মৃতা টুম্পা রজক।
ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে রোগী-মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে রীতিমতো তাণ্ডব চলল উত্তর কলকাতার মারোয়াড়ি রিলিফ সোসাইটি হাসপাতালে। রবিবার সকালে ওই ঘটনার পরে উত্তেজিত জনতা হাসপাতালের তিনতলায় আইসিইউ-এ ঢুকে ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে লালবাজার ও পোস্তা থানা থেকে বিশাল বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শোভাবাজারের বাসিন্দা টুম্পা রজক (৩৬) গত বুধবার থেকে জ্বরে ভুগছিলেন। তাঁর পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার কলকাতা পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁর রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। পুরসভার রিপোর্টে ডেঙ্গি ধরা না পড়লেও জ্বর কমেনি টুম্পার। শুক্রবার সকালে স্থানীয় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ফের তাঁর রক্ত পরীক্ষা হয়। সেখানকার রিপোর্টে ডেঙ্গি ধরা পড়ায় ওই রাতেই টুম্পাকে মারোয়াড়ি রিলিফ সোসাইটি হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়।
রোগীর ভাই বরুণ দাসের অভিযোগ, ‘‘শনিবার সকালে দিদির প্লেটলেট ছিল ৪০ হাজার। বিকেলে তা নেমে আসে ২৪ হাজারে। রাতে দিদির অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় রবিবার অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করি আমরা। কিন্তু এ দিন সকালে অ্যাম্বুল্যান্স আসার প্রায় দে়ড় ঘণ্টা আগেই দিদির অক্সিজেন মাস্ক খুল দেওয়া হয়। স্যালাইনও বন্ধ করে দেওয়া হয়।’’ মৃতার স্বামী সঞ্জয় রজকও অভিযোগ করেছেন, ‘‘কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের গাফিলতিতেই স্ত্রীকে অকালে হারাতে হল। তাঁদের কঠোর শাস্তি চাইছি।’’ যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করে হাসপাতালের ম্যানেজার প্রদীপ শর্মা বলেন, ‘‘রোগীর আত্মীয়েরা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ করছেন। হাসপাতালের তরফে পরিষেবার কোনও ত্রুটি ছিল না। রবিবার সকালে রোগীর অক্সিজেন মাস্ক খুলে দেওয়ার অভিযোগও ঠিক নয়।’’
এ দিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ হাসপাতালের তরফে চিকিৎসকেরা টুম্পাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ছুটে আসেন মৃতের আত্মীয়েরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৩০-৪০ জন হাসপাতালের তিনতলায় আইসিইউ-তে ঢুকে প়ড়েন। চেয়ার উল্টে ফেলে দেন। আইসিইউ-এর দরজার কাচও ভেঙে ফেলা হয়। আতঙ্ক দেখা দেয় সেখানে ভর্তি অন্য রোগীদের মধ্যে। পরিস্থিতি সামলাতে হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষী ও ডাক্তারেরা ছুটে এলে তাঁদের সঙ্গেও রোগীর পরিজনেদের ধস্তাধস্তি হয় বলে অভিযোগ। এর পরেই হাসপাতালের তরফে পোস্তা থানায় খবর দেওয়া হয়।
ক্ষোভ: রোগী-মৃত্যু ঘিরে ভাঙচুর হাসপাতালে। রবিবার।
কলকাতা পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের রাধাকান্ত দেব লেনের বাসিন্দা সঞ্জয় রজকের সঙ্গে ২০০৬ সালে বিয়ে হয়েছিল টুম্পার। তাঁদের দুই শিশুকন্যা রয়েছে। টুম্পার এক আত্মীয়ের অভিযোগ, ‘‘ঠান্ডা পড়ে গেলেও ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে এল না। রাধাকান্ত দেব লেনের আরও কয়েক জন বাসিন্দা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। স্থানীয় কাউন্সিলর আগে থেকে আরও সতর্ক হলে এমন ঘটনা হয়তো এ়ড়ানো যেত।’’ এ প্রসঙ্গে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর পার্থ মিত্র বলেন, ‘‘রাজ্যের সব জায়গায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। কিন্তু আমার ওয়ার্ডে মশা দমনের জন্য নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিষেধ সত্ত্বেও শুধু মানুষকে সন্তুষ্ট করতে ধোঁয়া দেওয়া হয় এলাকায়। তা সত্ত্বেও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’’
—নিজস্ব চিত্র