Arpita Mukherjee

Arpita Mukherjee: প্যাকেটে পার্টির পোশাক, ১৪ দিন একই জামাকাপড়ে

গত ২৩ জুলাই অর্পিতাকে তাঁর ডায়মন্ড সিটি আবাসনের ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২২ ০৬:৫২
Share:

গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে এই পোশাকেই দেখা গিয়েছে অর্পিতাকে। শুক্রবার, জোকা ইএসআই হাসপাতালে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

লাল টপ, কালো প্যান্ট ও একটি সাদা-কালো শ্রাগ, যাতে লেখা ‘ক্যান ইউ হিয়ার মি নাও’। ১৪ দিন ইডি-র হেফাজতে কাটানোর সময়ে এই পোশাকেই প্রতি বার হাসপাতাল ও আদালতে গিয়েছেন এসএসসি এবং টেট দুর্নীতি-কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া, পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। এক দিকে আইনি বাধা— পুলিশি হেফাজতে থাকা কোনও ব্যক্তিকে এক বারের বেশি পোশাক সরবরাহ করা যাবে না। অন্য দিকে, কোনও ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখা। মূলত এই দুই কারণে টানা ১৪ দিন একই পোশাকে যাতায়াত করতে হল অর্পিতাকে।

Advertisement

কী ভাবে হল এই পরিস্থিতি?

গত ২৩ জুলাই অর্পিতাকে তাঁর ডায়মন্ড সিটি আবাসনের ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ২৪ জুলাই কলকাতার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে অর্পিতাকে পেশ করা হয়। আগের দিনের পোশাক পরেই সে দিন আদালতে এসেছিলেন অর্পিতা। আইন অনুযায়ী, আদালত থেকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার সময়ে অভিযুক্তের জামাকাপড় পরিবারের সদস্য অথবা আইনজীবীদের মারফত তদন্তকারীদের হাতে তুলে দিতে হয়। এর পরে আর হেফাজতে থাকাকালীন কোনও কিছুই অভিযুক্তকে দেওয়া যায় না। তাই সে দিনই অর্পিতার পোশাক সংক্রান্ত সমস্যা হয় বলে সূত্রের খবর।

Advertisement

২২ জুলাই অর্পিতার ডায়মন্ড সিটির ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে টাকা, গয়না ও শিক্ষা দফতরের নথি উদ্ধারের পরে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন তদন্তকারীরা। সেই ফ্ল্যাট সিল করে দেওয়া হয়। তদন্তকারীদের কথায়, সে দিন প্যান্ট-টপ ও শ্রাগ পরে বেরিয়েছিলেন অর্পিতা।

অর্পিতার আইনজীবী নীলাদ্রিশেখর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অর্পিতা মূলত ডায়মন্ড সিটির ওই ফ্ল্যাটেই থাকতেন। কিন্তু পোশাকের জন্য তাঁর বেলঘরিয়ার বাড়িতে লোক পাঠানো হয়। সেখানে তেমন পোশাক মেলেনি। অর্পিতার কয়েক জন ঘনিষ্ঠ মারফত কিছু পোশাক জোগাড় করা হয়েছিল। তাঁরা একটি প্যাকেটের মধ্যে মুড়ে সেগুলি আমাদের দিয়েছিলেন। আমরা প্যাকেট না খুলেই তা তদন্তকারীদের হাতে তুলে দিয়েছিলাম।’’

তদন্তকারীদের কথায়, ‘‘সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে দেখা যায়, প্যাকেটে রয়েছে একটিই মাত্র সালোয়ার কামিজ। বাকি সব পোশাক রাতের পার্টিতে পরার মতো। সাধারণত ওই সব পোশাকে হাসপাতাল ও আদালতে যাওয়া দৃষ্টিকটু লাগবে বলেই অর্পিতা সেগুলি ব্যবহার করেননি।’’

অগত্যা ইডি-র হেফাজতে থাকাকালীন একটিই সালোয়ার কামিজ পরতেন অর্পিতা। আর আদালত ও হাসপাতালে যাওয়ার সময়ে প্রথম দিনের প্যান্ট-টপের উপরে শ্রাগ গলিয়ে নিতেন। তবে তাঁর নিত্য ব্যবহৃত ওই পোশাক নিয়মিত পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল বলে কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রের খবর।

অর্পিতার আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, ওই মহিলার কোনও ঘনিষ্ঠকেই এই ক’দিন আদালত বা ইডি-র দফতরে দেখা যায়নি। অর্পিতার মা মিনতিও ইডি-র দফতরে যোগাযোগ করেননি। শুধুমাত্র আইনজীবীরাই মামলার সূত্রে সেখানে গিয়ে অর্পিতার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান। সে ক্ষেত্রে পোশাক নিয়ে তেমন কথা বলেননি অর্পিতা। তাঁর এক আইনজীবী বলেন, ‘‘ঘটনার পরে উনি এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে, পোশাক নিয়ে তেমন ভাবনাচিন্তা করেননি।’’

তবে, গত শুক্রবার আলিপুরের মহিলা সংশোধনাগারের হেফাজতে আসার পরে অর্পিতার পোশাক সংক্রান্ত সমস্যা মিটতে চলেছে বলে দাবি আইনজীবী নীলাদ্রিশেখরের। তিনি বলেন, ‘‘জেল হেফাজতে পোশাক নিয়ে আইনি বাধা নেই। প্রতি সপ্তাহে পোশাক দেওয়া যায়। তাই শনিবারই অর্পিতার নতুন পোশাকের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

সারদা-কাণ্ডে অভিযুক্ত দেবযানী মুখোপাধ্যায় প্রায় ১৩ বছর জেল হেফাজতে রয়েছেন। তাঁর মা শর্বরী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মেয়েটা অপরাধী কি অপরাধী নয়, তার তদন্ত হচ্ছে। কিন্তু ওকে একই পোশাকে আদালত ও হাসপাতালে দেখে খুব কষ্ট পেয়েছি। এ ভাবে একই পোশাকে থাকা খুবই কষ্টকর।’’

শর্বরীর দাবি, সিবিআই ও ইডি-র হেফাজতে যাওয়ার সময়ে তিনি দেবযানীর সব পোশাক দিয়ে দিয়েছিলেন। এখনও প্রায় ১১ বছর ধরে দমদম সংশোধনাগারে‌ প্রতি মাসে দেবযানীকে পোশাক দিয়ে আসেন তিনি।

তবে নিয়োগ-দুর্নীতিতে ধৃত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পোশাক নিয়ে কোনও সমস্যা হয়নি। ২৪ জুলাই তাঁর পরিবার তদন্তকারীদের হাতে ফতুয়া, পাজামা-পাঞ্জাবি তুলে দিয়েছিল। ইডি-র হেফাজতে থাকাকালীন পার্থ তা-ই ব্যবহার করতেন বলে সংস্থা সূত্রের দাবি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement