—ফাইল চিত্র।
করোনা গেম থেকে অক্সিমিটার মোবাইল অ্যাপ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানো থেকে বাড়ি বসেই গাড়ি বা মোটরবাইক কেনার টোপ, এ সব তো ছিলই! প্রতারকদের নজরে অবশেষে মেট্রোর স্মার্ট কার্ড! নতুন এই প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে চিন্তিত লালবাজার।
স্মার্ট কার্ড রিচার্জ করিয়ে দেওয়ার নামে গত কয়েক দিনে শহর এবং শহরতলির বহু মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা লোপাট হয়েছে বলে অভিযোগ আসছে। প্রতি ক্ষেত্রেই ফোন করে বলা হয়েছে, “মেট্রো রেল থেকে ফোন করা হচ্ছে। আপনার স্মার্ট কার্ডটি রিচার্জ না করলে বন্ধ হয়ে যাবে। এখন অনলাইনেই কার্ড রিচার্জ হচ্ছে।” কেউ যদি জানান যে তাঁর স্মার্ট কার্ড আছে তখন জানতে চাওয়া হচ্ছে, তিনি কত টাকার রিচার্জ করতে চান। নির্দিষ্ট অঙ্ক বলার পরে জানানো হচ্ছে, একটি কিউআর কোড পাঠানো হচ্ছে। মোবাইলে থাকা যে কোনও লেনদেনের অ্যাপ থেকে সেটি স্ক্যান করে টাকা পাঠালেই কার্ড রিচার্জ হবে। অভিযোগ, সেই নির্দেশ মানার পরেই কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ হাজার আবার কারও তার বেশি টাকা উধাও হয়েছে। কলকাতা, ব্যারাকপুর এবং বিধাননগর থানায় এই ধরনের অভিযোগ জমা পড়তে শুরু করেছে।
এমনই অভিযোগ উল্টোডাঙার বাসিন্দা, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি ক্লাবের কর্মী শ্যামল দত্তের। আগে মেট্রোয় যাতায়াত করলেও আনলক পর্বে তিনি সাইকেলে কাজে গিয়েছেন। তাঁর দাবি, গত সোমবার একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন করে জানানো হয়, কলকাতা মেট্রো রেল থেকে বলা হচ্ছে। তাঁর স্মার্ট কার্ড বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, দ্রুত রিচার্জ করতে হবে। শ্যামলের কথায়, “৫০০ টাকায় রিচার্জ করাতে রাজি হয়ে যাই। ওপারের ব্যক্তি জানান, একটি কিউআর কোড পাঠানো হচ্ছে। তাতেই টাকা পাঠাতে হবে। কোড স্ক্যান করে টাকা পাঠানোর অপশনে আঙুল ছোঁয়াতেই দেখি, ৫০০ টাকার বদলে অ্যাকাউন্ট থেকে পাঁচ হাজার টাকা কেটে নেওয়া হল।” ফের ওই নম্বরে ফোন করতেই ভুল হয়ে গিয়েছে জানিয়ে আরও এক বার করতে বলা হয়। দ্বিতীয় বারেও একই পরিমাণ টাকা কাটা হয় বলে তাঁর দাবি।
চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত চন্দ্রিমা ঘোষের আবার দাবি, “মেট্রোর কার্ড রিচার্জ করার নামে ফোন করে আমার এটিএম কার্ডের ১৬টি সংখ্যা বলা হয়। তা থেকে আমার এটিএম কার্ডের পিন নম্বর বিয়োগ করে শুধু বিয়োগফলটা বলতে বলা হয়। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে অ্যাকাউন্ট থেকে ৩০ হাজার টাকা গায়েব হয়ে যায়। পরে বুঝলাম, যে বিয়োগফল বললাম, তাকে ওই ১৬ সংখ্যার কার্ড নম্বরের থেকে ফের বিয়োগ করেই পিন পেয়ে গিয়েছে!”
সাইবার বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি গোটা ঘটনায় বিরক্ত পুলিশও। সাইবার শাখার আধিকারিকদের দাবি, বার বার প্রচারের পরেও অনেকের হুঁশ ফিরছে না। কোনও সংস্থাই তার গ্রাহকদের সঙ্গে ফোনে আর্থিক লেনদেনের কথা বলে না। লালবাজারের সাইবার শাখার এক পুলিশ আধিকারিকের মন্তব্য, “কিউআর কোড স্ক্যান করার আগে কত টাকা পাঠানোর জন্য স্ক্যানটি করা হচ্ছে সেটা যে কারও দেখা কর্তব্য।” কলকাতা মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মেট্রোর তরফে এ ধরনের ফোন করা হয় না। অ্যাপে বা মেট্রোর ওয়েবসাইটে গিয়ে রিচার্জ করার পাশাপাশি স্টেশন থেকেও কার্ড রিচার্জের সুবিধা থাকছে।”