরতা পড়ুয়াদের মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে কি না, সেটা ভেবে দেখতে হবে।’’ তবে অভীকের মতে, ‘‘শিক্ষক-শিক্ষিকারা উদ্যোগী হচ্ছেন। আশা করা যায়, আগের মতোই উপস্থিতি বাড়বে স্কুলে। শুধু পড়াশোনা নয়, একসঙ্গে খেলাধুলো ও বন্ধুত্ব স্থাপনের জন্যও স্কুলে পড়ুয়াদের আসাটা জরুরি।’’