—প্রতীকী চিত্র।
বড়দিন এবং বর্ষবরণের আগে ভয় ধরাচ্ছে শহরে পথ দুর্ঘটনায় একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা। পরিস্থিতি এমনই যে, গত বছরের ডিসেম্বরে শহরে পথ দুর্ঘটনায় যত জনের মৃত্যু হয়েছিল, তার চেয়েও বেশি মানুষ গত এক সপ্তাহে পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। লালবাজারের সতর্কতার পরেও পর পর দুর্ঘটনা এবং মৃত্যু প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, বছর শেষের সপ্তাহে গতির দৌরাত্ম্যে আদৌ লাগাম পরানো যাবে কি?
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে শহরে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ১১ জনের। মৃতদের মধ্যে মোটরবাইকের চালক ও আরোহীদের পাশাপাশি পথচারীরাও ছিলেন। চলতি ডিসেম্বর শেষ হতে এখনও এক সপ্তাহ বাকি থাকলেও মৃতের সংখ্যার নিরিখে গত ডিসেম্বরকে ছাপিয়ে গিয়েছে তা। শুধু গত এক সপ্তাহেই এ শহরে পথ দুর্ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা গত বছরের গোটা ডিসেম্বরের থেকেও বেশি। অধিকাংশ দুর্ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ দেখেছে, বাইক বা স্কুটারের বেপরোয়া গতিই অঘটনের মূল কারণ।
বছরের শেষ মাসে শহরে বেপরোয়া যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতিটি ট্র্যাফিক গার্ডকে অবশ্য আগেই নির্দেশ দিয়েছিল লালবাজার। প্রতিটি রাস্তায় নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি নাকা তল্লাশির উপরেও জোর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও শহরে একের পর এক দুর্ঘটনা এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, যা বড়দিন এবং বর্ষবরণের আগে পথের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ রাস্তায় নেমে বেপরোয়া গাড়ির বিরুদ্ধে শক্ত হাতে অভিযান না চালালে আদৌ কি আটকানো যাবে দুর্ঘটনা?
এমনিতেই বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় ডিসেম্বরের এই ক’দিন শহরের রাস্তায় বেপরোয়া চালকদের দৌরাত্ম্য বাড়ে। উৎসবের নামে রাস্তায় নেমে ট্র্যাফিক বিধি ভাঙার একের পর এক ঘটনা ঘটে। এমনকি, মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর ভূরি ভূরি অভিযোগও সামনে আসে। রাত হলেই শহরের একাধিক রাস্তায় মত্ত চালকদের দৌরাত্ম্য বাড়ে। বহু ক্ষেত্রে পুলিশের চোখের সামনে ট্র্যাফিক বিধি ভাঙার ঘটনা ঘটলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে অনেকের দাবি। পুলিশের একাংশের এই ‘নরম’ মনোভাব বড়দিন ও বর্ষবরণের আগে আশঙ্কা আরও বাড়াচ্ছে। ইএম বাইপাসে কর্তব্যরত এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী যদিও এই ‘নরম পুলিশ’ প্রসঙ্গে বলছেন, ‘‘বড় কর্তারা তো রাস্তায় নেমে অভিযান চালাতে বলেন। কিন্তু রাতে ওই গতির সামনে দাঁড়াবে কে? প্রাণ বাঁচিয়ে যা করার, সেটাই করা হয়।’’
লালবাজারের তরফে যদিও কড়া হাতে পথের বিধি বলবৎ করা হবে বলেই জানানো হয়েছে। এমনকি, বড়দিনের আগে থেকেই বিশেষ নজরদারি চলছে বলে পুলিশের দাবি। আগামী কয়েক দিনে তা আরও বাড়বে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘দুর্ঘটনা কমাতে সারা বছরই পুলিশের তরফে নানা প্রচেষ্টা থাকে। বছর শেষের উৎসবকে কেন্দ্র করে পথের বিধি ভাঙার প্রবণতা যাতে লাগাম না ছাড়ায়, সে দিকেও নজর থাকবে। সেই মতো নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’