মৃত্যুর পরে ঘরেই পড়ে মায়ের দেহ

মূল ফটক দিয়ে ঢুকতেই সামনের একচিলতে ঘর ও এক ফালি বারান্দা। ঘরের এক পাশে দু’টি পাত্রে শুকনো মুড়ি রাখা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৭ ০১:০৪
Share:

এই ঘরেই ছিল রঞ্জনা মুখোপাধ্যায়ের (ইনসেটে) দেহ, জানাচ্ছেন তাঁর ছেলে ইন্দ্রজিৎ। —নিজস্ব চিত্র।

দোতলায় দরজা খুলে নিজেই দেখালেন তাঁর মা কোথায় শুয়ে থাকতেন। সেই জায়গা অবশ্য ততক্ষণে ফিনাইল দিয়ে সাফ করা হয়েছে। ফ্ল্যাটের সাদা ফ্যাকাশে দেওয়াল, রক্ষণাবেক্ষণহীন, অপরিচ্ছন্ন ঘরগুলিতে ঢুকলেই যেন অস্বস্তি হবে।

Advertisement

মূল ফটক দিয়ে ঢুকতেই সামনের একচিলতে ঘর ও এক ফালি বারান্দা। ঘরের এক পাশে দু’টি পাত্রে শুকনো মুড়ি রাখা। এক দিকে মেঝেতে পড়ে কাগজ কাটার ছুরি, ভিতরের ঘরে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য ফাইল এবং নথিপত্র। রান্নাঘরের অবস্থাও তথৈবচ। অভেনে একটি ফাঁকা স্টিলের হাড়ি ও বাটি বসানো। বাটিতে অল্প জলও রাখা।

আরও পড়ুন: দীপিকাদের ‘মুন্ডু কাটলে ১০ কোটি’, ঘোষণা বিজেপি নেতার

Advertisement

সল্টলেকের করুণাময়ীতে এমনই একটি ঘরে গত তিন দিন ধরে তাঁর মায়ের দেহ পড়েছিল বলে দাবি করেছেন মৃতার ছেলে ইন্দ্রজিৎ মুখোপাধ্যায়। তাঁর এই দাবির পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেরই মনে পড়ে গিয়েছে কলকাতার রবিনসন স্ট্রিট-কাণ্ডের কথা।

রবিবার স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে ওই ফ্ল্যাট থেকে ইন্দ্রজিতের মা রঞ্জনা মুখোপাধ্যায়ের (৬৫) দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বিধাননগর মহকুমা হাসাপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ইন্দ্রজিতের দাবি, তিনি একটি স্থানীয় সংবাদপত্রে কাজ করেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ২০১৬ সালে জয়ন্তবাবুর মৃত্যুর পরেও তাঁর দেহ এক দিন ঘরে পড়েছিল। সে সময়েও পুলিশ এসে ওই ফ্ল্যাট থেকে দেহ উদ্ধার করে। এক বছর পরে জয়ন্তবাবুর স্ত্রীর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটলো।

ইন্দ্রজিতের দাবি, তাঁর মা মারা গিয়েছেন শুক্রবার। ‘‘বৃহস্পতিবার রাতে শুকনো মুড়ি খেয়েছিলেন। কিন্তু শুক্রবার থেকে কোনও সাড়া মিলছিল না,’’ বলেন ইন্দ্রজিৎ। ২০১৫-র জুনে ৩, রবিনসন স্ট্রিটের বাড়িতে এমনই অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে দিদি দেবযানীর কঙ্কাল আগলে বসে থাকতে দেখা যায় ভাই পার্থ দে-কে।

কিন্তু মায়ের ওই অবস্থার কথা কাউকে বলেননি কেন ইন্দ্রজিৎ? ছেলের দাবি, পড়শি থেকে পুলিশ, সকলকেই তিনি জানিয়েছেন মায়ের মৃত্যুর কথা। এমনকী, খবর দিয়েছেন নিজের আত্মীয়দেরও। কিন্তু কেউ কোনও সহযোগিতা করেননি বলে তাঁর অভিযোগ। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রতিবেশীরা। পুলিশ জানাচ্ছে, রবিবার সকালের আগে কিছুই জানত না তারাও।

পড়শিদের দাবি, মুখোপাধ্যায় পরিবার এলাকায় কারও সঙ্গে মেলামেশা করে না। তাঁরা জানান, গত কয়েক দিন ইন্দ্রজিৎ এবং তাঁর মাকে বিশেষ দেখতেও পাওয়া যায়নি। ওই ফ্ল্যাট থেকে শুধু অল্পবিস্তর কটূ গন্ধ পেয়েছেন কেউ কেউ। ইন্দ্রজিৎদের পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা অর্চনা ঘোষ এ দিন বলেন, ‘‘আজ সকালে ইন্দ্রজিৎ সাফাইকর্মীর খোঁজ করছিলেন, তখনই আমাদের সন্দেহ হয়।’’ এর পরেই ইন্দ্রজিৎ ওই আবাসনের এক বাসিন্দাকে মায়ের মৃত্যুর খবর দেন। খবর যায় পুলিশেও।

কিন্তু তিন দিন ধরে মায়ের দেহ কেন ঘরে রেখে দিলেন তিনি? ইন্দ্রজিতের দাবি, তিনি সাংবাদিক। সংবাদ সংগ্রহের কাজে তাঁকে বাইরে বেরোতে হত। তাঁর দাবি, ‘‘মায়ের জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। আমার আর কিছুই করার ছিল না।’’ অক্টোবর মাসে প্রথমে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতাল ও পরে এনআরএসে ভর্তি করা হয় রঞ্জনাদেবীকে। স্নায়ু রোগের ওষুধও চলছিল তাঁর।

স্থানীয়দের একাংশের দাবি, ইন্দ্রজিতের কথাবার্তা ও আচরণ অসংলগ্ন। পুলিশের কাছে তিনি অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁর মায়ের মৃত্যু শনিবার রাতে হয়েছে। তিনিই আবার সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, শুক্রবার মায়ের মৃত্যুর পরে সংবাদ সংগ্রহের কাজেও বেরিয়েছিলেন তিনি। ফলে ঠিক কবে রঞ্জনাদেবীর মৃত্যু হয় এবং মৃত্যুর কারণ কী, তা ময়না-তদন্তের পরেই নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement