বিদেশে চাকরির টোপ দিয়ে গাঁ-গঞ্জের স্বল্পশিক্ষিত যুবকদের ঠকানোর অভিযোগ নতুন নয়। এ বার তেমনই প্রতারণার শিকার হলেন বিদেশে এক দফা চাকরি করে আসা কিছু যুবক। বিদেশ ফেরতদের আবার বিদেশে চাকরির সুযোগ করে দেওয়ার নামে তৈরি হয়েছিল এক প্রতারণা-চক্র। সম্প্রতি এমনই অভিযোগ পেয়ে শহরের একটি সংস্থার অফিসে হানা দিয়েছিল শেক্সপিয়র সরণি থানার পুলিশ। প্রতারকদের কাউকে গ্রেফতার করা না গেলেও ওই অফিস থেকে ১৪০ জন যুবকের পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের দাবি।
পুলিশ সূত্রের খবর, আদালতের নির্দেশে ওই অফিসে তল্লাশি চালানোর পরে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে একাধিক সংস্থার কল লেটার এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটও। পাসপোর্ট এবং সার্টিফিকেটগুলি আসল হলেও কল লেটারগুলি বিভিন্ন ভুয়ো সংস্থার বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। সিদ্ধার্থ শর্মা এবং অলোক মোদক নামে দুই ফেরার অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে বলেও দাবি তদন্তকারীদের।
পুলিশ জানিয়েছে, ৯ সেপ্টেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের বাসিন্দা আদিত্য পণ্ডিত নামে এক যুবক বিদেশে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কয়েক লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ জানান। আদিত্যের অভিযোগের পরপরই আরও কয়েক জন একই ধরনের অভিযোগ জানান। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানতে পারে, অভিযোগকারীরা সকলেই কোনও না কোন সময়ে বিদেশে মেকানিক, রাঁধুনির চাকরি করতেন। কিন্তু ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় তাঁরা দেশে ফিরে আসেন। ফের বিদেশে চাকরির খোঁজ করছিলেন তাঁরা। গত জুন মাসে অনলাইনে ‘ওভারসিস কনসালটেন্সি’ নামে ওই সংস্থার বিজ্ঞাপন দেখে তাঁরা সংশ্লিষ্ট নম্বরে যোগাযোগ করেন। সেই ফোনালাপের ভিত্তিতে কলকাতার অফিসে এসে দেখা করেন তাঁরা। পুলিশের কাছে আদিত্য-সহ কয়েক জন অভিযোগকারীর দাবি, আমেরিকা, কানাডার মতো দেশে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। বিদেশি সংস্থায় চাকরি করার জন্য জুলাই মাসে নামও নথিভুক্ত করা হয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, অগস্ট মাসে ‘স্কাইপ’-এ এক-এক জনের প্রায় ৩০ মিনিট করে ইন্টারভিউ হয়েছিল। কিন্তু কে ইন্টারভিউ নিচ্ছেন, তার কোনও ছবি দেখতে পাননি চাকরিপ্রার্থীরা। এর পরেই চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য ভিসা এবং বিমানের টিকিট বাবদ একাধিক কিস্তিতে চাকরিপ্রার্থী পিছু ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছিল। জমা নেওয়া হয়েছিল পাসপোর্ট ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট। তার পর থেকে আর কিছু জানানো হয়নি। খোঁজ নিতে এসে চাকরিপ্রার্থীরা দেখেন, অফিসে তালা মারা। ফোনও বন্ধ। তার পরেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, ওই প্রতারকেরা জুন মাসে ওই অফিসটি ভাড়া নেন। সেই সঙ্গে ওই প্রতারক সংস্থার দুই কর্তা সিদ্ধার্থ এবং অলোক নতুন মোবাইল ফোন কেনেন। ভুয়ো নথি দিয়ে কেনা সিমকার্ড ব্যবহার করতেন তাঁরা। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানান, প্রতারণা করার জন্য নিজেদের চুল, দাড়ি কামিয়ে ভেক ধরেছিলেন ওই দু’জন। ফলে অভিযোগকারীরা যে ছবি দিচ্ছেন, তার সঙ্গে এখন অভিযুক্তদের চেহারা না-ও মিলতে পারে।