Kolkata Accident

রাগ করে বেরিয়ে গিয়েছিলেন আরসালান, বাবার ধমক খেয়ে ফেরার পথেই দুর্ঘটনা!

লালবাজারের একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই দিন রাতে পরিবারের কোনও সদস্যের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরেই রাগ করে গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন পারভেজ। ওই সূত্রটির দাবি, বাড়ি থেকে বেরিয়ে পার্কসার্কাস এবং সংলগ্ন এলাকায়গাড়িতে ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তিনি।

Advertisement

সোমনাথ মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৯ ১৬:৫০
Share:

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

রাগ করেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন বছর বাইশের আরসালান পারভেজ। নিজের পছন্দের জাগুয়ার নিয়ে দুর্যোগের রাতে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন শহরের রাস্তায়। আচমকাই বাবা আখতার পারভেজের ফোন আসে। বাবার ধমক খেয়ে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন পারভেজ। সেই সময়েই লাউডন স্ট্রিটের মোড়ে দুর্ঘটনা। সোমবারই ওই দুর্ঘটনার তদন্তভার নিজেদের হাতে নিয়েছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। ইতিমধ্যে ধৃত আরসালান এবং তাঁর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ।

Advertisement

লালবাজারের একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই দিন রাতে পরিবারের কোনও সদস্যের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরেই রাগ করে গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন পারভেজ। ওই সূত্রটির দাবি, বাড়ি থেকে বেরিয়ে পার্কসার্কাস এবং সংলগ্ন এলাকায়গাড়িতে ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তিনি। গোয়েন্দাদের কাছে পারভেজ দাবি করেছেন, তিনি প্রথমে রাসেল স্ট্রিট ধরে যাচ্ছিলেন। রাসেল স্ট্রিট থেকে মিডলটন স্ট্রিট ধরেন। সেই রাস্তা ধরে জওহরলাল নেহরু রোডের সংযোগস্থলে বাঁ দিকে যাওয়ার সময় সিগন্যাল ভেঙে জাগুয়ারটি চলে যায় বিড়লা তারামণ্ডলের দিকে। সেখান থেকে বাঁ দিকে মোড় নিয়ে চলে যায় শেকসপিয়র সরণিতে। তার পরেই কলা মন্দিরের কাছে দুর্ঘটনা।তবে, পারভেজ এবং তাঁর পরিবারের এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে ওই সব এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনিকোথাও মদ্যপান করেছিলেন কি না, তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব চলছে বলে পুলিশ এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

ইতিমধ্যেই দুর্ঘটনাগ্রস্ত জাগুয়ার এবং মার্সিডিজ গাড়ি দু’টি পরীক্ষা করে দেখেছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু, গাড়িটি আধুনিক প্রযুক্তির হওয়ায় তাঁরাপরীক্ষা করতে গিয়ে কিছুটা হোঁচটই খেয়েছেন। কলকাতা পুলিশের তরফে ওই গাড়ি নির্মাতা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। যদিও প্রাথমিক পরীক্ষার পর জানা গিয়েছে, জাগুয়ারের গতি ওই রাতে ১২০ কিলোমিটারের আশেপাশে ছিল। সোমবার গোয়েন্দা বিভাগের স্পেশাল টিম গাড়ি দু’টিকে পরীক্ষা করে দেখেছে।

Advertisement

আরসালান বিরিয়ানি চেনের মালিক আখতার পারভেজের এক পারিবারিক বন্ধু দাবি করেছেন, শনিবার দুপুরেপারভেজকে নিয়ে তিনি ডিসি (সাউথ) মিরাজ খালিদের অফিসে গিয়ে আত্মসমর্পণ করান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি সোমবার বলেন, “আমি দীর্ঘ দিন ধরেই পারভেজকে জানি। ও কোনও রকমের নেশা করে না। এমনকি চিউইংগামও খেত না। কেউ খেলে, ও তাকে সতর্ক করত। আমি যখন পুলিশের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম,তার পর তার মেডিক্যাল টেস্ট হয়েছে। যদি পারভেজওই রাতে মদ বা মাদক জাতীয় কিছু খেত, তা হলে পুলিশ তো আদালতে বিষয়টি জানাত।” তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি পারভেজ মত্ত ছিল না। আমি যেটা শুনেছি, বৃষ্টির ওই রাতে ওর বাবা ওকে ফোন করে বাড়ি আসতে বলেন। তিনি পারভেজকে ধমকও দেন। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে এই ঘটনা ঘটে গেছে।”

আরও পড়ুন: মানবাধিকার পুরোপুরি লঙ্ঘিত কাশ্মীরে: ফের আক্রমণে মমতা, তীব্র নিন্দায় বিজেপি

আরও পড়ুন: ফোনে তিন তালাক, পুলিশে অভিযোগ করায় মেয়ের সামনেই বধূকে পুড়িয়ে মারল স্বামী

পুলিশ সূত্রে খবর, ওই জাগুয়ারটি কেনা হয়েছিল ১৩ এপ্রিল, ২০১৭। পারভেজ দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বাইপাসের ধারে একটি নামী স্কুলে পড়াশোনা করেন। তার পর এডিনবরা গিয়ে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়েন। ২০১৮ সালে ফিরে আসেন কলকাতায়। বাড়ি ফিরে পারিবারিক ব্যবসায় যুক্ত হন। দেশে ফেরার পর ওই জাগুয়ার গাড়িটি তার সঙ্গী হয়ে যায়। ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে এ বছরের জুলাই পর্যন্ত মোট ৪৮ বার ট্রাফিক আইন ভাঙার মামলা হয়েছে ওই জাগুয়ারের বিরুদ্ধে। তার মধ্যে চল্লিশেরও বেশি মামলা হয়েছে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর জন্য। তবে সব ক্ষেত্রেই চালক একই ব্যক্তি ছিলেন না।ওই পরিবারের একটি সূত্রজানিয়েছে, আরসালান পারভেজ বন্ধুদের নিয়ে ভিডিয়ো গেম খেলতে পছন্দ করতেন। বাড়িতেই বন্ধুদের সঙ্গে খেলতেন। দ্রুতগতিতে তিনি কখনই গাড়ি চালাতেন না। তবে, ওই দিন পারিবারিক সমস্যা হয়েছিল বলেই ওই সূত্রটির দাবি।

ঘটনার পর, রবিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করা হয় পারভেজকে। শনিবার পুলিশ আরসালানের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৭৯ (বেপরোয়া গাড়ি চালানো), ৪২৭ (অন্যের সম্পত্তি নষ্ট), ৩০৪/২ (অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা) দায়ের করা হয়েছিল। রবিবার দু’টি জামিন অযোগ্য ধারাও জোড়া হয়। এ দুটি হল ৩০৮ (অনিচ্ছাকৃত খুনের চেষ্টা) এবং পিডিপিপি আইনের ৩ নম্বর ধারা (সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস)। বিচারক তাঁকে ১৪ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement