Calcutta Rowing Club

প্রতিযোগীরা সাঁতারে কতটা দক্ষ, দেখা হয়েছিল কি আগে?

শহরের বেশ কিছু সাঁতার ক্লাবের প্রশিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, জলে নেমে কোনও খেলায় অংশগ্রহণ করার প্রাথমিক শর্তই হল, দক্ষ সাঁতারু হতে হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২২ ০৮:২০
Share:

ফাইল চিত্র।

ওয়াটারপোলো, রোয়িং অথবা ডাইভিং— জলে এই সব খেলায় অংশগ্রহণ করার আগে এক জন প্রতিযোগী সাঁতারে কতটা দক্ষ, সেটা কি দেখা হয়? রবীন্দ্র সরোবরে রোয়িংয়ের সময়ে কালবৈশাখীর কবলে পড়ে নৌকা উল্টে সাউথ পয়েন্টের দুই ছাত্র পূষন এবং সৌরদীপের মৃত্যুর পরে এই প্রশ্নও উঠেছে।

Advertisement

প্রশ্ন উঠেছে, জলে নামার পরে দুর্ঘটনা ঘটলে কী করতে হবে, তার প্রশিক্ষণ কি দেওয়া হয় প্রতিযোগীদের? শহরের বেশ কিছু সাঁতার ক্লাবের প্রশিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, জলে নেমে কোনও খেলায় অংশগ্রহণ করার প্রাথমিক শর্তই হল, দক্ষ সাঁতারু হতে হবে। যাতে বিপদে পড়লে উদ্ধারকারী আসার আগে নিজেরাই পরিস্থিতি সামলে নেওয়া যায়। শুধু জলে ভেসে থাকতে পারাই এই ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে যোগ্যতার মাপকাঠি হওয়া উচিত নয় বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।

রবীন্দ্র সরোবরে ওই আন্তঃস্কুল রোয়িং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল মিত্র ইনস্টিটিউশন ভবানীপুর শাখার চার পড়ুয়াও। ওই স্কুলের শারীরশিক্ষার শিক্ষক জগন্নাথ সর্দার বলেন, ‘‘অনেক সময়েই দেখা যায়, প্রতিযোগীরা সাঁতারে কতটা দক্ষ, তা দেখা হয় না। আমাদের এক ছাত্র জানিয়েছে, রবীন্দ্র সরোবরে রোয়িংয়ে নামার আগে ওকে শুধু জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, সাঁতার জানে কি না। ও হ্যাঁ বলতেই বাড়ির অনুমতিপত্র দেখে নিয়ে জলে নামার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু এক জন প্রতিযোগী যে সাতাঁরু, সেই শংসাপত্র থাকাটাও জরুরি।’’ জগন্নাথবাবুর মতে, তাঁদের স্কুলের যে পড়ুয়ারা রোয়িংয়ে অংশগ্রহণ করেছিল, তারা সবাই দক্ষ সাঁতারু এবং অন্য কয়েকটি প্রতিযোগিতায় ইতিমধ্যেই জয়ী হয়েছে।

Advertisement

সাঁতারুর শংসাপত্র মেলে কী ভাবে

• দিতে হয় পরীক্ষা

• সাঁতারু ফ্রি স্টাইল, ব্যাক স্ট্রোক জানেন কি না, দেখেন প্রশিক্ষক

• অন্তত মিনিট তিনেক প্যাডলিং করে ভেসে থাকার ক্ষমতা তাঁর আছে কি না, দেখা হয় তা-ও

• দরকারে পরীক্ষা চলাকালীন হঠাৎ ডুবিয়ে দিয়ে দেখা হয় তিনি ভয় পেলেন, না কি ভেসে উঠে সাঁতার কাটতে পারলেন

রবীন্দ্র সরোবরে গত শনিবারের দুর্ঘটনায় যে দুই পড়ুয়া বেঁচে গিয়েছে, তাদের মধ্যে এক জন দেবাংশ চক্রবর্তী বলে, ‘‘আমি আবাসনের সুইমিং পুলে সাঁতার শিখেছি। রোয়িংয়ে নামার আগে কিছুটা সাঁতার কেটে দেখাতে বলা হয়েছিল। তার পরেই আমাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।’’

তিরিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাঁতার শেখাচ্ছেন কলেজ স্কোয়ারের একটি সুইমিং ক্লাবের এক প্রশিক্ষক সন্দীপ আঢ্য। তাঁর মতে, ‘‘সাঁতারু হওয়ার শংসাপত্র থাকলে তবেই এই সব খেলায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া উচিত।’’ ওই সুইমিং ক্লাবের অ্যাসিট্যান্ট সেক্রেটারি সন্তোষ দাস বলেন, ‘‘সাঁতারুর শংসাপত্র পেতে গেলে পরীক্ষা দিতে হয়। যিনি পরীক্ষা দিচ্ছেন, তিনি ফ্রি স্টাইল, ব্যাক স্ট্রোক জানেন কি না, দেখতে হবে। দেখতে হবে জলে তিনি মিনিট তিনেক প্যাডলিং করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন কি না। এমনকি, পরীক্ষা নিতে নিতে তাঁকে হঠাৎ করে ডুবিয়ে দিয়ে দেখা হয়, ভয় পেয়ে গেলেন না কি অনায়াসে ভেসে উঠে সাঁতার কাটতে পারলেন। এই সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তবেই মেলে শংসাপত্র। এই শংসাপত্র থাকলে জলে নেমে যে কোনও খেলায় অংশগ্রহণ করলে কোনও ভয় থাকে না।’’

সাঁতার প্রশিক্ষক তথা লাইফসেভার এবং কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্য ভোলানাথ পাল বলেন, ‘‘সাঁতার বা জলে নেমে খেলার অনেক প্রতিযোগিতায় লাইফসেভার হিসাবে থাকতে গিয়ে দেখেছি, অনেক প্রতিযোগী শুধু সাঁতারের প্রাথমিক পাঠ পেয়েই খেলতে নেমেছে। তারা বিপদে পড়েছে অনেক বার। সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার করতে হয়ে‌ছে। জলে নেমে খেলার জন্য দক্ষ সাঁতারু হওয়া দরকার।’’

ইংলিশ চ্যানেল জয়ী, সাঁতারু বুলা চৌধুরি বলেন, ‘‘জলে খেলতে নামার আগে প্রতিযোগীদের অন্তত ১০০ মিটার সাঁতার কেটেনেওয়া জরুরি। কেউ হয়তো সাঁতার জানে, কিন্তু অনেক দিন অনুশীলন না করায় দমের ঘাটতি হতে পারে। বিপদ ঘটলে উদ্ধারকারী নৌকা আসার আগে ভেসে থাকার বা সাঁতার কেটে পাড়ে পৌঁছনোর কৌশল জানতেই হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement