শ্রদ্ধাজ্ঞাপন: পানিহাটি পুরসভায় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথ গ্রহণের দিনে স্মরণ নিহত কাউন্সিলর অনুপম দত্তকে। বুধবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
এক-এক জন করে নয়, ৩৪ জন কাউন্সিলরই শপথ নিলেন একসঙ্গে। হাততালি বা ফুলের স্তবকও নয়। নিয়মরক্ষার মতো করে, একেবারে অনাড়ম্বর ভাবেই বুধবার সকালে মিনিট দশেকের মধ্যে শেষ হয়ে গেল পানিহাটি পুরসভার নব নির্বাচিত কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান।
গত ১৩ মার্চ, রবিবার সন্ধ্যায় দুষ্কৃতীর গুলিতে খুন হন পানিহাটির আট নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অনুপম দত্ত। সেই ঘটনার জেরে গোটা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল এখনও সরগরম। পানিহাটির পরিবেশ পুরো থমথমে। এ হেন পরিস্থিতিতে এ দিনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে কোনও রকম জাঁকজমকে রাজি ছিলেন না দলীয় নেতৃত্ব। সোমবার অনুপমের শেষকৃত্যের পরে সর্বসম্মতিক্রমেই ঠিক হয়, সরকারি নিয়ম মেনে যেটুকু করার, শুধু সেটুকুই করা হবে। সেই মতো এ দিন সকাল সাড়ে ১০টায় পানিহাটি পুরসভা ভবনের বাইরে মঞ্চ বেঁধে হল শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান।
মঞ্চে প্রত্যেক কাউন্সিলরের জন্য আলাদা আসন নির্দিষ্ট থাকলেও সেখানে যাননি তাঁরা। সকলেই দাঁড়িয়ে ছিলেন নীচে। শুধু সাংসদ সৌগত রায়, স্থানীয় বিধায়ক নির্মল ঘোষ ও সরকারি প্রতিনিধি উঠেছিলেন মঞ্চে। সেখানে অনুপম ও প্রাক্তন পুরপ্রধান স্বপন ঘোষের ছবি রাখা ছিল। অনুপমের স্মৃতিতে নীরবতা পালন করার পরে শুরু হয় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। সৌগত ও নির্মল ফুল দেন মঞ্চে রাখা ছবিতে। অন্যান্য পুরসভার ক্ষেত্রে এক-এক জন করে কাউন্সিলর শপথ নিচ্ছেন। পানিহাটিতে তা হয়নি। মঞ্চের নীচে দাঁড়িয়ে প্রথমে ১৪ জন মহিলা এবং পরে ২০ জন পুরুষ কাউন্সিলর একসঙ্গে শপথ নেন। উপস্থিত কেউই হাততালি দেননি। কারও হাতে পুষ্পস্তবকও দেওয়া হয়নি। বাইরেও কোনও মাইক বাঁধা হয়নি। মঞ্চে বক্স রাখা হয়েছিল শুধু। দর্শকদের বসারও জায়গা রাখা হয়নি।
শপথ-পর্বের পরে নতুন পুর বোর্ড বৈঠকে বসে। খুব স্বল্পদৈর্ঘ্যের সেই বৈঠকে চেয়ারম্যান পদে মলয় রায় ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে সুভাষ চক্রবর্তীর নাম ঘোষণা করা হয়। এর পরে কাউন্সিলরেরা সকলেই পুরসভা ছেড়ে চলে যান। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা তৃণমূলের পূর্ব পানিহাটির সভাপতি সম্রাট চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অনুপমকে ছাড়া শপথ নেওয়াটা খুব কষ্টের। এক জন সতীর্থের এমন ভাবে চলে যাওয়ার পরে আর মঞ্চে ওঠার মতো মানসিকতা কারও ছিল না। তাই নীচেই দাঁড়িয়ে ছিলাম।’’ তৃণমূলের অন্য কাউন্সিলরেরাও এ দিন অনুপমের শূন্যতা মেনে নিতে না পারার কথা বলেছেন বার বার।
সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘আজ উৎসবের দিন হতে পারত। কিন্তু অনুপমের মৃত্যুতে সেই উৎসব যাপনের সুযোগ নেই। ওঁর অসমাপ্ত কাজ অন্যেরা মিলে শেষ করবেন, এই আশা রাখি।’’ ভারাক্রান্ত মন নিয়েই সকলে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন বলে জানান নির্মলও। অনুপমের স্ত্রী মীনাক্ষী দত্ত বলেন, ‘‘২১১০ ভোটে জিতেও অনুপম শপথ নিতে পারল না। এর থেকে মর্মান্তিক বিষয় আর কিছু হতে পারে না।’’ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পরে এ দিন পুরসভার বন্ধ গেটে ঝোলানো থাকল অনুপমের ছবি। নীচে লেখা, ‘চির বিদায়’।