SSKM PG

এসএসকেএমে আইভিএফ উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়তে অনুমোদন

সরকারি পরিকাঠামোয় বন্ধ্যত্বের চিকিৎসার এমন প্রকল্পে প্রশাসনিক অনুমোদনের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন স্ত্রীরোগ চিকিৎসকেরা। তাঁদের বক্তব্য, এই প্রকল্পের সঙ্গে বহু নিঃসন্তান দম্পতির আবেগ জড়িত।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২০ ০৩:০৯
Share:

ফাইল চিত্র।

বছর ছয়েক আগে আলোচনা হয়েছিল বিস্তর। কিন্তু তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। শেষ পর্যন্ত এসএসকেএম হাসপাতালেই আইভিএফ চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ার বিষয়ে প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, মঙ্গলবার স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য এই সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিতে সই করেছেন।

Advertisement

ওই বিজ্ঞপ্তিতে আইভিএফ (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজ়েশন) উৎকর্ষ কেন্দ্র নির্মাণের প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়ার পাশাপাশি প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করার কথাও বলা হয়েছে। পাশাপাশি, এসএসকেএম কর্তৃপক্ষকে পূর্ত দফতরের সঙ্গে কথা বলে প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ার কাজ শুরু করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সরকারি পরিকাঠামোয় বন্ধ্যত্বের চিকিৎসার এমন প্রকল্পে প্রশাসনিক অনুমোদনের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন স্ত্রীরোগ চিকিৎসকেরা। তাঁদের বক্তব্য, এই প্রকল্পের সঙ্গে বহু নিঃসন্তান দম্পতির আবেগ জড়িত। শত চেষ্টার পরেও সন্তান না হলে শেষ ভরসা হয় আইভিএফ পদ্ধতি। কিন্তু দরিদ্র নিঃসন্তান দম্পতিদের পক্ষে বেসরকারি পরিকাঠামোয় সেই চিকিৎসার বিপুল খরচ বহন করা সম্ভব হয় না। তাঁদের মুখে হাসি ফোটাতে পারে এই প্রকল্প।

Advertisement

আরও পড়ুন: দাদা-দিদির দেহ ঘরে নিয়েই দশ দিন বিছানায় শুয়ে প্রৌঢ়া

তবে প্রশাসনিক অনুমোদন মিললেও প্রকল্পটি বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখাতে রাজি নন শহরের স্ত্রীরোগ চিকিৎসকদের একাংশ। তার কারণ ছ’বছর আগের অভিজ্ঞতা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ২০১৪ সালে প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের সম্মতিতেই এসএসকেএমে বন্ধ্যত্বের চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ার বিষয়টি বেসরকারি হাসপাতালের স্ত্রীরোগ চিকিৎসক গৌতম খাস্তগীরকে দেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্য দু’বছর চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু বিনামূল্যে চিকিৎসা নীতি ঘোষণা হওয়ার পরে পরিকল্পনা রূপায়ণে জটিলতা তৈরি হয় বলে খবর।

আরও পড়ুন: লকডাউনের ভুয়ো খবর রটিয়ে গ্রেফতার তরুণ

বুধবার সেই চিকিৎসক গৌতমবাবু জানান, ওই প্রকল্পে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে রাজি ছিলেন তিনি। তবে সরকারি পরিকাঠামোয় এ ধরনের উদ্যোগের পথে কয়েকটি অসুবিধা রয়েছে। আইভিএফ পদ্ধতিতে চিকিৎসক ছাড়াও এমব্রায়োলজিস্টের দরকার হয়। মাইক্রোস্কোপের নীচে ডিম্বাণু এবং শুক্রাণুর মিলন ঘটানোর কাজ তিনিই করেন। গৌতমবাবু জানান, সেই সময়ে স্বাস্থ্য দফতরে এমব্রায়োলজিস্টের কোনও পদ ছিল না। তা ছাড়া, বেসরকারি ক্ষেত্রে কোনও এমব্রায়োলজিস্ট যে পারিশ্রমিক পান, সরকারি পরিকাঠামোয় তা দেওয়ার অসুবিধা রয়েছে। প্রকল্প রূপায়ণের পথে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল, ওষুধের খরচ কে দেবে? সংশ্লিষ্ট আইভিএফ বিশেষজ্ঞ জানান, আইভিএফ পদ্ধতিতে প্রতিবারের চেষ্টায় ছাড় দিয়েও অন্তত ৪০ হাজার টাকা ওষুধের খরচ রয়েছে।

আরও পড়ুন: ছাত্রের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার, খুনের অভিযোগ

গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘বিনামূল্যে চিকিৎসা-নীতি চালু হওয়ার পরে বন্ধ্যত্বের চিকিৎসার জন্য এত টাকা খরচ করার ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের সকলের সম্মতি ছিল না। আমি আন্তরিক ভাবে চাই, সরকারি হাসপাতালে এই প্রকল্প চালু হোক। কিন্তু বাস্তব অসুবিধাগুলিও দূর করতে হবে।’’ এসএসকেএম সূত্রের খবর, বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যদের মধ্যে বেসরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের কয়েক জন আইভিএফ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। কিন্তু এ বার এখনও পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন গৌতমবাবু।

এসএসকেএমের নিওনেটোলজি বিভাগে আইভিএফ চিকিৎসার জন্য স্থায়ী পরিকাঠামো গড়ার বিষয়টি ঠিক হয়েছে। আপাতত মেডিসিনের নতুন বহির্বিভাগ ভবনে প্রকল্পের একটি অংশের কাজ হবে। প্রকল্প রূপায়ণের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সুভাষ বিশ্বাস বললেন, ‘‘কার্যত বিনামূল্যেই আইভিএফ পদ্ধতিতে চিকিৎসা করানোর লক্ষ্য থাকবে। হয়তো ন্যূনতম খরচ নেওয়া হতে পারে। কিন্তু সমাজের স্বার্থে তা কখনওই আকাশছোঁয়া হবে না।’’এসএসকেএমের অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘গরিব, নিঃসন্তান দম্পতিদের জন্য এটা একটা দারুণ পদক্ষেপ। সরকারি পরিকাঠামোয় এই প্রথম এ ধরনের কোনও উৎকর্ষ কেন্দ্র হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement