পার্ক সার্কাস যেন দিল্লির শাহিনবাগ। নিজস্ব চিত্র
রুহিনা সারমিন। এক সময়ে কলকাতার জাকারিয়া স্ট্রিটে তাঁর ছোটবেলা কেটেছে। বিয়ের পর প্রায় এক দশক কেটে গিয়েছে। এখন তিনি লখনউয়ে থাকেন। কলকাতার টানে মাঝেমধ্যে আসেন। কিন্তু এ বার শহরে পা রাখার পরই যেন সব অচেনা ঠেকছে। রাস্তা-ঘাটে প্ল্যাকার্ড-পোস্টারে সিএএ-এনআরসি। পাড়া-প্রতিবেশীদের মুখেও তাই। টিভি-সংবাদপত্রেও একই কথা। ওঁর কথায়, ‘‘মনে হচ্ছে যেন এ শহর তো আমার নয়’’ — পার্ক সার্কাস ময়দানে আন্দোলন মঞ্চের এক কোনায় চেয়ারে বসে এ ভাবেই তাঁর অভিজ্ঞতার কথা শোনাচ্ছিলেন রুহিনা।
এ বার কলকাতায় আসা ইস্তক পার্ক সার্কাস তাঁর ঘর। ভিড়ে মধ্যে থেকে স্লোগান উঠল আজাদির। রুহিনার গলাতেও সেই ‘আজাদি’। কিসের আজাদি চাইছেন ? বছর চল্লিশের রুহিনা বললেন, “এই আজাদি বিশ্বাসের। নাগরিকত্বের। আজাদি চাই সিএএ-এনআরসি থেকে। যখন শুনলাম দিল্লির শাহিনবাগের মতো পার্ক সার্কাসও গর্জে উঠছে। আর ঘরে বসে থাকতে পারলাম না। চলে এলাম এক অন্য শাহিনবাগে।”
কনকনে ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে যদি দিল্লির শাহিনবাগ আজাদি চাইতে পারে, পার্ক সার্কাস পারবে না কেন? কেন পারবে না বৃষ্টি-ঠান্ডাকে হারিয়ে আজাদির পক্ষে লড়াই করতে? বললেন রুহিনার পাশে বসে থাকা আরেক প্রতিবাদী। সাবানা বানু। কোলে ছেলে নিয়ে দু’দিন ধরে পার্ক সার্কাস ময়দানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠায়ে বসে গলা মেলাচ্ছেন তিনি। ঘর ছেড়ে কেন এখনে? প্রত্যয়ী কণ্ঠ বলে, “আমি তো আমার ছেলের জন্যে আজাদি চাইছি। আমাদের তো হয়েই এল। এই শহর তো আমার। এই দেশ তো আমার। সিএএ-এনআরসি আমাদের সেই দেশ থেকে আলাদা করতে পারবে না।”
বোঝা গেল কলকাতার পার্ক সার্কাস থেকে শাহিনবাগের দূরত্ব প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার হলেও, প্রতিবাদের স্বর কিন্তু একই। জাতীয় পতাকা সামনে রেখে আট থেকে আশি বসে পড়েছেন ‘আজাদি’-এর জন্যে। এই প্রতিবাদ থামবে না — হুঁশিয়ারি দিলেন সেখানে উপস্থিত কয়েকশো মহিলার প্রতিবাদী কণ্ঠ। সময় যত গড়াচ্ছে, ততই ভিড় বাড়ছে পার্ক সার্কাসেও। কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শয়ে শয়ে আসছেন প্রতিবাদীরা। কেউ কোলে ছেলে নিয়ে। কেউ বাড়ির কাজ সামলে। কেউ আবার আসছে গুটি গুটি পায়ে ঠাকুমার হাত ধরে। রাত জাগতে শুরু করেছে পার্ক সার্কাস। ঠিক যে ভাবে দিল্লির কনকনে ঠান্ডায় গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে রাত জাগছে শাহিনবাগ। অনেকটা সে ভাবেই। তাঁদের আশা, এই ‘আজাদি কা পুকার’ একদিন ঠিকই ক্ষমতার অলিন্দে পৌঁছবে।