—প্রতীকী ছবি।
সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত যে কোনও অভিযোগ এ বার স্থানীয় থানাতেই দায়ের করা যাবে। এমনকি, অভিযোগ পেয়ে প্রাথমিক ভাবে স্থানীয় থানার আধিকারিকদেরই তদন্ত করতে হবে। থানাগুলিকে এমনই নির্দেশ দিয়েছে বিধাননগর কমিশনারেট। এর জন্য প্রতিটি থানায় তথ্যপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বাছাই করা কয়েক জন আধিকারিককে। থানাগুলিতে তৈরি করা হয়েছে সাইবার সেল।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কলকাতা পুলিশ অনেক দিন ধরেই স্থানীয় থানায় সাইবার অপরাধের অভিযোগ নথিভুক্ত করার ব্যবস্থা চালু করেছে। এর পাশাপাশি, কলকাতা পুলিশের প্রতিটি ডিভিশনে পৃথক সাইবার সেল রয়েছে। অপরাধের গুরুত্ব বুঝে থানা বা ডিভিশনের পাশাপাশি গোয়েন্দা বিভাগের সাইবার অপরাধ দমন শাখাতেও মামলা পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বিধাননগর কমিশনারেটের শীর্ষ কর্তারা জানাচ্ছেন, প্রতিদিনই নতুন নতুন পদ্ধতিতে সাইবার অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। সব থানা এলাকার মানুষই যার ভুক্তভোগী। বাড়ছে মামলার চাপও। তাই শুধুমাত্র কমিশনারেটের একটি সাইবার থানার উপরে নির্ভরশীল না থেকে সাইবার অপরাধের তদন্ত সব থানাকেই করতে হবে। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সাইবার থানার সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। বিধাননগরে এমনিতে সাইবার অপরাধ নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে থানা স্তরে প্রচারের একাধিক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ বার আরও বেশি করে নাগরিকদের সচেতন করতে চাইছে পুলিশ। পাশাপাশি, আরও বেশি সংখ্যক পুলিশ আধিকারিকদের সাইবার অপরাধের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
কমিশনারেটের কর্তারা জানান, তথ্যপ্রযুক্তিতে উৎসাহ রয়েছে এবং অঙ্ক বা বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন, এমন আধিকারিকদের নিয়ে প্রতিটি থানায় আলাদা সাইবার সেল তৈরি করা হয়েছে। ওই সেল-ই সাইবার অপরাধের অভিযোগ এলে তদন্ত করবে। ফলে সাইবার থানার উপরে চাপ বাড়বে না।
বিধাননগর কমিশনারেটের সাইবার থানাটি সল্টলেকে। ফলে রাজারহাট-নিউ টাউনের প্রান্তিক এলাকার কেউ সাইবার জালিয়াতির খপ্পরে পড়লে তাঁকে অনেকটা উজিয়ে সল্টলেকে আসতে হয়। তা ছাড়া, সাইবার অপরাধের ঘটনা সাধারণ থানা দেখতেও চায় না। সাইবার থানাতেই সবাইকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এলাকার থানা তদন্তভার নিলে নাগরিকদের হয়রানিও কমবে। এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘থানাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সাইবার অপরাধের যে কোনও ঘটনাই এফআইআর হিসাবে নথিভুক্ত করতে হবে।’’
আধিকারিকেরা জানান, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, যিনি প্রতারিত হয়েছেন, তিনি কিছু না জেনেই এ দিক-সে দিক ছুটছেন। এ সব ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির কোথায় যাওয়া উচিত, সে ব্যাপারে তাঁকে সাহায্য করবে স্থানীয় থানা। এর আগে আমেরিকার তদন্তকারী সংস্থা এফবিআইয়ের সঙ্গে যৌথ ভাবে সাইবার অপরাধের তদন্ত করছিল বিধাননগর কমিশনারেট। কানাডা, লন্ডনের পুলিশের সঙ্গেও তারা জোট বেঁধেছিল। নগরপাল গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘বিদেশি তদন্তকারী সংস্থার সাহায্য নিতে হয়েছিল বেআইনি কল সেন্টারের চক্রগুলি ধরতে। তারা এখানে বসে বিদেশি নাগরিকদের প্রতারণা করছিল। আমরা ৮০০ জনকে গ্রেফতার করেছি। সাইবার অপরাধের ধরন প্রতিদিন বদলাচ্ছে। থানাগুলিকে সতর্ক থাকতে হবে।’’
কী রকম সতর্কতা? আধিকারিকেরা জানান, থানাগুলি খেয়াল রাখবে, তাদের এলাকায় নতুন কল সেন্টার গজিয়ে উঠেছে কি না, তারা কী কাজকর্ম করছে, এলাকায় সাইবার কাফে কী ভাবে চলছে, কারা চালাচ্ছে— এ সব। এর জন্য থানায় সাইবার সেল থাকাটা জরুরি বলেই মনে করছে কমিশনারেট। তাই থানার পুলিশকে তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে জানান শীর্ষ কর্তারা।