সেনা অফিসারদের সঙ্গে দমকলের বচসা। রবিবার।— নিজস্ব চিত্র।
উপযাচক হয়ে সেনা অফিসারেরা এসেছিলেন সাহায্য করতে। তাঁদের খেদিয়ে দিল রাজ্য সরকার।
ফিরে যাওয়ার সময়ে সেনাবাহিনীর মেজর পদের এক অফিসার বললেন, ‘‘ফোর্ট উইলিয়াম থেকে সাহায্যের জন্যই এসেছিলাম। কিন্তু বলা হল, সাহায্যের প্রয়োজন নেই। অপমান করে এ-ও বলা হল, আমাদের গাড়ি এখান থেকে বার করে নিতে। তাই চলে যাচ্ছি।’’ তখন দমকল দফতরের ডিরেক্টর গৌরপ্রসাদ ঘোষ ছুটে আসেন। ওই মেজরকে তিনি বলেন, ‘‘আপনি এদের (পড়ুন মিডিয়া) এ সব বলছেন কেন? এটা আপনার এক্তিয়ারে পড়ে না।’’ মেজরের সঙ্গে ডিরেক্টরের বাক-বিতণ্ডা শুরু হয়ে যায়। এর পরেই সেনা অফিসারেরা চলে যান।
রবিবার ভয়াবহ আগুন লাগে কলকাতার হৃদ্পিন্ড, নিউ মার্কেট লাগোয়া সিটি মার্ট-এ। এক সময়ে এটি লাইট হাউস সিনেমা হল ছিল। এখন চারতলা পোশাক-বিপণি। ১১টা ৫০ মিনিটে সেই বাড়ির দোতলায় আগুন লাগে। তা ছড়ায় অন্য তলেও। বিকেল চারটে নাগাদ অত্যাধুনিক আগুন নেভানোর গাড়ি ও ১৫ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জওয়ান নিয়ে সেনা পৌঁছয়। তখনও আগুন জ্বলছে। গলগলিয়ে বেরোচ্ছে ধোঁয়া। সেনার উদ্দেশ্য ছিল, রাজ্যের দমকলবাহিনীকে সাহায্য করা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সেনা অফিসারদের চলে যেতে বলা হচ্ছে।
কেন বার করে দেওয়া হল সেনা অফিসারদের? ঘটনাস্থলে উপস্থিত, কলকাতার বিদায়ী মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রোগী ভেন্টিলেশন থেকে বেরিয়ে গেলে চিকিৎসক এসে কী করবে? আগুন নিয়ন্ত্রণ হওয়ার পরে সেনাবাহিনী এসে কী করবে? অপমানের বিষয় নয়। আগুন তো নিভে গিয়েছে।’’ শোভনবাবু পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, কারও সঙ্গে আলোচনা না করে, কার নির্দেশে সেনা এসেছিল? কিন্তু সরকার কেন ডাকল না তাদের? মেয়রের কথায়, ‘‘আমরা প্রয়োজন মনে করিনি।’’ সরকারি ভাবে অবশ্য জানানো হয়েছে, আগুন নিয়ন্ত্রণ হয়েছে বিকেল পাঁচটায়।
সেনা দফতরের মুখপাত্র, গ্রুপ-ক্যাপ্টেন তরুণ সিঙ্ঘা বলেন, ‘‘কোথাও বড় আগুন লাগলে আমরা নিজেরাই সাহায্যে এগিয়ে যাই। যে আগুন থেকে বড় ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, সে ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে আসি। ঘিঞ্জি এলাকায় আগুন লাগলেও সাহায্য করা হয়।’’ তরুণবাবু জানান, সে কারণেই ফোর্ট উইলিয়াম থেকে ওই বিশেষ দলকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু, রাজ্য সরকার তাদের ‘দরকার নেই’ বলে জানিয়ে দেয়। এ ভাবে নিজে থেকে সাহায্য করতে যাওয়া সেনা অফিসারদের কার্যত খেদিয়ে দেওয়ার ঘটনা আগে ঘটেছে বলে মনে করতে পারেননি তরুণবাবু। কলকাতাতেও এর আগে বড় আগুনে সেনাবাহিনী যেচে সাহায্য করেছে। কখনও বড়বাজারে, কখনও খিদিরপুরে।
কিন্তু সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে যে আগুন লেগেছে, তা নেভাতে সেনা অফিসারেরা বিকেল চারটের সময় কেন পৌঁছলেন? তরুণবাবু জানান, আগুন লাগার কিছু পরে তাঁদের কাছে খবর আসে। প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডেই সেনা ছুটে যায় না। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরে দেখা হয়, পরিস্থিতি কী দাঁড়াচ্ছে। এ দিন দুপুরের পরে যখন দেখা যায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি, তখনই নড়ে বসে তারা। তরুণবাবু বলেন, ‘‘দুপুরে ওই সময়ে অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরির একটি অগ্নি-নির্বাপক গাড়ি ফোর্ট উইলিয়ামের কাছে ছিল। সেটিকেই পাঠানো হয়।’’